শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: সব আবেদনকারীর জন্য কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) শেয়ারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে সেকেন্ডারি বাজারে আরও দুই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আসবে বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আগামী এপ্রিল মাস থেকে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের আইপিও চাঁদা গ্রহণের মাধ্যমে এই পদ্ধতির প্রয়োগ হতে যাচ্ছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

সবার জন্য আইপিও শেয়ারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে ব্যক্তিশ্রেণির আবেদনকারীকে সেকেন্ডারি বাজারে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ থাকা বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে বিএসইসি। এক্ষেত্রে প্রতিটি আইপিওতে আবেদনে চাঁদার পরিমাণ ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কমিশন সূত্র জানিয়েছে, গড়ে প্রতিটি আইপিওতে প্রায় ১০ লাখ আবেদন জমা পড়ে।

বর্তমানে আইপিও আবেদনকারীর প্রায় সবারই সেকেন্ডারি বাজারে বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। এ ধরনের আবেদনকারীদের সেকেন্ডারি বাজারে ন্যূনতম বিনিয়োগ নিশ্চিত করা গেলে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগ আসবে বলে জানিয়েছেন এসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. রেজাউল করিম।

এর আগে আইপিওতে লটারি পদ্ধতি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন, যা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে। সেকেন্ডারি বাজারে ন্যূনতম বিনিয়োগের শর্ত থাকায় বিভিন্ন নামে অধিক সংখ্যক বিও হিসাব খোলার প্রবণতাও বন্ধ হবে।

এদিকে সব আবেদনকারীর জন্য আইপিও শেয়ার নিশ্চিত করতে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের কোটার পরিমাণ বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে এসইসি। ইতিমধ্যেই পাবলিক ইস্যু বিধিমালা সংশোধনের খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে, যা জনমত যাচাই শেষে চূড়ান্ত করা হবে।

সংশোধিত বিধিমালার খসড়া অনুযায়ী, স্থিরমূল্য পদ্ধতিতে আসা কোম্পানির আইপিও শেয়ারের ৬৫ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে, যা আগে ছিল ৫০ শতাংশ। আগে এনআরবিদের আইপিও কোটা ১০ শতাংশ রাখা হলেও এখন তা কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দ কোটা ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন। তবে স্থিরমূল্য পদ্ধতির আইপিওতে মিউচুয়াল ফান্ডের জন্য সংরক্ষিত কোটা ১০ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকছে।

বর্তমান বিধিমালায় বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আসা কোম্পানির শেয়ারে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫০ শতাংশ, এনআরবি ১০ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ৪০ শতাংশ করে শেয়ার বরাদ্দ থাকে। সংশোধিত খসড়ায় যোগ্য বিনিয়োগকারী ও এনআরবিদের কোটা কমিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সংরক্ষিত কোটার পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে এসইসি।

এর মধ্যে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের বর্তমান কোটা ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ, এনআরবি কোটা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে আনা হচ্ছে। বিপরীতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সংরক্ষিত কোটা ৪০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব রয়েছে সংশোধনীতে। মূলত আইপিওতে সব আবেদনকারী যাতে শেয়ার পান, তা নিশ্চিতেই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোটা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে কমিশন।

পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধনের মাধ্যমে কোম্পানিগুলো আইপিওতে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ও আইপিওতে ন্যূনতম কী পরিমাণ শেয়ার ছাড়বে, তাও নতুন করে নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে বিএসইসি। আগে স্থিরমূল্য পদ্ধতির আইপিওতে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন আইপিও-পরবর্তী অন্তত ৫০ কোটি টাকা থাকার বাধ্যবাধকতা ছিল।

এ ছাড়া কোম্পানির মোট শেয়ারের ন্যূনতম ১০ শতাংশ কিংবা ৩০ কোটি টাকার মধ্যে যেটা বেশি হয়, সে পরিমাণের শেয়ার ছাড়ার বিধান ছিল। আর বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আগে ন্যূনতম ৭৫ কোটি টাকার শেয়ার ছাড়তে হতো।

সংশোধনীর খসড়ায় তা পরিবর্তন করে স্থিরমূল্য ও বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আসা কোম্পানির ক্ষেত্রে আইপিও-পরবর্তী যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৭৫ কোটি টাকা পর্যন্ত উন্নীত হবে, সেসব কোম্পানির ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে। এ ছাড়া আইপিও-পরবর্তীতে যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৭৫ কোটি টাকা থেকে ১৫০ কোটি টাকা হবে, সেসব কোম্পানিকে পরিশোধিত মূলধনের অন্তত ২০ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে। আর আইপিও-পরবর্তীতে যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১৫০ কোটি টাকার বেশি হবে, আইপিওতে সেসব কোম্পানিকে অন্তত ১০ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে।

বর্তমানে গড়ে প্রায় ১০ লাখ বিনিয়োগকারী আইপিও আবেদন করে থাকেন। এর ফলে আইপিও-পরবর্তী যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ন্যূনতম ৭৫ কোটি টাকা পর্যন্ত উন্নীত হবে, সেসব কোম্পানির অন্তত ২২টি করে শেয়ার পাবেন আবেদনকারীরা।

খসড়া অনুযায়ী, কোনো কোম্পানি আইপিও আবেদনের পূর্ববর্তী দুই বছরে বোনাস শেয়ার ইস্যু ছাড়া অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে পারবে না। তবে আইপিও অনুমোদনের পর কোম্পানিগুলো চাইলে আইপিও শেয়ারের ১৫ শতাংশ প্রাইভেট প্লেসমেন্টে বিক্রি করতে পারবে। আইপিওতে আসা কোম্পানিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ধারণ করা শেয়ার এক বছর ও প্রাইভেট প্লেসমেন্টের শেয়ার দুই বছরের লক-ইন থাকবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।

আইপিও আবেদনে কোম্পানিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে ভ্যাট চালান সংগ্রহ করে, তার সার্টিফায়েড কপি কমিশনে জমা দিতে হবে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ব্যাংক স্টেটমেন্টও জমা দিতে হবে। কমিশন প্রয়োজনে ভ্যাট চালান ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট এনবিআর ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে যাচাই করবে।