শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটে অবশেষে চেকে লেনদেন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যে সিদ্ধান্ত গত কয়েকদিন পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তবে ওই সিদ্ধান্ত স্থগিত করার মাধ্যমে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

গত ১১ অক্টোবর গ্রাহকের চেক ব্রোকারেজ হাউজের হিসাবে নগদায়ন বা জমা না হওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগকারী লেনদেন করতে পারবে না বলে ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে ডিএসই চিঠি পাঠায়। ওই চিঠিতে বিএসইসির সংযুক্ত করা এক নির্দেশনার বিষয়ে বলা হয়, গত ২২ সেপ্টেম্বর কমিশনার আব্দুল হালিমের সভাপতিত্বে ডিএসইর সিআরও এবং বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে কমিশনের এসআরআই বিভাগের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় গৃহিত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে ব্যবস্থা গ্রহন পূর্বক ঊভয় স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষকে আগামি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে বলা হয়। ওই গৃহিত সিদ্ধান্তের মধ্যে ১ নম্বরে ছিল, প্রতি ট্রেকহোল্ডার বিনিয়োগকারীর চেক নগদায়নের পরে ক্রয় আদেশ বাস্তবায়ন করবে। এক্ষেত্রে ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বরের নির্দেশনা পরিপালন করতে বলা হয়েছিল।

ডিএসইর প্ররোচনায় বিএসইসির এমন হঠকারি সিদ্ধান্তের খবর বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) বাজারে ছড়িয়ে পড়লে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যাতে ওইদিন ডিএসইএক্স ৭ পয়েন্ট কমে যায়। এরপর থেকে টানা পতনে রয়েছে বাজার। এই পরিস্থিতিতে বাজার মধ্যস্থতাকারীদের দাবির আলোকে চেকে লেনদেন করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে যাচ্ছে বিএসইসি।

এতে করে আপাতত শেয়ারবাজারের জন্য একটি বড় নেতিবাচক বিষয় কেটে যাবে। মুলত ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) ও বিনিয়োগকারীদের কয়েকটি সংগঠনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন এ উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী সপ্তাহের শুরুতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে বিএসইসি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মরক্কো সফররত বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, চেক নগদায়নের পর শেয়ার কেনার সিদ্ধান্তের ফলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বাজার-সংশ্লিষ্টরা এটি প্রত্যাহরের জন্য আবেদন করেছেন। বিষয়টি যৌক্তিকভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, মরক্কো থেকে ফিরে আগামী রবি বা সোমবার এ বিষয়ে ‘ন্যায়সংগত’ সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। বাজারের স্বার্থে সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সম্প্রতি বিএসইসির সার্কুলারে বলা হয়েছে, বিনিয়োকারীদের চেক নগদায়ন না হওয়া পর্যন্ত শেয়ার কেনা যাবে না। সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত বাজারে পতন অব্যাহত রয়েছে। এ সময়ে সূচকের সঙ্গে বাজারে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে।

বিএসইসি সার্কুলার জারির পর থেকে বিনিয়োগকারী, ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাজার-সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহরের আবেদন করা হয়। তারা মনে করেন, স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের জন্য এ নির্দেশনা প্রত্যাহার জরুরি।

এর আগে ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর চেক ব্রোকারেজ হাউজের হিসাবে নগদায়ন বা জমা না হওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগকারী লেনদেন করতে পারবে না বলে বিএসইসি হঠকারি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যাতে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এরফলে দুইদিনের মাথায় একই বছরের ৮ ডিসেম্বর সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত করতে বাধ্য হয় তৎকালীন কমিশন।

জানা গেছে, বিএসইসি চেক নগদায়নের বর্তমান নিয়মের পরিবর্তে নতুন ধরনের নিয়ম চালু করবে। তাতে বিনিয়োগকারী যেমন শেয়ার কিনতে পারবেন, তেমনি ব্রোকারেজ হাউস সমস্যায় পড়বে না। আর কেউ কারসাজি করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে বড় বিনিয়োকারীরা তাদের অংশগ্রহণ কমিয়ে দিয়েছে। যে জন্য ক্ষুদ্র বিনিয়োকারীরা বাজার পরিস্থিতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। বিএসইসির চেক নগদায়নের আদেশে বিনিয়োগকারীরা সিদ্ধান্তহীনতায় ও জটিলতায় ভুগছেন। সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহার হলে বাজারের পতন কমে আসত। বিনিয়োগকারীদের অস্থিরতাও কিছুটা কমত।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, বাজারে স্বাভাবিক কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে চেক নগদায়নের বিষয়। এটি প্রত্যাহার করা উচিত।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, চেকে লেনদেন বন্ধ করার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বাজারে তার কি প্রভাব পড়বে, সেটাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। অথচ দেশের শেয়ারবাজারে অধিকাংশ লেনদেনই হয় চেক জমা দিয়ে। যখন যার প্রয়োজন, সে বিনিয়োগ করে এবং চেক জমা দেয়। ফলে ব্রোকারেজ হাউজে টাকা না থাকলেও তাৎক্ষনিক বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু এইসব বিনিয়োগকারীদেরকে চেকে লেনদেন বন্ধের মাধ্যমে তাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল।