শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দেরিতে হলেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে উপকরণ তৈরির কাজ শুরু করেছে দেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলো। চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহারের জন্য পারসোনাল প্রটেকশন ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই) বা ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ হিসেবে পোশাক তৈরি করছে তুসুকা গ্রুপ। তবে তাদের উৎপাদিত পিপিই এখনো স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন পায়নি।

এছাড়া স্বচ্ছ শিট, ফোম ও রাবার সংগ্রহ করে ফেস শেল্ড বা মুখ ঢাল এবং বিভিন্ন গার্মেন্টস কারখানায় ডাইংয়ে ব্যবহৃত রাসায়নিকের মজুদ ব্যবহার করে জীবাণুনাশক উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে কারখানাগুলো।

তুসুকা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও পোশাক মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি আরশাদ জামাল দীপু বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ১০০০ পিস পিপিই উৎপাদনের কাজ শুরু করেছি। আমাদের উৎপাদিত পিপিই সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া স্পেসিফিকেশনের কাছাকাছি মানের। তবে আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছি না।

তিনি বলেন, শুরুতে আমরা এক হাজার পিস পিপিই দ্রুত সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করব। স্বাস্থ্য বিভাগ সেগুলো চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে বিতরণ করবে। আমরা আপাতত ঢাকা শহরের চিকিৎসকদের চাহিদা মেটাতে চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, পিপিই তৈরির উপকরণ সংগ্রহে কাজ করছি আমরা। অন্যান্য কারখানাকে সঙ্গে নিয়ে পাঁচ হাজার পিপিই তৈরি করে স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে সারা দেশের চিকিৎসকের মধ্যে সরবরাহের লক্ষ্য রয়েছে আমাদের। আর পর্যাপ্ত উপকরণ সংগ্রহ করা গেলে যতদিন করোনাভাইরাসের ঝুঁকি রয়েছে, ততদিন আমরা উৎপাদন অব্যাহত রাখব।

আরশাদ জামাল বলেন, পিপিই উপকরণের সংকট রয়েছে। সাধারণ পোশাকে আমরা যে ধরনের জিপার ব্যবহার করি, সে ধরনের জিপার দিয়ে পিপিই উৎপাদন সম্ভব নয়। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি উপকরণ সংগ্রহ করতে।

‘দেশের ডাইং কারখানাগুলোতে বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক ব্যবহার হয়। অনেক কারখানায় রাসায়নিকের মজুদ রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি এসব কারখানা থেকে রাসায়নিক নিয়ে জীবাণুনাশক উৎপাদন করতে। এক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জীবাণুনাশক উৎপাদনের যে ফর্মুলা দিয়েছে, আমরা তা অনুসরণ করছি’ যোগ করেন তিনি।

বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, তুসুকা গ্রুপের উৎপাদিত পিপিই স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন পায়নি। আর অনুমোদন না পেলেও আমরা উৎপাদন অব্যাহত রাখব। মুখ ঢাকাসহ সাধারণ মানের রেইনকোট ব্যবহারের মাধ্যমেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমানো সম্ভব। তিনি বলেন, আমরা এটা শুরুতে স্বাস্থ্য বিভাগকে দেব। তাদের কাছে হস্তান্তরের আগে আমরা কীভাবে জানব যে, এটা ডাক্তারদের জন্য যথেষ্ট কি-না? আমরা আমাদের দিক থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

‘আমার মেয়ের জামাই ইংল্যান্ডে ডাক্তার। তিনি মাস্ক ও গ্লাভস কিছুই ব্যবহার করছেন না। তারা কোনো কিছু ছাড়াই ইংল্যান্ডে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। আর আমরা এখানে উৎপাদন করার চেষ্টা করছি’ যোগ করেন তিনি।

রুবানা হক বলেন, আমরা ফেস শেল্ড তৈরি করছি। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফেস শেল্ড তৈরির জন্য স্বচ্ছ শিট, ফোম ও ইলাস্টিক কিনছি। চীন থেকে যে ধরনের ফেস শেল্ড আমদানি হয়, দেশে উৎপাদিত পণ্যের মান তেমনই হবে।

দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার খবরে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের তীব্র সংকট দেখা দিলে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তৈরি পোশাক শিল্প মালিক ও ওষুধ শিল্প মালিকদের সমালোচনা করেন। আসাদ রহমান নামে একজন তার ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গার্মেন্টস শিল্পের দেশ অথচ পিপিইর সংকট। বিশ্বের ৭৮টি দেশে ওষুধ রপ্তানিকারক দেশ অথচ স্যানিটাইজার নাই!’

ইকরাম হোসেন নামে একজন নিজের ফেইসবুকে অন্যের স্ট্যাটাস কপি করে দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, ‘দেশের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিকেরা প্রয়োজনীয় কাঠামো, লোকবল ও উপাদান থাকা সত্ত্বেও পারল না প্রয়োজনীয় মাস্ক কিংবা গ্লাভস উৎপাদন করে জনসেবায় এগিয়ে আসতে। বরং করোনার ফলে তাদের মুনাফা অর্জনের কী কী ক্ষতি হতে পারে এবং সরকারের কাছ থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে কী কী সুবিধা নেওয়া যায় তার আলোচনা বৈঠক চলছে। ব্যবসায়ী বুর্জোয়াদের আজব দেশপ্রেম দেখে তাজ্জব বনে গেলাম।’ সুত্র: দেশ প্রতিক্ষণ