লাইফ ফান্ডের টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সম্ভব
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশনের(বিআইএ) সভাপতি এবং সোনালী ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন বলেছেন, ২০১০ সালে পুঁজিবাজার ধসের সময় আমরা লাইফ ফান্ডের বিপুল অঙ্কের টাকা শেয়ারে বিনিয়োগের প্রস্তাব করেছিলাম। সরকার চাইলেই তখন এই টাকাটা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারতো। কিন্তু এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। আমরা সেই টাকা পদ্মা সেতু থেকে বিশ্বব্যাংক চলে যাবার পর সেখানেও বিনিয়োগের প্রস্তাব করেছিলাম।
কিন্তু তাও সম্ভব হয়নি।এখন কোম্পানিগুলো স্বস্ব ক্ষেত্রে নিজস্ব উদ্যোগে বিনিয়োগ করছে। ফলে এখন আর কাউকে সেই টাকার জন্য ঝুকি নিতে হচ্ছেনা। মুলত ওই টাকার অভিবাবক হচ্ছে সরকার।কাজেই সরকার চাইলে এখনো তা যেকোনো জায়গায় বিনিয়োগ করতে পারে। একান্ত আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারটির গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো প্রকাশ করা হলো:
শেয়ারবার্তা: দেশে বীমা ব্যবসার বর্তমান অবস্থা কেমন যাচ্ছে?
শেখ কবির: বর্তমানে দেশে বীমা খাত ভালই চলছে। আমরা আমদানি-রপ্তানি, অগ্নি ও যানবাহন মোটর গাড়ীর বীমা নিয়ে ব্যবসা করি। কাজেই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য যত ভাল যাবে আমাদের বীমা ব্যবসাও তত ভাল হবে। অর্থাৎ অর্থনীতি ভাল হলে বীমা ব্যবসাও ভাল হয়।
শেয়ারবার্তা: বাকিতে বীমা ব্যবসার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও এখনো অনেকে বাকিতে এই ব্যবসা চালাচ্ছেন এটা কি অনৈতিক নয়?
শেখ কবির: আইডিআরএ’র চেষ্টায় বাকিতে বীমা ব্যাবসা অনেকটা বন্ধ হয়েছে। তারপরও কিছু কিছু হতে পারে । সবটাতো আর ঠেকানো যায়না।
শেয়ারবার্তা: দেশের উপকূলীয় এলাকায় জেলেদের বীমার আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, তার অগ্রগতি কেমন?
শেখ কবির: এটি এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জেলেদের বীমার আওতায় আনার উদ্যোগ বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।
শেয়ারবার্তা: অনেকেই মনে করেন, ব্যবসা ভালো না হলে দুটি কোম্পানি একীভূত হয়ে যেতে পারে। এ বিষয়টি আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
শেখ কবির: এ ধরনের উদ্যোগ সরকারের কিংবা আমাদের কারোরই নেই। যার ব্যবসা সেই করছে। অনেকে বিভিন্ন খাতে ব্যবসা করেন। দেখা গেছে কোনো ব্যবসা শেষ হয়ে গেছে আবার কোনোটি উন্নতি করে থাকে। ব্যবসার প্রতিযোগিতায় কেউ টিকে থাকবে আবার কেউ টিকে থাকতে পারবে না এটাই নিয়ম। আবার এমন হতে পারে কারো একটা ব্যবসা আছে সে চালাতে পারে না। অন্যকারো কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে একীভূত হওয়ার সম্ভাবনা বীমাখাতে নেই।
শেয়ারবার্তা: দেশের বীমাখাতে নতুন কোনো পণ্য আসছে কি-না?
শেখ কবির: নতুন প্রোডাক্ট বলতে কিছু শুরু হয়নি। দু-একটি কোম্পানি তাদের নিজেদের প্রচেষ্টায় নতুন পণ্য নিয়ে এসেছে। বীমাখাতের অভিজ্ঞতার জন্য নতুন নতুন প্রোডক্ট আনা উচিৎ। আমাদের বীমাখাতের ম্যানেজমেন্টে যারা আছে তাদের আরো অভিজ্ঞতা নেয়া উচিৎ। এজন্য বীমাখাতের উন্নয়নে ইস্টিটিউট করা দরকার। এখাতকে একাডেমিকভাবে আরো শক্তিশালী করতে হবে। বিভিন্ন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্র থাকা দরকার বলে আমি মনে করি। ফলে বীমাখাতে এক্সপার্ট বেড়িয়ে আসবে তখনই নতুন নতুন প্রোডাক্ট আসবে।
শেয়ারবার্তা: বীমা কোম্পানিগুলোকে তিনবছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত হওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠান এখনও তালিকাভূক্ত হয়নি কেনো?
শেখ কবির: পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত হওয়া সহজ নয়। তিনবছর বা তার চেয়ে বেশি সময় হলেও তাদের তালিকাভূক্ত হওয়ার ক্ষমতা নেই। তালিকাভূক্ত হতে কিছু আইন ও নিয়ম কানুন রয়েছে। সেগুলো সম্পন্ন না করলে বিএসইসি তালিকাভূক্ত করবে না। অনেক কোম্পানি বিএসইসিতে আবেদন করেছে। ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল না করতে পারলে পুঁজিবাজারে আসতে পারবেনা। আর যারা পারবে তারা আসবে।
শেয়ারবার্তা: বাংলাদেশে ভূমিকম্প বা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বীমা কোম্পানিগুলো কতটুকু সক্ষম বলে আপনি মনে করেন?
শেখ কবির: বাংলাদেশে সকল কিছু বীমার আওতায় নেই।পৃথিবীর উন্নত দেশেগুলোতে সব কিছু বীমার আওতায় আছে এমনকি তাদের ঘরের প্রত্যেকটি আসবাবপত্র বীমা করা ।প্রত্যেকটি ঘরের সামনে তারা কোন বীমার আওতায় আছে তার সাইন বোর্ডও দেয়া আছে । শুধু তাই নয় তাদের হাত ও পায়ের আলাদা আলাদা বীমা করা আছে । আমাদের দেশে এ পদ্ধতি এখনও হয়নি ।এজন্য আমি প্রায় বলি যেদেশের বীমাখাত যত শক্তিশালী সেদেশের অর্থনীতি তত শক্তিশালী। গত কয়েক বছর আগে আমেরিকার একটি প্রদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছিল । সেখানে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল তার ৫৭ শতাংশ পরিশোধ করেছিল বীমা কোম্পানি।তার মানে ওই দেশের সবকিছু বীমার আওতায় ছিল। আমাদের দেশের সব কিছু বীমার আওতায় আনতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারেরও ভূমিকা থাকতে হবে, বীমাখাতেরও ভূমিকা থাকতে হবে। সরকার বলতে আইডিআরএ’র কথা বলছি।আইডিআরএ’র নির্দেশনা থাকতে হবে। সব কিছু বীমার আওতায় আনার জন্য আমাদেরকে সেইভাবে তৈরি করে নিতে হবে।
শেয়ারবার্তা: ২০১০ সালে পুঁজিবাজার ধ্বসের সময় লাইফ ফান্ডের টাকা বিনিয়োগ করার ঘোষনা দেয়া হয়েছিল। এটি কিতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে।
শেখ কবির: যখন বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু থেকে সরে গেল তখন আমি বলেছি সেখানে লাইফ ইন্সুরেন্সের টাকা বিনিয়োগ করব। আমি প্রথম পদ্মা সেতুতে লাইফ ইন্সুরেন্সের টাকা বিনিয়োগ করার কথা বলেছিলাম। পুঁজিবাজার ধ্বসের সময়ও লাইফ ইন্সুরেন্সের টাকা বিনিয়োগ করার কথা বলেছি। কিন্তু লাইফ ইন্সুরেন্সর টাকার মালিক বীমা কোম্পানি নয়। এ টাকার অভিভাবক হচ্ছে সরকার। আমরা মাত্র রক্ষাকারী।সরকার চাইলে তখন এ টাকার সদ্ব্যবহার করা যেতো।কিন্তু আমরা ইচ্ছা করলেই এ টাকা যেকোনো জায়গায় বিনিয়োগ করতে পারিনা।বিনিয়োগের পর যদি এ টাকা তুলে আনতে না পারি তাহলে আমরা হব সাফারার। সাধারণ মানুষও এর জন্য সাফার করবে। এজন্য সময়ে সময়ে এ টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। আর এ টাকা বীমা এসোসিয়েশনের কাছে না, বীমা কোম্পানিগুলোর কাছে। তারা সময়ে সময়ে তাদের আগ্রহ ইচ্ছা অনুযায়ী বিনিয়োগ করে থাকে।
শেয়ারবার্তা: কি পরিমান অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে?
শেখ কবির: আসলে কি পরিমান বিনিয়োগ করা হয়েছে আমি বলতে পারছি না। তবে ডিএসইর ওয়েব সাইটে গেলে তা দেখা যাবে।
শেয়ারবার্তা: দেশের অর্থনীতির পরিধির তুলনায় ব্যাংক বীমা প্রতিষ্ঠান অনেক বেশি। এ বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?
শেখ কবির: দেশে ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠান যত বেশি হয় তাতে কোনো অসুবিধা নেই। ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা থাকা ভাল। আমি মনে করি যে প্রতিষ্ঠান চালাতে পরবে সে থাকবে, না পরলে থাকবে না। যেমন একটি সোনার দোকান থাকলে সেখানে ক্রেতা কম যায়, যেখানে বেশি থাকে সেখানে ক্রেতাও বেশি। দেশের অবস্থা চিন্তা ভাবনা করেই সরকার লাইসেন্স দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠান চালাতে পারবে বলেই সরকার বুঝে শুনে লাইসেন্স দিচ্ছে। আমি মনে করি প্রতিষ্ঠান বেশি হলে কোনো সমস্যা নেই। আর প্রতিষ্ঠান বেশি বলতে সরকার ঢালাওভাবেতো লাইসেন্স দিচ্ছে না।
শেয়ারবার্তা: বীমার আওতা বাড়াতে আপনারা কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন?
শেখ কবির: দেশে অনেক বীমা চালু নেই। স্বাস্থ্য বীমা নেই, কৃষি বীমা নেই । কৃষি বীমাকে সরকার টেস্ট কেইস হিসেবে দেখছেন। এর আগে হবিগঞ্জে এ বীমার উপর পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। সরকার যদি মনে করে এসব বীমা চলবে তাহলে চালু হবে। এসব বীমার আওতা বাড়লে সরকারের ভূমিকা হবে অপরিসীম। এক্ষেত্রে এডিবি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মত প্রতিষ্ঠানের সাহায্যের প্রয়োজন হবে।
শেয়ারবার্তা: আপনাকে ধন্যবাদ
শেখ কবির
সুত্র: পুঁজিবাজার