aziz pipesআফজাল হোসেন লাভলু, শেয়ার বার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশলী খাতের কোম্পানি আজিজ পাইপস লিমিটেডের বিনিয়োগকারীরা মুল পুঁজি নিয়ে দু:চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেনবর্তমানে ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে পড়ছে কোম্পানিটিফলে কোম্পানির ভবিষ্যত নিয়ে দু:চিন্তায় পড়ছেন বিনিয়োগকারীরাদীর্ঘদিন ধরে কোম্পানি থেকে বিনিয়োগকারীরা ডিভিডেন্ড পাচ্ছে নাকোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড থেকে বঞ্চিত করেছে বছরের পর বছর।  

বর্তমানে খেলাপি ঋণের কারণে আমদানি অর্থায়নে ব্যাংকের সহযোগিতা পাচ্ছে না আজিজ পাইপস লিমিটেডস্থানীয় আমদানিকারকদের কাছ থেকে চড়া দামে কাঁচামাল সংগ্রহ করতে হচ্ছে কোম্পানিটিকেএতে রেভিনিউর প্রায় সবটাই চলে যাচ্ছে কাঁচামালের পেছনে

এদিকে মূলধন সংকটে পুরনো কারখানারও কোনো সংস্কার হচ্ছে না। ধারাবাহিকভাবে উত্পাদন কমার পাশাপাশি বাড়ছে লোকসান। পুঞ্জীভূত  লোকসান এখন কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের প্রায় ১০ গুণ।

কোম্পানির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ন্যাশনাল ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংকের কাছে মোট ৩৫ কোটি ৯৫ লাখ ৩২ হাজার ২০০ টাকা দেনা রয়েছে আজিজ পাইপসের। এর মধ্যে উত্তরা ব্যাংক ১৭ কোটি ৪২ লাখ ৬৪ হাজার ৪৫৪ টাকা, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ১১ কোটি ৫৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৮ এবং ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছে তাদের দেনা ৬ কোটি ৯৮ লাখ ১৯ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা।

এ ঋণ পরিশোধের দাবিতে আদালতে মামলাও করেছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। মামলাগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে বিচারাধীন। এর বাইরেও কোম্পানির ১৫ কোটি টাকার বেশি দীর্ঘমেয়াদি ঋণ রয়েছে, যার অধিকাংশই সাউথইস্ট ব্যাংক ও ইউসিবিএল থেকে নেয়া।

সব ঋণ ও মামলা-সংক্রান্ত জটিলতায় দীর্ঘদিন ধরেই লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খুলে কাঁচামাল আমদানি করতে পারছে না আজিজ পাইপস। ফলে কোম্পানিটিকে স্থানীয় অন্যান্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চড়া দামে কাঁচামাল নিতে হচ্ছে। অন্যদিকে চলতি মূলধন ঘাটতির কারণে বাকিতে কাঁচামাল কিনতে গিয়ে গুনতে হচ্ছে আরো বেশি দাম। ফলে কোম্পানির উত্পাদন খরচ অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।

নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১০ সালে আজিজ পাইপসের রেভিনিউর ৮৯ শতাংশই ব্যয় হয় কাঁচামাল ক্রয়ে। ২০১৩ সালে এসে তা ৯০ শতাংশে ও ২০১৪ সালে ৯৫ শতাংশে ঠেকে। ফলে কোম্পানির লোকসান ধারাবাহিকভাবে বাড়ে।

বিক্রি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১০ সালে কোম্পানিটির পণ্য বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪১ কোটি ৯৬ লাখ ১২ হাজার ৭৪ টাকা। ২০১১ সালে তা প্রায় ১ কোটি টাকা কমে ৪০ কোটি ২৮ লাখ ৫৫ হাজার ২৭৬ টাকায় নেমে আসে। ২০১২ কাছাকাছি থাকলেও ২০১৩ সালে এসে তা অনেক কমে দাঁড়ায় ৩৩ কোটি ৫৫ লাখ ৩৫ হাজার ৯৪ টাকা। ২০১৪ হিসাব বছরে তা আরো কমে ৩০ কোটি ৬৯ লাখ ৫৬ হাজার ৭৫৬ টাকায় নেমে আসে। আর ২০১৫ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকেও বিক্রি হ্রাস অব্যাহত ছিল। ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোম্পানির পণ্য বিক্রির পরিমাণ ছিল ২৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা, যা ২০১৫ সালের প্রথম নয় মাসে ১৫ কোটি ১৯ লাখ টাকায় নেমে এসেছে।

ধারাবাহিক বিক্রি হ্রাসের পাশাপাশি পরিচালন ব্যয়ও বৃদ্ধি পাওয়ায় পুঞ্জীভূত লোকসানও বাড়তে থাকে আজিজ পাইপসের। ২০১০ সালে কোম্পানিটির পুঞ্জীভূত লোকসান ছিল ৪৩ কোটি ২৪ লাখ ৬৪ হাজার ৬২২ টাকা। ২০১৪ হিসাব বছরে তা ৪৬ কোটি ৭৫ লাখ ৬৯ হাজার ৫৫০ টাকায় দাঁড়ায়। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুঞ্জীভূত এ লোকসান ৪৭ কোটি ৬৪ লাখে ঠেকেছে।

এদিকে মূলধন ঘাটতির কারণে দীর্ঘদিন ধরেই কারখানার সংস্কার ও আধুনিকায়ন করতে না পারায় প্রায় অকেজো হয়ে পড়ছে কারখানার অনেক যন্ত্রাংশ। আর উত্পাদন সক্ষমতার বড় অংশই অব্যবহূত থাকায় কোম্পানিটির আর্থিক ক্ষতি ক্রমেই বাড়ছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানির একজন কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, কোম্পানির শতভাগ কাঁচামালই বিদেশ থেকে আসে। এলসি জটিলতায় তা এখন স্থানীয় আমদানিকারকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এতে কাঁচামালের ব্যয় ১২-১৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়।

তাছাড়া কারখানার যন্ত্রাংশ পুরনো হয়ে যাওয়ায় উত্পাদন সক্ষমতার ৩০ শতাংশের বেশি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ২০১৫ সালে কারখানা সংস্কার ও আধুনিকায়নের পরিকল্পনা থাকলেও কোম্পানির চলতি মূলধন ঘাটতির কারণে তা সম্ভব হয়নি।

১৯৮৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা ও পরিশোধিত মূলধন ৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। কোম্পানিটি মূলত ইউপিভিসি পাইপ ও পিভিসি প্রোফাইল তৈরি করছে। তবে চলতি মূলধন ঘাটতির কারণে প্লাস্টিক উডের উত্পাদন বন্ধ রেখেছে কোম্পানিটি।

কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালক ৪০ দশমিক ২২ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ৭ দশমিক ৪১ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে রয়েছে ৫২ দশমিক ৩৭ শতাংশ শেয়ার। আর্থিক সংকটে থাকায় কোম্পানিটি ২০০১ সালের পর কোনো হিসাব বছরের জন্যই শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয়নি। ২০১৪ হিসাব বছরে এর শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ১ টাকা ৩২ পয়সা ও শেয়ারপ্রতি দায় ৫০ টাকা ৮৭ পয়সা।