dse-cseশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারের বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে সর্বমহলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে। বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে টালমাতাল পরিস্থিতিতে লেনদেন শুণ্যের কোঠায় চলে আসছে। টানা কয়েক কার্যদিবস ধরে সুচকের দরপতন অব্যাহত রয়েছে। সরকারের নীতি নির্ধারকসহ সব মহলে আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করলে সফলতা আসছে না। বরং আশার বানী শুনতে শুনতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে বিনিয়োগকারীরা।

২০১৬ সালে স্থিতিশীলতার স্বপ্ন জাগিয়ে বছর শুরু হয় পুঁজিবাজারে। তবে বিনিয়োগকারীদের সেই স্বপ্ন বাস্তবে তা পূরণ হয়নি। বর্তমানে লেনদেন কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। এই সময়ে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং স্টক এক্সচেঞ্জ বেশ কিছু সংস্থারমূলক পদক্ষেপ নিলেও তার সুফল পায়নি বিনিয়োগকারীরা।

এ বছরও প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদনে হিড়িক ছিল পুঁজিবাজারে। আর্থিক প্রতিবেদন সঠিক নিয়মে না দেখে অনুমোদন দেওয়ায় সমালোচনার মুখে পরে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এমনকি অর্থমন্ত্রণালয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কে চিঠি দিয়ে আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে আরো সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেয়।

পুঁজিবাজারে গত কয়েক দিনের টানা দরপতন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও স্টেক হোল্ডারদের একসঙ্গে বিনিয়োগবিমুখ আচারণকেই দায়ী করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এতে ফায়দা নিচ্ছে একশ্রেণীর কারসাজি চক্র।

গত কয়েক মাস বাজার একটি স্বাভাবিক অবস্থানে থাকা অবস্থায় কেন টানা পতন ঘটছে এবং এ ধরনের দরপতনের নেপথ্যে কারা কলকাঠি নাড়ছে, তা খতিয়ে দেখতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে আজ সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে সূচকসহ অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মাঝে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তারা বর্তমান বাজারের এ পরিস্থিতির জন্য কারসাজি চক্রকে দায়ী করেছেন।

বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করে বলেন, বাজার একটু ভাল হতে না হতে ফের দরপতনের মুখে বাজার। এতে বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছে। এছাড়া বর্তমান বাজার কারসাজির সাথে জড়িত বলে তারা মনে করেন। এ ব্যাপারে সরকারসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থার আশু হস্তক্ষেপ জরুরি। আজ ডিএসই তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ হাউজগুলোতে ক্রয়ের চেয়ে বিক্রয়ের প্রবণতা বেশি ছিল। এমনকি সিকিউরিটিজ হাউজগুলোতে আর্থিক লেনদেনও কমেছে।

একাধিক বিনিয়োগকারী বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ে এসব কি হচ্ছে? বিনিয়োগকারীদের শোক কাটতে না কাটতে ফের শোকে আক্রান্ত। তাছাড়া পুঁজি নিয়ে দুঃচিন্তায় বিনিয়োগকারীদের দিন কাটছে। বেশ কিছুদিন ধরে টানা কারেকশনের নামে দরপতন ঘটাচ্ছে। এটা বাজারের জন্য খারাপ লক্ষণ বলে তারা মনে করেন।

অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা বলেন, বাজার কারেকশনের নামে কারসাজি খুবই দুঃখজনক। যেখানে বিনিয়োগকারীদের মূল পুঁজি ৫০% লোকসান রয়েছে। সেখানে ফের দরপতনের কারণ কি? এ ব্যাপারে বিএসইসি কঠোর নজরদারী প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, বিনিয়োগকারীদের যে মুহূর্তে হারানো আস্থা ফিরতে শুরু করছে সেই মুহূর্তে দরপতন ও অস্থিতিশীল আচরণ কোনভাবেই কাম্য নয়।

এ বিষয়ে কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জানান, বর্তমানে বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী আইসিবি, মার্চেন্ট ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ফান্ড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টগুলো এক প্রকার নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। আবার এদের মধ্যে কেউ কেউ ডে-ট্রেডারের মতো আচরণ করে সেল প্রেসার ফেলছে।

কেউ আবার সাইডলাইনে বসে আরো কমদামে শেয়ার কেনার জন্য বিনিয়োগ থেকে দূরে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বাজারকে যারা কারসাজির আশ্রয় নিয়ে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের ব্যাপারে খতিয়ে দেখে সরকারের ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে কর্মকর্তারা মনে করছেন।