শেয়ারবার্তা ২৪ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি বিকন ফার্মার শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ তুলছেন বিনিয়োগকারীরা। গত ছয় মাসের ব্যবধানে বিকন ফার্মার শেয়ারের দর দ্বিগুন বাড়ছে। তবে শেয়ার দর বাড়ার কারন জানে না কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া কোম্পানিটির ইপিএস ও ডিভিডেন্ডে কোন চমক না থাকলেও কারসাজির চক্রের কারনে শেয়ারের দর দ্বিগুন হয়েছে বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ তুলছেন। তারা বলেন, অভিযুক্ত সিন্ডিকেটের কাছেই এখনো জিম্মি পুঁজিবাজার।

চিহ্নিত এই কারসাজি সিন্ডিকেট কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছে না। দিনের পর দিন একই ধরনের শেয়ার কারসাজি করে চলছে। সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কোম্পানির শেয়ারে অস্বাভাবিক দর বাড়ার পেছনে কারণ জানতে চাইলে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানায় দর বাড়ার মত কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য তাদের কাছে নেই।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক দর বাড়ার পেছনে কারণ জানতে চেয়ে ডিএসই গত ২০ নভেম্বর নোটিস পাঠায়। এর জবাবে কোম্পানিটি জানায়, কোনো রকম অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ার দর বাড়ছে।

বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ডিএসইতে গত ২৪ অক্টোবর কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ২৫ টাকা ১০ পয়সা। ১১ ডিসেম্বর তা ৩৬ টাকা ১০ পয়সায় উন্নীত হয়। আর শেয়ারটির এই দর বাড়াকে অস্বাভাবিক বলে মনে করছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে দেশে উৎপাদিত ওষুধ ১০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। উৎপাদিত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে ওষুধ উৎপাদনকারী দেশি কোম্পানিগুলোর বিক্রি থেকে আয় বেড়েছে। এতে ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিকন ফার্মার মুনাফর কিছুা বাড়ছে। তবে মুনাফা বাড়লেও কোম্পানির ডিভিডেন্ডের ক্ষেত্রে গত বছরের তুলনায় কিছুা কমেছে।

বিকন ফার্মা কোম্পানিটি ২০১৮ সালে ৬ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিলেও ২০১৯ সালে এসে কোম্পানিটি ৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড দেয়। এছাড়া কোম্পানিটির চলতি ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে মুনাফা সাড়ে ১২ শতাংশ বাড়ছে। তবে বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) লোকসান ছিল।

কোম্পানিটির ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই ১৮- মার্চ ১৯) নিট মুনাফা হয়েছিল ১৩ কোটি ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা বা শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) ০.৫৬ টাকা। বছর শেষে এই মুনাফার পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৭৮ লাখ ১০ হাজার টাকা বা ইপিএস ০.৫১ টাকায়। এ হিসাবে কোম্পানিটির শেষ প্রান্তিকে লোকসান হয়েছে ১ কোটি ২৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা বা শেয়ারপ্রতি ০.০৫ টাকা।

বিকন ফার্মার ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অর্জিত ১১ কোটি ৭৮ লাখ ১০ হাজার টাকা মুনাফার মধ্যে ৫ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি ০.৫০ টাকা হিসাবে মোট ১১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে বিতরন করা হবে। অর্থাৎ মুনাফার ৯৮ শতাংশ বিতরন করা হবে। এক্ষেত্রে মুনাফার বাকি ২৩ লাখ ১০ হাজার টাকা বা ২ শতাংশ কোম্পানির রিজার্ভে যোগ হবে। ২৩১ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের বিকন ফার্মায় ৬৯ কোটি ১৯ লাখ টাকার রিজার্ভ রয়েছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, কোম্পানিটি ধারাবাহিক মুনাফা বাড়ছে। গত পাঁচ বছরে ধরে কোম্পানিটির মুনাফা ধারাবাহিক বাড়লেও সে হারে ডিভিডেন্ড বাড়েনি। এর মধ্যে কোম্পানিটি ২০১৫ সালে মুনাফা করে ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৬ হাজার টাকা। ঐ সময় কোম্পানির ইপিএস ছিল ১৭ পয়সা এবং কোম্পানিটির সম্পদ মূল্য ছিল ১২.৪১ পয়সা। কোম্পানিটি ২০১৬ সালে মুনাফা করে ৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা।

ঐ সময় কোম্পানির ইপিএস ছিল ২৭ পয়সা এবং সম্পদমূল্য ১৩ টাকা। কোম্পানিটি ২০১৭ সালে মুনাফা করে ১০ কোটি ৩৭ লাখ ৩ হাজার টাকা। ঐ সময় কোম্পানির ইপিএস ছিল ৪৫ পয়সা এবং কোম্পানিটির সম্পদ মূল্য ছিল ১২.৯৫ পয়সা। কোম্পানিটি ২০১৮ সালে মুনাফা করে ১২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। ঐ সময় কোম্পানির ইপিএস ছিল ৫৫ পয়সা এবং সম্পদমূল্য ১২.৯৯ টাকা।