pujibazar news

Abu Ahmed

শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারের উত্তোরণে ঘটাতো হলো দুটি বিষয়ের উপর জোর দিতে হবে। এর প্রথমটি হচ্ছে বাজারে ভালো শেয়ারের যোগান বাড়াতে হবে। আর দ্বিতীয় হলো, কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বোনাস শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে লক-ইন বা নির্দিষ্ট সময় বেধে দিতে হবে।

এমনটাই মনে করেন অর্থনীতিবিদ, শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ। পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি নিয়ে জগোনিউজের সঙ্গে আলাপে তিনি নিজের এ মত তুলে ধরেন।  আবু আহমেদ বলেন, বোনাস শেয়ার ও প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে শত শত কোটি টাকা কৌশলে বেরিয়ে যাচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও অনেকটা নিষ্ক্রিয় রয়েছেন।

ব্যাংকগুলোও তেমন বিনিয়োগ করছে না। ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাব আর তারল্য সঙ্কটে দেশের পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিন ধরে চলছে দরপতন। বাজার উন্নয়নে সংশ্লিষ্টদের মাঝে-মধ্যে দৌড়-ঝাঁপের পর ১০ থেকে ২০ পয়েন্ট সূচক বাড়লেও আবারও দরপতন হচ্ছে।

এই শেয়ারবাজার বিশ্লেষক বলেন, এ দুরাবস্থা থেকে উত্তোরণে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে। একই সঙ্গে বাজারে ভালো শেয়ারের যোগান বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে দেশে ব্যবসা করছে এমন বহুজাতিক কোম্পানি, যেমন: ইউনিলিভার, নেসলে, বাংলালিংকসহ অন্যান্য কোম্পানিকে দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার পাশাপাশি সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

আবু আহমেদ বলেন, দেশের শেয়ারবাজারে বর্তমানে তারল্য সঙ্কট রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি তাদের যেসব দায়িত্ব রয়েছে তা সঠিকভাবে পালন করছে না। এছাড়াও কোম্পানি ঘোষিত বোনাস শেয়ার উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা বিক্রি করে বাজার থেকে শত শত কোটি টাকা নিচ্ছেন। সেটা  তারা বাজারে পুণরায় বিনিয়োগ করছেন না। যার কারণে বাজারে অর্থ সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ধারাবাহিকভাবে লেনদেন কমছে।

উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের জন্য লক-ইন সময় বেধে দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ লক-ইন সময় করতে হবে বোনাস ইস্যু করার প্রথম দুই বছর পর্যন্ত। যাতে করে উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা বোনাস শেয়ার বিক্রির অর্থ তুলে নিতে না পারেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে নতুন কোম্পানির প্রসপেক্টাস প্রকাশনার তারিখ থেকে পরবর্তী দুই বছর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের জন্য লক-ইন দেয়া আছে। প্রসপেক্টাস প্রকাশনার তারিখ না ধরে কোম্পানির বোনাস ইস্যু করার প্রথম দুই/তিন বছর পর্যন্ত লক-ইন দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

আবু আহমেদ আরো বলেন, ভালো কোম্পানি আনার জন্য আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে আরো বেশি যাচাই-বাছাই করতে হবে। একই সঙ্গে প্রিমিয়াম নির্ধারণ কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থার বিবেচনা করে দেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

মার্জার (একীভূত) সম্পর্কে তিনি বলেন, একই ধরনের পণ্য উৎপাদনে আছে এমন দুটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি, যাদের শেয়ার আছে বাজারে, তাদের মধ্যেই কেবল মার্জারের অনুমোদন বিবেচনা করা প্রয়োজন।

একই সঙ্গে যে দুই কোম্পানি মার্জড হবে সেই কোম্পানির লাভ-লোকসান কত? লাভ হলে ট্যাক্স দিয়েছে কি না, তার দালিলিক প্রমাণ দেখা এবং দুই কোম্পানির সম্পদ মূল্য নতুন করে যাচাই করে রেগুলেটরের অনুমোদন দেয়া উচিত।

এক্সপোজার বিষয়ে তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয় সীমা (এক্সপোজার লিমিট) ইস্যুতে দীর্ঘ দিন বাজারে মন্দা অবস্থা বিরাজ করে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক শেয়ার না বিক্রি করে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয় করার নীতি সহায়তা দিয়েছে। তারপরও বাজারে লেনদেনে পুরোপুরি গতি ফিরে আসেনি। এতে বোঝা যাচ্ছে, এখনও বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হয়নি। আর শেয়ারবাজারে যতক্ষণ টার্নওভার না বাড়ছে, ততক্ষণ বাজারের উন্নতি হচ্ছে বলা যাবে না।