শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা:  করোনা আতঙ্কে বিশ্ব পুঁজিবাজারে চলছে রেকর্ড উত্থান-পতন। এ সময়ে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারেও টানা দরপতনের রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্কে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি রুখতে এক ‘অদ্ভুত আদেশ’ জারি করেছে দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

যা প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শেয়ার ও ইউনিটের দর কমার সর্বনিম্ন সীমা বেধে দিয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সুরক্ষা পাওয়ার সাথে সাথে বাজার অযৌক্তিক পতনের রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে।

তারপরেও কতিপয় কিছু লোক বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত এই সীমার সমালোচনা করছে। যার পেছনে দূরভিসন্ধি থাকতে পারে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। এরা

পুঁজিবাজারকে দরপতন ঘটিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চাচ্ছে। এদের চিহ্রিত করে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী। তবে দেশের সেরা অর্থনীতিবীদ ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা বর্তমান পরিস্থিতিতে দর কমার নতুন সীমাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

সুত্রে জানায়, সর্বশেষ পাঁচ কার্যদিবসের গড়মূল্য নিয়ে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে এসইসি। এতে লেনদেন ছাড়াই বেশিরভাগ সিকিউরিটিজের দর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেড়ে গেছে।

গত বৃহস্পতিবার তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের যে সর্বনিম্ন মূল্য (ফ্লোর প্রাইস) নির্ধারণ করা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সেগুলোর দর তার নিচে নামতে পারবে না। তবে সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ সীমা অনুযায়ী তা বাড়তে পারবে। সিকিউরিটিজ আইনের বিশেষ ক্ষমতাবলে এ আদেশ জারি করে বিএসইসি।

সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বাজারের পতন বন্ধে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা নতুন একটি ফরমুলা জারি করেছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নেওয়া উদ্যোগ ইতোমধ্যে কাজ করতে শুরু করেছে। নতুন ফরমুলা অনুযায়ী, এখন থেকে শেয়ারের দাম নির্দিষ্ট একটি সীমার নিচে নামতে পারবে না। এ কারণে সূচকও নির্ধারিত একটি সীমার নিচে নামার পথ বন্ধ হয়ে গেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা। আগামী দিনগুলোতে করোনায় কাবু হলেও ঘুরে দাঁড়াবে পুঁজিবাজার এবং বড় দরপতন হওয়ার সম্ভাবনা আর নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, এ নিয়মের ফলে গত ১১ থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত কোনো শেয়ারের দর ক্লোজিং দরের যে গড় দর হয়, তার থেকে কমমূল্যে কেনাবেচা হতে পারবে না। এমনকি প্রধান সূচক বুধবারের ক্লোজিং অবস্থান ৩৬০৩ পয়েন্টের তুলনায় নামা তো দূরের কথা, ওই পর্যায়েই যেতে পারবে না।

এএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব এইচ মজুমদার বলেন, পুঁজিবাজারের ইতিহাসে প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ বিনিয়োগকারীদের বড় ধরনের লোকসানের হাত থেকে বাঁচালো। শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বেঁধে দেওয়ার ফলে এখন আর কেউ শেয়ার কিনে লোকসানের সম্ভাবনা নেই। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা ফের বাজারমুখী হতে উৎসাহিত হবে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক রকিবুর রহমান দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, ‘আমি মনে করি, গুজব আর করোনা ভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত এই পুঁজিবাজারকে রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ বড় ভূমিকা রেখেছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অর্থমন্ত্রী যে ফরমুলা দিয়েছেন, তাতে এই পুঁজিবাজার আর আগের মতো পড়বে না। তাতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর যুগান্তকারী এই সিদ্ধান্ত তৃতীয় বিশ্বের শেয়ার বাজারের ইতিহাসে উদাহরণ হয়ে থাকবে বলেও তিনি মনে করেন।

ডিএসইর সাবেক সভাপতি আরও বলেন, ‘পাঁচ দিনের গড় দামের নিচে কোনও শেয়ার লেনদেন হবে না। বিগত পাঁচ দিনের গড় দামের চেয়ে নিচে নামতে গেলেই সার্কিট ব্রেকার চালু হয়ে ওই শেয়ারের লেনদেন বন্ধ হয়ে যাবে।’

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড পাবলিক পলিসি বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, বিএসইসির এ নির্দেশনা বর্তমানে যে প্যানিক চলছিল, তা হয়তো একটু বিলম্বিত করবে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে এ জাতীয় সিদ্ধান্তের বিকল্প ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর এই সাহসী উদ্যোগ বিনিয়োগকারীরা সারা জীবন মনে রাখবে।

পুঁজিবাজারে এ অদ্ভুত সমাধান বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, দরপতন ঠেকাতে বিএসইসির এ সিদ্ধান্ত ঠিকই আছে। গত কয়েক দিনে যেভাবে দরপতন হচ্ছিল, তা যৌক্তিক ছিল না। নানা কারণে বিনিয়োগকারীরা ভীত হয়ে পড়েছিল।

এখন যেহেতু শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বেঁধে দেওয়া হয়েছে, এর ফলে ধীরে ধীরে ভীতি কাটবে। কারণ তারা এখন জানবেন, শেয়ার কিনলে সর্বোচ্চ কতটা লোকসান হতে পারে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর এই সাহসী উদ্যোগ পুঁজিবাজারের ইতিহাসে বিরল বলে মনে করছেন তিনি।

এ বিষয়ে বিএসইসির কমিশনার প্রফেসর হেলাল উদ্দিন নিজামী বলেন, করোনা আতঙ্কে পুঁজিবাজারে সৃষ্ট টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীরা বড় অঙ্কের লোকসানে পড়েছেন। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণের এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এ সিদ্ধান্তের ফলে আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা ফিরে আসবে বলে তিনি করেন।