চট্টগ্রামে পুঁজিবাজার মেলায় উৎসুক দর্শনার্থীদের ভীড়
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সিএসই আয়োজিত ৫ম পূঁজিবাজার মেলা বাণিজ্যনগরী চট্টগ্রামের জিইসি কনভেনশন সেন্টারে ২ দিনব্যাপী পুঁজিবাজার মেলা অনুষ্ঠিত শুক্রবার শেষ হয়েছে। এবার মেলায় ৯৮টি স্টল ছিল। এতে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিসহ বিভিন্ন সিকিউরিটিজ হাউস অংশ নিয়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উৎসুক দর্শনার্থীদের ভীড় ছিল। এর মধ্যে তরুন তরুনীদের উপস্থিতি লক্ষনীয় ছিল।
অধিকাংশ নতুন বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজার সম্পর্কে জানতে মেলা অংশগ্রহন করে। তবে এবারের মেলার অন্যতম স্পন্সর ছিল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস লিমিটেড (বিবিএস)। বিবিএসের মেলায় একটি স্টলও ছিল। মেলার উদ্বোধনী দিনে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. খায়রুল হোসেনসহ অতিথিরা বিবিএস মেলার স্টল পরিদর্শন করেন।
এ সময় অতিথিরা বিবিএসের তালিকাভুক্তি পরবর্তী সফলতার প্রশংসা করেন। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি বিবিএসের ব্যবসা সম্প্রসারণ ও প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব রেখেছে। মেলায় বিবিএসের কোম্পানি সচিব মোঃ গোলাম সবুর এফসিএমএ এর সাথে কোম্পানিটির পুঁজিবাজারে আসা, মেলায় অংশ নেওয়াসহ নানা বিষয় নিয়ে দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণের প্রতিবেদকের সাথে। গোলাম সবুর এফসিএমএ বলেন, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে সংগ্রহ করা টাকায় তারা উচ্চ সুদের দীর্ঘমেয়াদী ঋণ শোধ করেছেন। এতে ব্যবসার পরিচালন ব্যয় কমেছে, যা মুনাফা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
অন্যদিকে আইপিও থেকে প্রাপ্ত অর্থের আরেক অংশ দিয়ে তারা নতুন ইউনিট স্থাপন করেছেন। পুঁজিবাজার একটি কোম্পানির বড় হবার রাস্তা খুলে দিতে পারে। দরকার সঠিক পরিকল্পনা,নিষ্ঠা। আর শেয়ারহোল্ডার তথা বিনিয়োগকারীদের প্রতিও থাকতে হবে শ্রদ্ধাশীল, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও দায়বোধ বলে তিনি মনে করেন। অন্যদিকে সেবার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছে পৌঁছতে চায় ইন্টারন্যাশনাল লিজিং সিকিউরিটিজ লিমিটেড (আইএলএসএল)। পুঁজিবাজার মেলাতে নতুন বিনিয়োগকারীদের মাঝে প্রশিক্ষণ সেবাও নিশ্চিত করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। এমনটি জানালেন কোম্পানির হেড অব অপারেশন মো. মোসলেম উদ্দিন।
চট্টগ্রাম পুঁজিবাজার মেলাতে সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা সেবার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছে পৌঁছাতে চাই। আমরা বিনিয়োগকারীদের পাশে থাকতে চাই; তাদারে বিনিয়োগ নিরাপত্তা দিতে চাই। তিনি আরো বলেন, আমাদের শক্তিশালী রিসার্চ টিম রয়েছে। বহু বিনিয়োগকারীর কাছে বাজারের একটি নির্দিষ্ট কোম্পানির শেয়ার সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাব রয়েছে। তাই আমাদের রিসার্চ টিম সেই কাজটা করে ই-মেইল অথবা মেসেজের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছে পৌছেঁ দেয়। স্টল কর্মকর্তারা জানান, প্রতিষ্ঠানটি নতুন বিনিয়োগকারীদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনার জন্য কাজ করছে। মেলায় বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হচ্ছে। যা পরবর্তীতে বাজারে বিনিয়োগে সহায়তা করবে। অন্যদিকে সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস লিমিটেড মেলায় একটি স্টল ছিল।
