share news Ikbal

Ikbal Mahmud

দুর্নীতি দমন কশিমনের (দুদক) নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ

এম এ রহমান : ইকবাল মাহমুদ দুর্নীতি দমন কশিমনের (দুদক) নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান। ১৪ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নিয়েছেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই নানা পরিকল্পনা বিষয়ে অনেকটা খোলামেলা কথা বলেছেন।

শেয়ারবার্তা : কেমন আছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেখা যায় দুদকে আস্থাহীনতার সঙ্কট রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি ?

ইকবাল মাহমুদ: জ্বি ভাল। আপনি যদি জনগণের পক্ষে কথা বলে থাকেন তাহলে বলবো এটা সত্য। আজকে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বলেছি মানুষ বলে দুদক দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান। এটা মানুষ বলে, আমি বলি না। তো এটা যাতে সত্য না হয় সেজন্য আমরা কাজ করি, করবো।

শেয়ারবার্তা: চেয়ারম্যান হিসেবে আপনার পরিকল্পনা কি থাকবে ?

ইকবাল মাহমুদ : চারটি বিষয়কে সামনে রেখে আমি কাজ করতে চাই। তা হলো- স্বচ্ছতা, জবাদিহিতা, আইনী কাঠামোর মধ্যে থাকা ও জনমত। এই চারটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে কমিশন চলবে।

শেয়ারবার্তা: দুদককে নখ-দন্তহীন বাঘের সঙ্গে তুলনা করা হয়। এ বিষয়ে আপনার মতামত কি?

ইকবাল মাহমুদ : এ বিষয়ে আমি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বলেছি আপনারা এমনভাবে কাজ করবেন যাতে দুর্নীতিগ্রস্তরা ভয় পায়। সাধারণ মানুষ যেন ভয় না পায়। এটাকে বাঘের সঙ্গে তুলনা করা অন্যায় হবে। এটা প্রতিষ্ঠান, বাঘ নয়। এর নখও নেই, দাঁত নেই। তবে নখ-দাঁত আছে দুর্নীতিগ্রস্তদের জন্য। সাধারণ মানুষের জন্য পবিত্র পতিষ্ঠান।

শেয়ারবার্তা: যারা দুর্নীতিগ্রস্ত কিংবা অন্যায়কারি তাদের জন্য মেসেজ আছে কি না?

ইকবাল মাহমুদ : আইনী কাঠামোর মধ্যে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে মেসেজ হচ্ছে এই যে, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবো এবং আশা করি দুর্নীতিগ্রস্তদের সংখ্যা কমবে। দুর্নীতির পরিমাণ কমছে। আশা করছি আরো কমবে।

শেয়ারবার্তা: দুদককে নিয়ে মানুষ ব্যঙ্গ করে বলেন দুদক দায়মুক্তি কমিশন। এ বিষয়ে আপনার মতামত কি ?

ইকবাল মাহমুদ: দায়মুক্তি বলতে কোন শব্দ নথিপত্রে দেখি নাই। আমি দেখেছি অব্যাহতি। এ বিষয়ে আমি সহকর্মীদের বলেছি আপনারা স্বচ্ছতার ভিত্তিতে কাজ করবেন। কাউকে অব্যাহতি দিবেন তখন জনগণকে বলতে হবে যে তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আর এই জন্য অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অর্থ্যাৎ যুক্তিছাড়া কোন অব্যাহতি দেওয়া যাবে না।

শেয়ারবার্তা: কতটা রাজনৈতিক চাপমুক্তভাবে কাজ করতে পারবেন বলে আপনি মনে করেন?

ইকবাল মাহমুদ: আমি নিজে কখনো রাজনীতি করি নাই। রাজনৈতিক চাপ আমার জীবনে দেখি নাই। আমি ২৪ পদে চাকুরী করেছি। কখনোই আমি রাজনৈতিক চাপ অনুভব করি নাই।

শেয়ারবার্তা: প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে দুদক কেন কার্য্করী পদক্ষেপ নিতে পারে না?

ইকবাল মাহমুদ : আমি আগেই বলেছি যুক্তিছাড়া কোন ব্যক্তিকে অব্যাহতি দেওয়া যাবে না। মামলা কিংবা অব্যাহতি যাই হোক তাতে যুক্তি অবশ্যই দিতে হবে। যেমন স্বনামধন্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমার কর্মকর্তা যুক্তি দিয়ে বলছেন সে দুর্নীতিগ্রস্ত। তখন আপনারা যদি বলেন ওই ব্যক্তি ঘুষ খেয়েছে। সেটা হবে না। আমরা যাই করবো আইনী কাঠামোর মধ্যে থেকে করবো।

শেয়ারবার্তা: দুদককে নিয়ে সব সময় সমালোচনা হয়। বিশেষ করে দুদক চেয়ারম্যান পদে যিনি থাকেন তাকে নিয়ে বেশি সমালোচনা হয়। এ বিষয়ে কি বলবেন ?

