শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১৭ কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির জন্য দায়ী ম্যানিপুলেটরদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। সম্প্রতি কারসাজি চক্র এসব শেয়ারের দর কয়েক গুন মুল্য বৃদ্ধি করে মুনাফা হতিয়ে নিয়েছেন। ফলে ১৭ কোম্পানির শেয়ারের কারসাজি তথ্য পেয়েছে বিএসইসি।

কোম্পানিগুলো হলো: আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, ম্যাকসন স্পিনিং, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল, আনলিমা ইয়ার্ন ডাইং, এএফসি অ্যাগ্রো বায়োটেক, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার, নিউ লাইন ক্লোথিং, প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ওয়ান ব্যাংক, সোনালী পেপার, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, এবং ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

বিএসইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম হেরফের করে অস্বাভাবিক হারে দর বাড়ানো হয়েছে। কমিশনের তদন্ত দল প্রমাণ পেয়েছে যে, কারসাজিরা এসব শেয়ার ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বর্তমানে কমিশনের প্রয়োগকারী বিভাগ কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কাজ শুরু করছে।

কমিশনের আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এসব কোম্পানির অধিকাংশের শেয়ার কারসাজির সঙ্গে আবুল খায়ের হিরু ও তার সহযোগীরা জড়িত। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার দর নিয়ে কারসাজির দায়ে তাদের জরিমানা করা হয়েছে।

এছাড়া কিছু ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, আনলিমা ইয়ার্ন, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, এএফসি এগ্রো, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল, এবং ম্যাকসন স্পিনিং কোম্পানির অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিদের সাথে শেয়ার কারসাজির সাথে জড়িত ছিল বলে যোগ করেন তিনি ।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে, সিভিও পেট্রোকেমিক্যালের শেয়ারের দাম ২০৪ শতাংশ বেড়ে ২৬১ টাকা, ম্যাকসন স্পিনিং ৪৪০ শতাংশ থেকে ৩৪.৬ টাকা, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং ৩৮৮ শতাংশ থেকে ৪৬৪ টাকা, মনোস্পুল পেপার ৩৯৬ শতাংশ, সোনালী পেপার ৩৯৬ শতাংশ থেকে ৯৫৭ টাকা, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ৩৩৬ শতাংশ থেকে ৪২ টাকা, অঋঈ এগ্রো ১৫৩ শতাংশ থেকে ৩৭.৮ টাকা এবং নিউ লাইন ক্লোথিং ২৬৮ শতাশ থেকে ৪৭.৯ টাকা কারসাজি করে। কিন্তু বর্তমানে এসব কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করা মূল্যের চেয়ে অনেক কম হারে লেনদেন হচ্ছে। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অনেক লোকসান গুনতে হচ্ছে।

বেশ কয়েকটি ব্রোকারেজ ফার্মের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেছেন যে, বিএসইসির আধুনিক নজরদারি সফ্টওয়্যার রয়েছে। যার মাধ্যমে অস্বাভাবিক লেনদেন শনাক্ত করা যাবে। তাই এসব কারসাজির ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এবং যত তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেওয়া হবে, পুঁজিবাজারে সুশাসন তত বাড়বে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে।

একটি ব্রোকারেজ ফার্মের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বিএসইসি বেশিরভাগ ম্যানিপুলেটরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না। কখনও কখনও, তারা কেবলমাত্র ন্যূনতম পদক্ষেপ নেয়। কারসাজি এভাবে বন্ধ করা যাবে না। কিন্তু প্রতিবেশী ভারত এ ধরনের কারসাজির ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তি ও সংস্থার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়।