আমাদের প্রতিবেদক মেলা পরিদর্শনের সময় প্রতিষ্ঠানটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং পোর্টফোলিও ম্যানেজার রেজা মাসুদ আল হুদা রেজা হুদা বলেন, আমরা এবার প্রথম মেলায় এসেছি। আমরা মূলত এখানে ভ্যালু সেল করতে এসেছি। এখন যে মার্কেট তা মূলত বিনিয়োগ করার উপযুক্ত। এই মন্দা মার্কেটে একজন বিনিয়োগকারী কীভাবে ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন শেয়ারে বিনিয়োগ করবেন; সে বিষয় মেলায় প্রাথমিক ধারণা দিচ্ছি। একটা কোম্পানিতে বিনিয়োগের জন্য কোন বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হয় তা বুঝানোর চেষ্টা করছি। যাতে পরবর্তীতে বাজারে এলে হুজুগ ও গুজবে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত না হন। আমরা মেলায় আসা দর্শনার্থীদের বলছি যে, এফডিআর কিংবা ব্যাংকে টাকা রাখার চেয়ে একটা ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ অনেক ভালো। তাতে ব্যাংকের চেয়ে বেশি রিটার্ন পাওয়া যায়। প্রথম দিনে আমাদের প্রচেষ্টা অনেকটাই সফল হয়েছে। স্টলে আসা নতুন দর্শনার্থীদের অনেকেই বাজারে বিনিয়োগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। যা সিটি ব্যাংক ক্যাপিটালের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করি।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের এখনই উপযুক্ত সময়। এই মন্দা বাজারে ভালো মৌলের শেয়ারে বিনিয়োগ করা গেলে সেখান থেকে আকর্ষণীয় মুনাফা পাওয়া সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের সঠিক নির্দেশনা ও সেবা নিশ্চিত করতে স্যোসাল ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজ বদ্ধপরিকর। তাই সেবার মান বাড়ানোসহ নতুন বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ শাখার প্রধান ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ। স্টলে উপস্থিত এসআইবিএল সিকিউরিটিস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হুমাছুন কবির, আগ্রাবাদ ব্রাঞ্চ ম্যানেজার আব্দুল¬াহ আল মাসুদ ও এসআইবিএল সিকিউরিটিজের হেড অব অপারেশন আশিকুজ্জামান ছিলেন।
স্যোসাল ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজ চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ শাখার প্রধান ব্যবস্থাপক মাসুদ বলেন, চট্টগ্রামে এসআইবিএল প্রথমবারের মত পুঁজিবাজার মেলায় অংশ নিচ্ছে। তবে এবার শুরুতেই প্রতিষ্ঠানটি তরুণ বিনিয়োগকারীদের মাঝে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ছিল দিন ভর। তবে স্টলের সামনে বিনিয়োগকারীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। অন্যদিকে বর্তমান পুঁজিবাজারে গুজবে কান দিয়ে বিনিয়োগ করার দিন শেষ হয়ে এসেছে। খুব শিগগিরই পুঁজিবাজারের সবকিছুই শতভাগ প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠবে। তখন প্রযুক্তিগত বিশ্লেষন ও মৌলিক বিশ্লেষনের উপর ভিত্তি করে সব ধরনের লেনদেন হবে। এ জন্য কবির সিকিউরিটিজ গ্রাহকদের সেভাবেই গড়ে তুলতে চায়।
শুক্রবার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ৫ম পুঁজিবাজার মেলার শেষ দিনে এভাবেই নিজেদের কর্মপরিকল্পনার কথা জানাচ্ছিলেন কবির সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক মুর্শেদুল আলম রাসেল। তিনি দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, পুঁজিবাজারের সব কিছুই অনলাইনে করা যায়। বিনিয়োগকারীরাও ঘরে বা কর্মস্থলে বসে অনলাইনে মাধ্যমে সব সেবা পেতে ইচ্ছুক। তাই আমরা আমাদের বিনিয়োগকারীদের এসব তথ্য বা সেবা অনলাইলে পেতে কি কি করতে হবে তা শিখিয়ে দিচ্ছি। তাছাড়া মেলা উপলক্ষ্যে কবির সিকিউরিটিজ বিভিন্ন ছাড় দিয়েছে।
