ataurপুঁজিবাজারে আসছে ডায়িং ব্যবসায় রপ্তানিমুখী এক উজ্বল দৃষ্টান্ত শেফার্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড। আইপি’র মাধ্যমে কোম্পানিটি বাজার থেকে ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। শেফার্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ সুতা আমদানি করে সেগুলোকে ডায়িং করে থাকে। মূলত সোয়েটারের সুতা সরবরাহ করে থাকে। আর এই সোয়েটারের সুতা তৈরিতে পাইওনিয়র হচ্ছে শেফার্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড।

রোববার ৮ জানুয়ারি থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রাথমিক গণ প্রস্তাব (আইপিও) আবেদনের তারিখ নির্ধারণ করেছে বস্ত্রখাতের এ কোম্পানিটি। সোয়েটারের সুতা তৈরিতে শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখা শেফার্ড ইন্ডাষ্ট্রিজে রয়েছে ফরেন ল্যাব ও অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান। যে কারণে ডায়িং ব্যবসায় অন্যান্য কোম্পানি ঢিমেতালে চললেও শেফার্ডে সারা বছর ক্রেতাদের অর্ডার থাকে।

ফলশ্রুতিতে কোম্পানির মুনাফা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারীরা নি:সন্দেহে আস্থা রাখতে পারেন। কোম্পানির বর্তমান অবস্থা আর ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমের  সঙ্গে কথা বলেছেন চীফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) মো: আতাউর রহমান। আলোচনার চুম্বক অংশটুকু পাঠকদের উদ্দেশ্য তুলে ধরা হলো:

শেয়ারবার্তা: শেফার্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড বর্তমান অবস্থা কেমন?

আতাউর রহমান: সোয়েটারের সুতা তৈরিতে পাইওনিয়র হচ্ছে শেফার্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড। আর আমাদের ব্যবসায় হচ্ছে গার্মেন্টসকে ঘিরে। গার্মেন্টস যতদিন থাকবে ততদিন শেফার্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ থাকবে। আমাদের যে ক্যাপাসিটি রয়েছে, অর্ডার রয়েছে, অত্যাধুনিক বিদেশি ল্যাব ও বিদেশি অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান রয়েছে তাতে আগামী ২০ বছরেও আমাদের অসুবিধার মধ্যে পড়তে হবে না। প্রায় ৬০০ জন শ্রমিক ফ্যাক্টরীতে কাজ করে। এছাড়া ২৪ ঘন্টাই ফ্যাক্টরীতে কাজ চলমান।

শেয়ারবার্তা : আপনার কোম্পানিতে যারা বিনিয়োগ করবে, তাদেরকে আপনারা কিভাবে দেখবেন?

আতাউর রহমান: আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে । দেখেন কোম্পানিটি এতোদিন ছিল শেফার্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের। এখন এটি চলে যাবে শেয়ারহোল্ডারসহ বিনিয়োগকারীদের হাতে। এ জন্য আমাদের দায়িত্ব আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। সব সময় আমারা শেয়ারহোল্ডার ও বিনিয়োগকারীদের কথাটি মাথায় রেখে কাজ করবো। সব সময় তাদের স্বার্থের দিকটি আমাদের বিবেচনায় থাকবে।

শেয়ারবার্তা: পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলিত টাকা কিভাবে ব্যবহার করা হবে।

আতাউর রহমান: পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলিত টাকা দিয়ে চলতি মূলধন, আধুনিক মেশিনারিজ কেনা এবং মেয়াদী ঋণ পরিশোধ করা হবে। কারখানায় নতুন এবং আরও আধুনিক যন্ত্রপাতি যোগ হলে উৎপাদন ক্ষমতা আরও বাড়বে।

শেয়ারবার্তা: ক্রেতাদের চাহিদা মতো কী আপনারা পণ্য সরবরাহ করতে পারেন?

আতাউর রহমান: আমাদের পণ্যের অনেক চাহিদা। বর্তমানে এ চাহিদা অনুসারে পণ্য সরবরাহ করতে করতে পারি না। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত আমাদের অফ সিজন। তবে অফ সিজন হলেও কাজ বন্ধ নেই। কারণ আমাদের সারা বছরই অর্ডার থাকে।

শেয়ারবার্তা: প্রতিযোগিতামুলক বাজারে আপনাদের অবস্থা কোথায়?

আতাউর রহমান : সুতা আমদানি করে সেগুলোকে আমরা ডায়িং করে থাকি। মূলত সোয়েটারের সুতা সরবরাহ করি। আর এই সোয়েটারের সুতা তৈরিতে পাইওনিয়র হচ্ছে শেফার্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড। তাছাড়া দেশিয় কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে সুতা না নেয়ার কারণ হচ্ছে বাইরে কাঁচামালের দর কম। যে কারণে দেশিয় প্রতিষ্ঠান থেকে সুতা নেয়া যায় না।

শেয়ারবার্তা : আন্তজার্তিক বস্ত্রখাতের বাজারে বিভিন্ন দেশের তুলনায় আমাদের অবস্থান কোথায়?

