শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: চীনা কনসোর্টিয়ামের কাছে কৌশলগত শেয়ার বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী নন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ৩৯ ব্রোকার। শর্তসাপেক্ষে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে সরকার যে কর রেয়াতি সুবিধা দিয়েছে, তা তারা নেননি। ফলে চীনাদের কাছে ডিএসইর শেয়ার বিক্রি থেকে যে অর্থ তারা পেয়েছেন, তা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হয়নি।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকি হতে পারে বলে মনে করছেন তারা। ৩৯ ব্রোকারেজ হাউজ রেয়াতি সুবিধা না নেওয়ায় ১৪০ কোটি টাকার বিনিয়োগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার। গত ৮ নভেম্বর পর্যন্ত ১৮৬ ব্রোকার তাদের প্রাপ্য অর্থের চেক নিয়েছেন। এর বাইরে ৬৪ ব্রোকার রয়েছেন, যারা কর রেয়াতের শর্তে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবেন কিনা- তা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন। তারা যদি রেয়াতি সুবিধা না নেন, তাহলে চীনাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থের বড় অংশই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হবে না।

ডিএসইর শেয়ার তালিকাভুক্ত কোম্পানি না হওয়ায় শেয়ার বিক্রি থেকে প্রাপ্ত মূলধনী মুনাফার উপর ১৫ শতাংশ কর দেওয়ার বিধান রয়েছে। বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের শর্তে মূলধনী মুনাফায় ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ কর নেওয়ার দাবি জানায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ)। চলতি বছর সূচকে নিম্নমুখি ধারার প্রেক্ষিতে চীনাদের কাছে শেয়ার বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ ৩ বছর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ রাখার শর্তে ডিবিএর প্রস্তাবে রাজি হয় সরকার।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবি আর) ডিএসইর শেয়ার বিক্রিতে মূলধনী মুনাফায় শর্তসাপেক্ষে কর ছাড়ের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির পর গত ৩০ অক্টোবর ব্রোকারদের মধ্যে অর্থ বিতরণ শুরু হয়। এরপর ৮ নভেম্বর পর্যন্ত ডিএসইর মোট ২৫০ শেয়ারহোল্ডারের মধ্যে ১৮৬ সদস্য চেক নিয়েছেন। এরমধ্যে ১১৩ সদস্য পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের শর্তে ৫ শতাংশ কর দিয়ে চেক নিয়েছেন। আর ৩৯ সদস্য বিনিয়োগের শর্তে রেয়াতি সুবিধা না নিয়ে ১৫ শতাংশ কর দিয়েছেন। এছাড়া ৩৪ প্রতিষ্ঠানের কোনো মূলধনী মুনাফা না হওয়ায় তাদের কর দিতে হয়নি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় ডিবিএর প্রস্তাবে আমরা রাজি হই। এখন কেউ কর রেয়াতের সুবিধা না নিলে হতাশা প্রকাশ করা ছাড়া কিছু করার নেই।

একটি ব্রোকারেজ হাউজের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাজারের এখন যে পরিস্থিতি, তাতে বিনিয়োগ করলে বড় অংকের লোকসান হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এজন্য এ অর্থ অন্যত্র বিনিয়োগের চিন্তা করছি। অপর এক ব্রোকার বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। তাই এ মুহূর্তে বিনিয়োগ করে ঝুঁকি নিতে চাই না।

জানা যায়, ডিএসই চীনের সাংহাই ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত জোটের কাছে ২৫ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে ৯৬২ কোটি টাকা পায়। প্রতিটি শেয়ার বিক্রি হয় ২১ টাকায়। স্ট্যাম্প ডিউটি বাবদ ১৫ কোটি টাকা সরকারকে দেওয়ার পর অবশিষ্ট ৯৪৭ কোটি টাকা ২৫০ শেয়ারহোল্ডার পাবেন।

এ হিসাবে ডিএসইর প্রত্যেক শেয়ারহোল্ডারের ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা পাওয়ার কথা। এরমধ্যে যারা পুঁজিবাজারে অন্তত তিন বছর বিনিয়োগ ধরে রাখবেন, তাদের মূলধনী মুনাফার উপর ৫ শতাংশ কর দিলেই হবে। আর যারা বিনিয়োগের শর্তে রাজি নন, তাদের দিতে হবে ১৫ শতাংশ করে। আর যাদের মূলধনী মুনাফা হয়নি অর্থাৎ চীনাদের কাছে যে দরে শেয়ার বিক্রি হয়েছে, তারচেয়ে বেশি দরে ব্রোকারেজ হাউজ কিনেছেন, তাদের কোনো কর দিতে হবে না।

ডিবিএর সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক চীনাদের কাছে শেয়ার বিক্রির প্রাপ্য অর্থের বিষয়ে বলেন, কোনো সদস্য কর রেয়াতের সুবিধা নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে কিনা, সেটা একান্তই তার ব্যাপার। এসময় কর রেয়াতি সুবিধা দিয়ে পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগ আনতে সহায়তা করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

৮ নভেম্বর পর্যন্ত ৫ শতাংশ কর দিয়ে ১১৩ ব্রোকারের পুঁজিবাজারে ৪০৬ কোটি টাকা বিনিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। কর রেয়াতি সুবিধা নেওয়া প্রতিষ্ঠানকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে। এছাড়া মূলধনী মুনাফা হয়নি, এমন ৩৪ ব্রোকারের প্রায় সবকটির মালিকানায় রয়েছে ব্যাংক, বীমা ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যাদের অধিকাংশই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে।

ডিএসইর কৌশলগত শেয়ার ক্রয় করতে গত ৬ ফেব্রুয়ারী এক উন্মুক্ত দরপত্রে অংশ নেয় ভারত ও চীনা জোট। দরপত্রে ভারতীয় জোট ডিএসইর প্রতি শেয়ার ১৫ টাকা ও চীনা জোট ২২ টাকায় প্রস্তাব করে। ডিএসই চীনা জোটের প্রস্তাব গ্রহণ করে তা অনুমোদনের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) পাঠায়।

শুরুতে চীনা জোটের প্রস্তাবে বিএসইসির আপত্তি থাকলেও টানাপোড়েনের পর প্রস্তাব সংশোধন সাপেক্ষে তা অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের পর ডিএসইর শেয়ার বিক্রির অর্থ দেশে আসে, যা কর রেয়াতি সুবিধার পর শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বণ্টন করা হচ্ছে। শেয়ার কেনাবেচার ওই চুক্তির আওতায় ডিএসইতে ৯৬২ কোটি টাকা বিনিয়োগ ছাড়াও বিনামূল্যে ৩৭ দশমিক ১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রযুক্তিগত সহায়তা দিবে চীনা জোট।