৫ টি বিও হিসাব খোললে একটি এবং ১০ টি বিও হিসাব খোললে ৩ টি হিসাব বিনা মূল্যে খোলা যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া মেলায় অংশ নেন পিএইচপি স্টক অ্যান্ড সিকিউরিটিস লিমিটিড। মেলায় অংশগ্রহন বিষয়, প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র ব্যবস্থাপক ও বিভাগীয় প্রধান মোহাম্মেদ ইমতিয়াজ দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন,পুঁজিবাজার নিয়ে সাধারণ মানুষের দুইটি ধারণা আছে।
একটি হলো বাজারে ব্যবসা করতে হলে অনেক টাকা লাগে । অন্যটা হলো- এখানে এলেই মানুষ শুধু লোকসানের সম্মুখীন হয়। আমরা এই ধারণা দুটি পাল্টে দিতে চাই। বুঝাতে চাই সঠিক সময়ে সঠিকভাবে বিনিয়োগ করলে লোকসান এড়ানো সম্ভব। পিএইচপির বৈশিষ্ট্য নিয়ে তিনি বলেন, আমরা ব্যবসার চেয়ে সেবাই বিশ্বাস করি। সেবা দিয়ে বিনিয়োগকারীর আস্তা অর্জন করতে চাই। আর তাতে আমরা সফলতা পেয়েছি। তাইতো অনেকে আমাদের সঙ্গে ব্যবসা করা জন্য যোগাযোগ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এটা আমাদের সব চেয়ে বড় ইতিবাচক দিক।
এছাড়া আমরা নতুনদের নিয়ে পুঁজিবাজারে বিভিন্ন ইস্যুতে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। সেখানে আমাদের পুরাতন বিনিয়োগকারীরাও থাকে। তারা বেশি বেশি জানতে পারে। তবে বাজারে বিনিয়োগের আগে পুঁজিবাজার সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান থাকা চাই। এছাড়া মেলায় অংশ নিয়ে গ্রিন ডেল্টা সিকিউরিটিজ বিনিয়োগকারীদের ৫ ভাবে সেবা দিচ্ছে। ইতোমধ্যে বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি মোবাইল অ্যাপসও ছেড়েছে কোম্পানিটি; যার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা ঘরে বসে অতি সহজে সেবা পাবেন।
সিএসই ফেয়ারে অংশ নিয়ে গ্রীণ ডেল্টা সিকিউরিটিজ হাউজের ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্যবস্থাপক ইন্টারন্যাল অডিট অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স বিভাগ, মো. হুমায়ন হাবিব বলেন, আমরা গ্রাহকদের উন্নত প্রযুক্তির সেবা দিতে চাই; যাতে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ আরও সহজ হয়। একটা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি হিসেবে আমরা মেলাতে প্রোডাক্ট এনেছি। পুঁজিবাজারকে প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে চাই আমরা। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিনিয়োগকারীদের ৫ ভাগে ভাগ করেছি। সিএসইর উদ্যোগে জিইসি কনভেনশন সেন্টারে ২ দিনব্যাপী পুঁজিবাজার মেলা অংশ নেয় আইল্যান্ড সিকিউরিটিজ।
মেলাতে অংশগ্রহন বিষয় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক মো. আবু সাঈদ বলেন, চট্টগ্রামে বিনিয়োগকারী এবং পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের একত্রিত হওয়ার সুযোগ কম। সিএসই ২০ বছরের ইতিহাসে মাত্র ৫ বার এ মেলার আয়োজন করেছে। এ ধরণের মেলার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা এক সাথে অনেকগুলো সিকিউরিটিজ হাউজকে পায়। তারা সকল হাউজের তথ্য ও সেবা সম্পর্কে জানতে পারে। একই সঙ্গে নিজেদের পছন্দ মতো প্রতিষ্ঠানে সেবা নিতে পারে।
এতে সিকিউরিটিজ হাউজগুলোর মধ্যেও সেবা প্রদানে ইতিবাচক প্রতিযোগীতা সৃষ্টি হয়; যা এ মার্কেটের জন্য শুভ দিক। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) মেলার মাধ্যমে আমরা এক সাথে অনেক বিনিয়োগকারী এবং পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট অনেক প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ পেয়েছি। আমরা এ ধরনের সুযোগ চট্টগ্রামে খুব একটা পাই না। তাই এ মেলায় আমরা সব সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগকারীদের সঠিক ও সুনির্দিষ্ট তথ্য জানাতে চাই।