আতাউর রহমান : এক কথায় আমাদের দেশের বস্ত্রখাতে এখন পূর্ণ যৌবন চলছে। একমাত্র চীন ছাড়া আর কেউই আমাদের সঙ্গে পেরে উঠবে না। চীন আমাদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বড় দেশ হওয়ার কারণে প্রতিযোগিতায় টিকে আছে। যদিও একসময় উচ্চ লেবার কস্টের কারণে চীন পিছিয়ে পড়বে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আগামী ২৫ বছরের আমাদের সঙ্গে কেউ প্রতিযোগিতায় পারবে না। আমেরিকা বলেন আর যে কেউ বলেন কেউ কিছু করতে পারবে না।

শেয়ারবার্তা  : কোম্পানির ব্যবসা পরিচালনায় নানা সময়ে নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। সেদিক দিয়ে শেফার্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের কি অবস্থা?

আতাউর রহমান : আমাদের ব্যবসায় হচ্ছে গার্মেন্টসকে ঘিরে। গার্মেন্টস যতদিন থাকবে ততদিন শেফার্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ থাকবে। আমাদের যে ক্যাপাসিটি রয়েছে, অর্ডার রয়েছে, অত্যাধুনিক বিদেশি ল্যাব ও বিদেশি অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান রয়েছে তাতে আগামী ২০ বছরেও আমাদের অসুবিধার মধ্যে পড়তে হবে না। প্রায় ৬০০ জন শ্রমিক ফ্যাক্টরীতে কাজ করে। এছাড়া ২৪ ঘন্টাই ফ্যাক্টরীতে কাজ চলমান।

শেয়ারবার্তা: বছরের কোন সময়ে আপনাদের অফ সিজন থাকে? অফ সিজনের ঘাটতি পূরণের জন্য আপনাদের পরিকল্পনা কি?

আতাউর রহমান: অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত আমাদের অফ সিজন। তবে অফ সিজন হলেও কাজ বন্ধ নেই। কারণ আমাদের সারা বছরই অর্ডার থাকে। এই সময়ে অফ সিজন থাকায় মুনাফা কমে যাবে এটা সত্যি।

তবে মুনাফা বৃদ্ধি করার জন্য আমরা নতুন প্ল্ন্টা স্থাপন করবো যার নাম হচ্ছে গার্মেন্টস ওয়াশ। এটার কাজ সারা বছরই থাকবে। এর থেকে যে পরিমাণ মুনাফা আসবে তা দিয়ে অফ সিজনের ঘাটতি পূরণ করা হবে। আইপিওর অর্থ দিয়ে এই প্লান্ট প্রতিস্থাপন করা হবে।

শেয়ারবার্তা : কোম্পানির ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছু বলুন।

আতাউর রহমান : কোম্পানির মিশন ও ভিশন সম্পর্কে বলার জন্য একটু পেছনের কোম্পানির ইতিহাস বলতে হবে। শেফার্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ ও শেফার্ড ইয়ার্ন এই দুটি কোম্পানি আলাদা ছিল। ২০০৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর হাইকোর্টের নির্দেশে এ দুটি কোম্পানি একীভূত হয়। ২০১৫ সালের ১ এপ্রিল যার কার্যক্রম শুরু হয়। আমাদের দক্ষ লোকবলের কারণে শেফার্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ এ জগতে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। আগামীতে যেন এ অবস্থা ধরে রেখে ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর লক্ষ্যে করণীয় সবকিছুই আমরা করতে চাই।

শেয়ারবোর্তা: শেফার্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের এ কোম্পানিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কি পরিমাণ আস্থা রাখতে পারে?

আতাউর রহমান : প্রথমেই বলতে চাই যারা শেয়ার কিনবেন তাদের কোম্পানির ভীত দেখা উচিত। কারা এর পেছনে কাজ করছে তাদের ইতিহাস দেখা উচিত। শেফার্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ বাজার থেকে ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। অন্যদিকে এ কোম্পানির পরিচালকদের ১০৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। শেফার্ডের নিজস্ব জায়গার ওপর কর্পোরেট অফিস।

যেহেতু কোম্পানির পরিচালকরা বিদেশি তাই তারা সবসময় চাইবে কোম্পানি থেকে ডিভিডেন্ডের মাধ্যমে ভালো মুনাফা নেয়ার জন্য। তাই বিনিয়োগকারীরাও এই মুনাফার ভাগিদার হবেন। কোম্পানির যে টেকনিশিয়ান রয়েছে, অত্যাধুনিক ল্যাব রয়েছে সেটা কারোর কাছেই নেই। অনেক ডায়িং কোম্পানির বন্ধ হয়ে গেছে,কিন্তু আমাদের দক্ষতার জন্য এগিয়ে রয়েছি।

কোম্পানিটি অভিজ্ঞ ম্যানেজমেন্ট দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের এই সেক্টরে রয়েছে ৫০ বছরের অভিজ্ঞতা। বিদেশি ল্যাব, টেকনিশিয়ান, ফরেন ল্যাব ম্যানেজমেন্ট রয়েছে। তাই শেফার্ড ইন্ডাষ্ট্রিজে নি:সন্দেহে বিনিয়োগকারীরা আস্থা রাখতে পারেন।

শেয়ারবার্তা: শেয়ারবার্তাকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আতাউর রহমান: আপনাকেও ধন্যবাদ।