প্রগতি লাইফের শেয়ারে বিনিয়োগ করে লোকসান ৩৭ কোটি

শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এ কি অবস্থা। শেয়ারে বিনিয়োগ করে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের লোকসান হয়েছে ৩৭ কোটি ৩৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। একই সঙ্গে এ লোকসান রাজস্ব হিসেবে না দেখিয়ে অতিরিক্ত সারপ্লাস হিসেবে প্রদর্শন করা হয়েছে। এই লোকসানের বিপরীতে কোনো সঞ্চিতিও রাখেনি কোম্পানিটি।
শেয়ারবাজার বিনিয়োগ থেকে ওই লোকসান লাভ-ক্ষতির হিসাবে নির্ণয় না করেই ২০১৪ সালে লভ্যাংশ দিয়েছে প্রগতি লাইফ; যা বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড পরিপন্থী বলে মত দিয়েছে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান মেসার্স নুরুল ফারুক হাসান অ্যান্ড কোং। সম্প্রতি কোম্পানি প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ২০১৪ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ নিরীক্ষা করায় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
বিশেষ নিরীক্ষা শেষে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান মেসার্স নুরুল ফারুক হাসান অ্যান্ড কোং তাদের মন্তব্যে জানিয়েছে, শেয়ারে বিনিয়োগ থেকে যে লোকসান হয়েছে, তার বিপরীতে কোনো সঞ্চিতি না রেখে উল্টো মূলধনি মুনাফা হিসেবে দেখিয়েছে; যা বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ডের ৩৬ ধারা পরিপন্থী ও বীমা আইন, ২০১০-এর ২৬(১) ধারার লঙ্ঘন। সঠিক পদ্ধতিতে লাভ-ক্ষতি নির্ণয় না করে ২০১৪ সালে ১৭ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি, যা আইনগতভাবে সঠিক নয় বলেও মন্তব্য করেছেন নিরীক্ষক।
নিরীক্ষকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত মোট ৫৭টি তালিকাভুক্ত ও তিনটি অতালিকাভুক্ত কোম্পানিতে ৭২ কোটি ২৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছে এ কোম্পানি। এর মধ্যে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে ৭০ কোটি ৪০ লাখ ৭১ হাজার টাকা ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে ১ কোটি ৮৩ লাখ ১২ হাজার টাকা বিনিয়োগ করা হয়, যার বাজারমূল্য দাঁড়ায় ৩৩ কোটি ৫ লাখ ১৬ হাজার টাকা। এতে কোম্পানিটির ৩৭ কোটি ৩৫ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৭ টাকা মূলধনি ক্ষতি হয়েছে বলে নিরীক্ষক মন্তব্য করেছেন।
এ বিষয়ে আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ বলেন, নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে কোম্পানিটির লোকসানের এ চিত্র পাওয়া গেছে। আমরা তাদের কাছে এর ব্যাখ্যা চেয়েছি। জবাব সন্তোষজনক না হলে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী বিনিয়োগকৃত শেয়ারের মূলধনি লাভ বা ক্ষতি নির্ণয় করে তা কোম্পানির রাজস্ব হিসেবে প্রদর্শনের মাধ্যমে তহবিলের প্রকৃত লাভ নির্ণয় করতে হয়। কিন্তু প্রগতি লাইফ রাজস্ব হিসেবে ক্ষতি প্রদর্শন না করে ২০১৪ সালে ৩৭ কোটি ৩৫ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৭ টাকা তহবিল লাভ হিসেবে প্রদর্শন করেছে।
যদি এ ক্ষতি রাজস্ব হিসেবে প্রদর্শন করা হতো, তবে কোম্পানির তহবিল ৩৩ কোটি ৩০ লাখ ৩৬ হাজার টাকা লাভের পরিবর্তে ৩ কোটি ৯৬ লাখ ১৮ হাজার টাকা নিট ক্ষতি হতো। নিয়ম অনুযায়ী লাভ-ক্ষতি নির্ণয় না করায় ২০১৪ সালে ১৭ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদানের হিসাবও সঠিক হয়নি বলে নিরীক্ষক তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন।
এ বিষয়ে প্রগতি লাইফের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জালালুল আজীম বলেন, ২০১০ সালের আগে এ বিনিয়োগগুলো করা হয়েছে। ওই সময় আমি এ কোম্পানিতে ছিলাম না। আর শেয়ারগুলো এখনো ছেড়ে দেয়া হয়নি। তাই একে এখনই ক্ষতি বলা যাবে না। আইডিআরএ আমাদের যে চিঠি দিয়েছে তার ব্যাখ্যা আমরা দেব। তবে একটু সময় প্রয়োজন।
জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী বাজারদর যাচাই না করে পরিচালকের মালিকানাধীন মাল্টিমোড ট্রান্সপোর্ট কনসালট্যান্ট লিমিটেড থেকে গাড়ি কিনেছে প্রগতি লাইফ। ২০১২ সালে প্রোটন সাগা ব্র্যান্ডের মোট ১১টি গাড়ি ১ কোটি ৯৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা ও ২০১৪ সালে ৪০ লাখ ৯১ হাজার ৪৫৫ টাকা মূল্যের একটি প্রোটন এক্সোরা গাড়ি কেনে এ কোম্পানি।
বাজারদর যাচাই না করে কোনো প্রকার চুক্তি ছাড়াই কোম্পানির সব গাড়ি মেরামত ও সংরক্ষণ মাল্টিমোড ট্রান্সপোর্ট কনসালট্যান্ট লিমিটেড থেকে করা হয়। এছাড়া কোম্পানির গাড়ি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ২০১২ সালে ১৬৯টি গাড়ির বিপরীতে ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, ২০১৩ সালে ১৪৭টি গাড়ির বিপরীতে ১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ও ২০১৪ সালে ১৩৭টি গাড়ির বিপরীতে ৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়; যা অস্বাভাবিক ও ব্যবস্থাপনা ব্যয় বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ বলে নিরীক্ষক তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন।
নিরীক্ষকের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালে আইডিআরএর কাছে দাখিলকৃত তথ্যের সঙ্গে নিরীক্ষিত বার্ষিক হিসাব বিবরণীতে তথ্যের অনেক পার্থক্য রয়েছে। এ সময় কর্তৃপক্ষের কাছে মোট প্রিমিয়াম ১৭৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা উল্লেখ করা হলেও বার্ষিক হিসাব বিবরণীতে আছে ১৬৫ কোটি ৫৫ লাখ ২১ হাজার টাকা।
আইডিআরএর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে নবায়ন সংগ্রহের হার ছিল ১৫ শতাংশ, কিন্তু বার্ষিক হিসাব বিবরণীতে তা ৩৬ শতাংশ উল্লেখ করা হয়েছে। অনুমোদিত সীমার চেয়ে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের হার ৩১ দশমিক ৫৩ শতাংশ দাখিল করা হলেও বার্ষিক হিসাব বিবরণীতে তা ৩২ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ দেখানো হয়েছে।