শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: ইউক্রেন যুদ্ধের পর ধস থেকে দেশের পুঁজিবাজার আপাতত ইউটার্ন নিয়ে উত্থানে গেছে। ব্যাপক উত্থানে হারানো পুঁজি কিছুটা হলেও ফিরে পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এই উত্থানের পেছনে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির ৩টি সিদ্ধান্ত কাজ করেছে।

প্রথমত, পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিল থেকে ১০০ কোটি টাকা জরুরি বিনিয়োগের নির্দেশ। দ্বিতীয়ত কোনো শেয়ারের দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ নির্ধারণ। তৃতীয়ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা। মুলত ২০১০ সালের মহাধসের পর থেকে এক যুগেও পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরেনি।

২০২০ সালের মে থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাপক চাঙাভাবে বিনিয়োগকারীরা বেশ লাভবান হলেও সাম্প্রতিক পতনে আবার আর্থিক খতির মুখে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। সর্বশেষ দরপতন শুরু গত ২৪ ফেব্রুয়ারি, যেদিন ইউক্রেনে সামরিক হামলা চালায় রাশিয়া। এই যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বের পুঁজিবাজারই প্রভাবিত হয়েছে। বাইরে ছিল না বাংলাদেশও। এই যুদ্ধ শুরুর পর আট দিনে বাজারে সূচক পড়ে ৩৮২ পয়েন্ট। নবম দিনে এক ঘণ্টারও কম সময়ে আরও ১৩৭ পয়েন্ট সূচক পড়ার পর ব্যবস্থা নেয় বিএসইসি।

পুঁজিবাজারের বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে আলাপকালে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম মনে করেন, বাজারে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তাতে বিএসইসির এই হস্তক্ষেপ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়েছে। কিন্তু এভাবে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল করা যাবে না। ‘একটা কথা মনে রাখতে হবে, জোড়াতালি দিয়ে পুঁজিবাজার স্বাভাবিক হয় না; স্থিতিশীলতা আসে না। বাজারকে তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘কমতে শুরু করলেই এটা-ওটা করে বাজারের পতন ঠেকানোর উদ্যোগ নেয়া হবে; আবার বাড়তে শুরু করলে নানা ধরনের কড়াকড়ি-নজরদারি করা হবে, এটা ঠিক না। বাজারে উত্থান-পতন থাকবে এটা মেনে নিয়ে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করতে হবে।’

মির্জ্জা আজিজ বলেন, ‘দুই দিন ধরে বাজার ফের বাড়ছে, বলা হচ্ছে বিএসইসি কিছু পদক্ষেপ নেয়ার কারণে বাড়ছে। কিন্তু আমার বিশ্লেষণ হচ্ছে, বাজার অনেক পড়ে গিয়েছিল, সব শেয়ারের দাম অনেক নিচে নেমে এসেছিল। এখন সবাই কম দামের শেয়ার কিনছে, তাই দাম বাড়ছে। বাজার ভালো হচ্ছে। এটাই বাজারের স্বাভাবিক নিয়ম।’

মির্জ্জা আজিজ মনে করেন, বাজারে যে সংকট, সেটি শনাক্ত করে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্ত জরুরি। সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এ কারণে মাঝেমধ্যেই বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। পুঁজিবাজারে দৈনন্দিন হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। তবে এটাও ঠিক যে আর্থিক বাজারে নানা রকম অনভিপ্রেত বা অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটতে পারে। যদি কোনো সময় বাজার অস্বাভাবিক আচরণ করে তখন বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সরকার বা সংশ্লিষ্ট সংস্থার বিএসইসি হস্তক্ষেপ করা উচিত।’

তবে কোনো কারসাজি হলে কঠোরভাবে দমন করতে হবে এটাও বলেন বিএসইসির সাবেক প্রধান। বলেন, ‘এই যে যুদ্ধের অজুহাতে কয়েক দিন বাজারে বড় পতন হলো, এতে কেউ বা কোনো মহল জড়িত ছিল কি না তা খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

মির্জ্জা আজিজও মনে করেন, সাম্প্রতিক এই দরপতনের প্রধান কারণ ছিল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্থিরতা। তিনি বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য যে ৫০ বছরের এই বাংলাদেশে একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার পাইনি। কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়াই বাজার বাড়ে; আবার পতন হয়। এই যে গত কয়েক দিন টানা পতন হলো, তাতেও কোনো যৌক্তিক কারণ ছিল না।

‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে আমাদের পুঁজিবাজারের কোনো সম্পর্ক নেই। তারপরও বাজারে পতন হলো। অযথাই একশ্রেণির বিনিয়োগকারী আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছিলেন; আর সে কারণে বিক্রির চাপে বাজারে বড় পতন হয়েছে।’

মির্জ্জা আজিজ বলেন, ‘আমাদের বিনিয়োগকারীরা অযৌক্তিক আশঙ্কায় ভোগেন। এখানকার বিনিয়োগকারীদের হুজুগে মেতে ওঠার প্রবণতা খুব বেশি। ‘অনেক ভালো কোম্পানির শেয়ার আছে এখনও, যাদের মূল্য-আয় অনুপাত (পিই রেশিও) বিনিয়োগযোগ্য। কিন্তু তারা সে পথে না গিয়ে অহেতুক উল্টাপাল্টা শেয়ার কিনে ঝুঁকির মধ্যে থাকেন।’