jongi 1শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: রাজধানীর ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ২০ জন অতিথিকে গলাকেটে হত্যা করেছে যে ৭ জন, তারা সবাই একটি স্থানীয় জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দাবি করেছেন, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে এসব হামলাকারী যুবকদের কোনো যোগাযোগ নেই। খবর এএফপির।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, হামলাকারীরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া উচ্চ শিক্ষিত তরুণ এবং ধনী পরিবারের সন্তান। এরা কেউই কখনও মাদরাসায় পড়তে যায়নি। ইসলামিক জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া আজকাল একটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এরই মধ্যে হামলাকারীদের ছবি প্রকাশ করেছে ইসলামিক স্টেটের বার্তা সংস্থা আমাক।

আইএসপিআর থেকে হামলাকারীদের মৃতদেহের যে ছবি সরবরাহ করা হচ্ছে, সেগুলোর সঙ্গে আমাকে প্রকাশিত জিহাদিদের চেহারা অনেকাংশেই মিলছে। এর আগে শুক্রবার রাতেই আমাকের বরাত দিয়ে জঙ্গি কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট সাইট ইন্টেলিজেন্স খবর দিয়েছিল, হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর হামলার দায়িত্ব নিয়েছে আইএস  এবং জিহাদিরা ২০ জনকে হত্যা করেছে।

পরে শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানের পর হলি আর্টিজানে ২০ জনেরই জবাই করা মৃতদেহ পাওয়া যায়। এমনকি কমান্ডো অভিযানের আগেই হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর ভেতরের হত্যাযজ্ঞ এবং জবাই করা মৃতদেহের ছবি প্রকাশ করা হয় সাইটে। এদের মধ্যে ১৭ জন বিদেশী, দু’জন বাংলাদেশী ও একজন ভারতীয় নাগরিক।

কমান্ডো অভিযানে ৬ জন হামলাকারী নিহত হলেও একজনকে জীবিত আটক করা হয়েছে। তাকে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দারা জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এদিকে ফেসবুকে কিছু তরুণের প্রোফাইল নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এসব প্রোফাইলের কোনো কোনোটির মালিকের সঙ্গে হামলাকারীদের চেহারার মিল পাওয়া যাচ্ছে।

jongi 2অন্তত তিনজনের প্রোফাইল ঘেঁটে দেখা গেছে, তারা ঢাকায় নামকরা ইংরেজী মাধ্যম স্কুল ও শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ গ্রহণ শেষে মালয়েশিয়ার মনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়েছিলেন।

পুলিশ এবং ইসলামিক স্টেটের বার্তাসংস্থা আমাক হামলাকারীদের যে ছবি প্রকাশ করেছে, সেসব ছবির সঙ্গে এই প্রোফাইলের মালিকদের চেহারা মিলে যাচ্ছে। অন্তত একজন প্রোফাইলের মালিকের পিতার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তার অফিসের ফোনটিও কেউ ধরেননি।

আরেকজনের প্রোফাইল রোববার ভোররাত ৩টা পর্যন্ত বহুবার শেয়ার হয় ফেসবুকে। তাদের পিতামাতা, আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবেরও ছবিও বহুবার শেয়ার হয়। এরপর থেকেই প্রোফাইলটি অকার্যকর দেখা যায়। এমনকি তার পরিবারের সদস্যদের প্রোফাইলও অকার্যকর দেখা যায়। কিন্তু এরাই গুলশানের হামলাকারীরা কিনা সেটা শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

আইনশৃংখলা বাহিনী হামলাকারীদের যে নাম প্রকাশ করেছে, তার সঙ্গে এসব প্রোফাইলধারীদের নামরে কোনো মিল নেই। এদিকে যে পাঁচ জঙ্গির ছবি প্রকাশ করা হয়েছে তাদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় তুলে ধরেছেন ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা স্কুল-কলেজ সূত্রে পরিচিতজনরা।

jongi picএই পাঁচ জঙ্গির মধ্যে একজন নিব্রাস ইসলাম নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। তার সাবেক সহপাঠীরা নিব্রাসকে শনাক্ত করে তার ছবি ও পরিচয় ফেসবুকে প্রকাশ করে দিয়েছেন।পরে লাইকও দেয়া হচ্ছে। দ্বিতীয় ব্যক্তি হচ্ছ-মীর সাবিহ মুবাশ্বের, সে স্কলাসটিকার ছাত্র।

এ লেভেল পরীক্ষার আগে গত মার্চে মুবাশ্বের নিখোঁজ হন বলে তার এক সহপাঠীর বরাত দিয়ে জানিয়েছিল।  তৃতীয়  হামলাকারী হচ্ছেন- রোহান ইমতিয়াজ, এই ছেলেও স্কলাসটিকার সাবেক ছাত্র। বাবা-মার সঙ্গে তার ছবির পাশে দেওয়া হয়েছে সাইটের ছবি, যেখানে দুই ছবির মধ্যে মিল পাওয়া যায়।

ফেসবুকে প্রকাশ হওয়া ছবির আইডিতে দেখা যায় নিহত রোহান বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল ইমতিয়াজ খান বাবুলের ছেলে।সে মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে রয়েছেন।এক বছর ধরে ছেলে নিখোঁজ ছিলো।

ছেলের ফিরে আসার আকুতি জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছিলেন বাবুলের।এ ব্যাপারে বাবুলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। হামলাকারীদের একজন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল-সানিডেলের ছাত্র রয়েছে বলে জানা গেছে।তবে তাঁর পরিচয় জানা যায়নি।

এদিকে প্রকাশিত একজন জঙ্গিকে রেস্টুরেন্ট এর শেফ এর পোশাক পরা অবস্থায় দেখা গেছে। তবে, এটা কোন জায়গার ছবি তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হামলাকালীদের তিনজন মালয়েশিয়ার মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল।তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর সদস্যদের পক্ষ থেকে তাদের বিস্তারিত পরিচয় নিশ্চিত করা হয়নি।