শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম: সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে টানা দরপতনে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। ফলে পুঁজিবাজার নিয়ে গভীর সংকটে পড়ছে বিনিয়োগকারীরা। এ থেকে উত্তরনের উপায় কি? কেউ বলতে পারছেন না। তেমনি মুখ খুলতে পারছেন না নীতি নির্ধারকরা। শুধুই আশার বানী।

এ অবস্থার মধ্যেও টানা দরপতনে প্রতিনিয়ত পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে বেড়েই চলছে বিনিয়োগকারীদের হাহাকার। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, পুঁজি হারা বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ করা পুঁজি রক্ষায় কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না। এতে নীরবে তাদের রক্তক্ষরণ বেড়েই চলছে। পতনের ধাক্কায় মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছেন অধিকাংশ বিনিয়োগকারী।

অনেকে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না। সংসার জীবনেও অশান্তি দেখা দিয়েছে কারও কারও। বিশেষ করে মার্জিন লোনের বিনিয়োগকারীরা নি:স্ব হচ্ছে। মুলত পুঁজি হারিয়ে দিন দিন লোনের পরিমান বেড়েছে। অথচ পুঁজিবাজারের এ পতন ঠেকাতে প্রায় এক বছর ধরে চেষ্টা করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। পুঁজি হারা বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ আর সংশ্লিষ্টদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পুঁজিবাজারের জন্য নেয়া হয় একগুচ্ছ পদক্ষেপ।

কিন্তু কোনো পদক্ষেপই বাজারের পতন ঠেকাতে পারছে না। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করলেও মন্দা পুঁজিবাজারে নিরব ভুমিকা পালন করছেন। যে কারণে অনেক বিনিয়োগকারীর কাছে এখন পুঁজিবাজার আতঙ্কের জায়গায় পরিণত হয়েছে।

এদিকে দেশের পুঁজিবাজারের পতন ঠেকাতে দ্বিতীয়বারের মতো ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়া হয় গত বছরের ২৮ জুলাই। নিয়ন্ত্রণ সংস্থার বিএসইসি বিনিয়োগকারীদের পুঁজি রক্ষার্থে দ্বিতীয় দফায় ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে। কিন্তু দীর্ঘদিন এই সিদ্ধান্ত অব্যাহত থাকার কারণে নীরব রক্তক্ষরণ হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। তাছাড়া পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের ধৈর্যের পরীক্ষা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।

এদিকে আজ বিমা খাতের চমকে বড় পতন থেকে রক্ষা পেল পুঁজিবাজার। দিনভর সূচক ওঠানামা শেষে ডিএসইতে সূচক কমেছে ৯ পয়েন্ট। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক কমেছে ৩০ পয়েন্ট। সূচকের পাশাপাশি কমেছে লেনদেন হওয়া অধিকাংশ শেয়ারের দাম।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এ দিন বিমা খাতের ৫৭টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৪টির। কমেছে ৮টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫টি কোম্পানির শেয়ারের। অপরদিকে বিমা, প্রকৌশল এবং বস্ত্র খাতসহ অধিকাংশ খাতের শেয়ারের দাম কমেছে।

ডিএসইর তথ্য মতে, আজ বাজারে ৩৩৫টি প্রতিষ্ঠানের মোট ৮ কোটি ৩৫ লাখ ৬৪ হাজার ৯৩ শেয়ার ও ইউনিট ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে। এতে লেনদেন হয়েছে ৪২৫ কোটি ৫১ লাখ ৩ হাজার টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৪০ কোটি ৬৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ আগের দিনের চেয়ে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। এ দিন দাম বেড়েছে মাত্র ৭৫টি কোম্পানির শেয়ারের, বিপরীতে কমেছে ৮৯টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৭১টির।

আজ প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৯.৪৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ২৮৭.৮১ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৩.৯৫ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৪.৩২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে একহাজার ৩৬৪.০৯ পয়েন্টে এবং দুইহাজার ১৩৮.৬১ পয়েন্টে।

আজ ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৪২৫ কোটি ৫১ লাখ টাকার। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৪৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বেশি। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয়েছিল ৩৮০ কোটি ৬৬ লাখ টাকার। ডিএসইতে আজ ৩৩৫টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৭৫টির বা ২২.৩৯ শতাংশের। এছাড়া দর কমেছে ৮৯টির বা ২৬.৫৭ শতাংশের এবং শেয়ার দর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৭১টির বা ৫১.০৪ শতাংশের।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩০.৯৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৫৫৬৮.৮০ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলো মধ্যে সিএসসিএক্স ১৮.৪৮ পয়েন্ট, সিএসই-৫০ সূচক ২.৩৩ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ২১.৬৮ পয়েন্ট এবং সিএসআই ২.৯৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১ হাজার ১০০.৫৮ পয়েন্টে, এক হাজার ৩০৬.৬৯ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৩২৬.৯৯ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ১৬৬.৩৯ পয়েন্টে।

সিএসইতে আজ ১৯৬টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এদের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৪৪টির, কমেছে ৬৫টির এবং ৮৭টি কোম্পানির শেয়ার দর অপরিবর্তিত রয়েছে। আজ সিএসইতে মোট ৪ কোটি ০১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।