ইকবাল মাহমুদ : সমালোচনা খুব ভাল জিনিস। আমি চাই সবাই সমালোচনা করুক। কিন্তু অনুরোধ থাকবে যারা সমালোচনা করবেন তারা যে বিষয়ে সমালোচনা করবেন সে বিষয়ে সমাধান কি হবে সেটা বলবেন। তাহলে আমি গ্রহণ করবো। যদি সমাধান না থাকে তাহলে গ্রহণ করবো না।

শেয়ারবার্তা: বিগত দিনে দুদকের প্রাক্তন চেয়ারম্যানসহ উর্ধ্বতনরা বরাবরই বলে থাকেন প্রভাবশালীরাই সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিবাজ। তাদের বিষয়ে প্রকৃত অর্থে কিছু করা সম্ভব হয় না। প্রভাবশালীদের বিষয়ে আপনার মেসেজ কি থাকবে।

ইকবাল মাহমুদ : আমি অবশ্য জানি না উনারা কি বলেছেন। প্রভাবশালী কে? আমি তো মনে করি আমরা চেয়ে বাংলাদেশে প্রভাবশালী কোন ব্যক্তি নেই। দুদক আইনটি দেখেন। ওই আইনে যে ক্ষমতা দেওয়া আছে সত্যি বলেছি কিনা।

শেয়ারবার্তা: এক যুগে হয়ে গেল দুর্নীতি দমন ব্যুরো থেকে কমিশন হলো। আপনার দায়িত্ব নেওয়ার মাধ্যমে নতুন একটি যুগের সূচনা হলো। এখান থেকে বর্তমান দুদকের কতটা পরিবর্তন দৃশ্যমান হবে।

ইকবাল মাহমুদ : পরিবর্তন তো কিছুটা আসবেই। আমি যতই বলি দুদক স্বাধীন, আমি সবচেয়ে ক্ষমতাবান কিংবা প্রভাবশালী। আমি এই কথাটা বলি জনগণের শক্তিতে। আর তাই কমিশন এমন কাজ করতে চায় যা জনগণ বিশ্বাস করবে, আমাদের উপর আস্থা রাখবে।

শেয়ারবার্তা: সব প্রতিষ্ঠানে চাটুকারিতা দেখা যায়। আপনার প্রথম কর্মদিবসেই হাত-তালিকে নিরুৎসাহিত করেছেন। বিষয়টি প্রশংসনীয়।

ইকবাল মাহমুদ : এই যে আপনি প্রশংসা করলেন এটাও এক ধরনের চাটুকারিতা। প্রশংসা যা করার পিছনে কিংবা লেখনির মাধ্যমে করবেন। আর নিন্দা সামনে করবেন। পিছনে কোন নিন্দা করবেন না।

শেয়ারবার্তা: দুদককে প্রাতিষ্ঠানিক শক্তিশালী করার বিষয়ে আপনার পদক্ষেপ কি হবে ?

ইকবাল মাহমুদ : দুদক আইনীভাবে অনেক শক্তিশালী। কারণ দুদককে সকল সংস্থা সহযোগিতা করতে বাধ্য। দুদককে অবশ্যই সকলের সহায়তা করতে হবে। যে সকল ব্যক্তি দুদককে সহযোগিতা করবেন না তাদের ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। যদি আমাদের কোন কর্মকর্তা বলে আমি সহয়োগিতা পাচ্ছি না, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ আইনে তাকে যথেষ্ট ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

শেয়ারবার্তা: সংবাদিককর্মীরা আপনার কাছ থেকে যতটুকু সহায়তা পাবে ?

ইকবাল মাহমুদ : কতটুকু সহযোগিতা পাবেন তা আমার ব্যস্ততার ওপর নির্ভর করে। ব্যস্ততার কারনে অনেক সময় সহযোগিতা করা যায় না। আর সব সময় সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায় না। দুর্নীতি দমনে আপনাদের (সাংবাদিক) সহযোগিতা প্রয়োজন। আমার প্রথম মতবিনিময় সভা হবে সাংবাদিকদের সঙ্গে।

শেয়ারবার্তা: এত ব্যস্ততার মাঝে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আশা করছি সব সময় সহযোগিতা অব্যহত খাকবে।

ইকবাল মাহমুদ : আপনাকেও ধন্যবাদ। সব সময় যোগাযোগ রাখলে অবশ্যই সহযোগিতা পাবেন। তবে টেলিফোনো কোন বক্তব্য দেওয়া যাবে না।

প্রসঙ্গত, দুদকের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ ‍উপজেলার চরহোগলা গ্রামে। তার পিতা মো. আবদুল লতিফ পেশায় শিক্ষক ছিলেন। মাতার নাম মাহফুজার বেগম। ১৯৭৭ সালে জনপ্রশাসন বিষয়ে এমএসএস সম্পন্ন করেন। তার স্ত্রীর নাম ডা. খাদিজা বেগম। ব্যক্তিজীবনে তিনি এক কন্যা ও পুত্র সন্তানের জনক।

ইকবাল মাহমুদ ১৯৮১ সালে বিসিএস (প্রশাসন) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা যোগদানের পর বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব থাকা অবস্থায় ২০০৮ সালের জুন মাসে পদোন্নতি পেয়ে সচিব হন তিনি।

২০১২ সালে সরকার ‘সিনিয়র সচিব’ পদ সৃষ্টি করলে অন্যান্য সাতজনের সঙ্গে ইকবাল মাহমুদও ওই পদ পান। ওই সময় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বরে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) বিকল্প নির্বাহী পরিচালকের পদ থেকে অবসরে যান। সুত্র: রাইজংবিডি