forbbbরাকিবুল হাসান, আসাদুজ্জামান মুরাদ, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: ব্যবসা শুরু ৫ বছরের ব্যবধানেই মুনাফার ব্যাপক উল্লম্ফন দেখিয়ে সম্প্রতি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে শেয়ার ক্রয়ের আবেদন সংগ্রহ করেছে ফরচুন সুজ লিমিটেড। কিন্তু মুনাফাধারী কোম্পানিটি যাথাসময়ে শ্রমিকদের বেতন বাতা পরিশোধ না করায় কোম্পানিটির কারখানায় বিভিন্ন সময়ে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। শ্রমিকদের দাবি, বেতন-ভাতা নিয়ে মালিক পক্ষের টালবাহানা অব্যাহত থাকলে যেকোন সময় কোম্পানিটির উৎপাদনে বড়ধরনে বিপত্তি ঘটতে পারে।

অভিযোগ রয়েছে, শ্রমিকদের কর্মঘন্টার অতিরিক্ত কাজ করানো হলেও অতিরিক্ত কাজের মুজরি প্রদান করা হয় না। যদি কেউ অতিরিক্ত কাজের মুজরি চায় তবে তাকে চাকুরি থেকে  অব্যহতি প্রদান করে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১০ জুলাই ২০১১ বিসিকের সাথে ৯৯ বছরের জন্য ৬৭, ৬৮ ও ৬৯ প্লটের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় ফরচুন সুজ লিমিটেড। এরপর  ০৭ সেপ্টম্বর ২০১১ তে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করে কোম্পানিটি। উৎপাদন শুরুর প্রথম বছর থেকেই কোম্পানিটি মুনাফা দেখালেও শ্রমিকদের বেতন প্রদানে তালবাহানা করছে কোম্পানিটি।

শ্রম আইন অনুযায়ী, কর্মসময় ৮ ঘন্টা হলেও ফরচুন সজুরে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের আটকে রেখে জোরপূর্বক ১০ থেকে ১২ ঘন্টা কাজ করায় এমন অভিযোগ শ্রমিকদের। অতিরিক্ত কাজের বিপরীতে শ্রমিকদের বোনাস দেওয়ার কথা থাকালেও গায়ের জোরে তা পরিশোধ করছে না কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, ২০১৫ সালে ১৬ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত বেতন ও বোনাসের দাবিতে ফ্যাক্টরির মূল ফটকে অবস্থান করে শ্রমিকরা। ওই সময় ৩৪ জন শ্রমিক অতিরিক্ত কাজের (ওভার টাইম) মজুরী দাবি করায় তাদেরকে কারাখানা থেকে বের করে দেয় কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, চলতি বছরে ২৫ থেকে ২৮ আগস্ট বকেয়া টাকা ফেরত ও পুনরায় কাজে যোগদানের আশায় ওই শ্রমিকরা কারখানার প্রধান ফটকে অবস্থান করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি মালিকপক্ষ। এতে করে কারখানায় নতুন করে শ্রমিক অসন্তোস শুরু হতে পারে বলে মনে করছে ওই কারখানায় চাকুরিরত অন্যান্য শ্রমিকরা।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে শ্রমিকরা জানান, ২০১৫ সালের ১৬ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত বোনাসের দাবিতে ফ্যাক্টরির মূল ফটকে অবস্থান করে শ্রমিকরা। এছাড়াও ১৮ মে সকাল ১০টায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিষ্ঠানটির এক শ্রমিক দেশ প্রতিক্ষণকে জানান, কোম্পানিটির মালিক পক্ষ বরিশালের প্রভাবশালী হওয়ায় তারা শ্রমিকদের সাথে অমানুষের মতো ব্যবহার করে। তিনি বলেন, বরিশাল বিসিক থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছতে নানা বিপত্তি হওয়ায় এখানে অধিকাংশ কোম্পানিই এখন বন্ধ। ২০১৫ সমাপ্ত অর্থ বছরে কোম্পানিটি ৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা মুনাফা করেছে এমন তথ্য জানানোর পর ওই ব্যক্তি বলেন, যেখানে কোম্পানিটি শ্রমিকদের বেতন প্রদানে গড়িমসি করছে সেখানে কিভাবে ৯ কোটি টাকা মুনাফা হয়।

ফরচুন সুজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) শহীদুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকদের অতিরিক্ত কাজের ঘন্টা প্রকৃত সময়ের চেয়ে বেশী লেখায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে অন্যান্য শ্রমিকদের সঙ্গে তাদেরও অতিরিক্ত কাজের সঠিক সময় হিসাব করে মজুরী দেয়া হলে তারা তা নিতে অস্বীকার করে এবং কারখানা থেকে বের হয়ে যায়। তারা ইচ্ছে করলে কাজে যোগদান করেনি বলে শহীদুল ইসলাম জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে ফরচুন সুজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকতা মো: মহিউদ্দিন মোল্লার সাথে যোগাযোগ করা হলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যান বাহিরে আছে বলে এড়িয়ে যান।

পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিশোধের সভাপতি মিজান-উর রশীদ চৌধুরী দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, যখন একটি কোম্পানি শ্রমিকদের বেতন প্রদানে টালবাহানা করে তখন বুঝতে হবে কোম্পানিটি নিজের অস্থিত্ব টিকিয়ে রাখতে লড়াই করছে।  কিন্তু ইস্যু ম্যানেজারদের যোগসাজুসে এ  কোম্পানিগুলো ব্যবসায়িক মুনাফার উল্লম্ফন দেখিয়ে বাজার থেকে অর্থ লুট করছে। কাগুজে প্রক্রিয়ায় যে ভাবে লোকসানি কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে কয়েকদিন পর এ কোম্পানিগুলোকে ওটিসিতেও খুজে পাওয়া যাবে না। চলবে ……………..

সুত্র: দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