শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ারের দর কোন কারন ছাড়াই গুজবে ভর করে টানা বাড়ছে। ফলে এ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ তুলছেন বিনিয়োগকারীরা। সম্প্রতি বাজারে নানামুখী গুজব ছড়িয়ে পড়েছে ফু-ওয়াং ফুডে। এরকম নানামুখী গুজবে ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ারের দর টানা বাড়ছে। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন টানা দর বৃদ্ধির পরও কোম্পানিটির উপর কোন নজরধারী নেই নিয়ন্ত্রক সংস্থার। এমন পরিস্থিতিতে কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ন্ত্রন কাদের হাতে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিভিডেন্ড ঘোষণার আগেই কোম্পানির সাথে সম্পৃক্তরা শেয়ার হস্তগত করেছে। ফলে, ডিভিডেন্ড ঘোষণার আগেই দর বাড়তে শুরু করেছিল কোম্পানিটির। যা ইনসাইডার টেডিংয়ের আওতায় পড়ে।

এদিকে ফু-ওয়াং ফুড নিয়ে ভিত্তিহীন মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ফেসবুকে ছড়ানো হচ্ছে। তবে এসব খবরের উপর ভিত্তি করে কোম্পানিটির শেয়ারদর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। যদিও কোম্পানি কর্তৃপক্ষের দাবী, যে খবর ফেসবুকে ছড়ানো হচ্ছে তা সম্পূর্ণ গুজব।

তৃতীয় প্রান্তিক ছাড়া মূল্য সংবেদনশীল তথ্য সম্পর্কিত আর কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। শেয়ারদর বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে ডিএসই চিঠির জবাবে কোম্পানির পক্ষ থেকে এমন মন্তব্য করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

অন্যদিকে মালিকানা পরিবর্তনের নানামুখী গুজব ছড়িয়ে ফু-ওয়াং ফুড লিমিটেডের। নানা গুজব ছড়িয়ে পড়েছে যে একাধিক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এ কোম্পানির শেয়ার অধিগ্রহণে তৎপর। তার মধ্যে রয়েছে রহিমা ফুডের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার কিনে আলোচনায় আসা সিটি গ্রুপ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বিনিয়োগকারী জানান, ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার নিয়ে একটি গ্রুপ কারসাজিতে মেতে উঠছে। তা না হলে এ শেয়ারের টানা দর বাড়ার কারন কি?

তবে পরের ধনে পোদ্দারি করে চলেছেন ফু-ওয়াং ফুড লিমিটেডের কর্তা ব্যক্তিরা। নামমাত্র শেয়ারের মালিক হয়ে শত কোটি টাকার কোম্পানিতে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন তারা। মালিকানা কম থাকায় কোম্পানির পারফরম্যান্সে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। ভোক্তাদের কাছে ‘বিদেশী কোম্পানি’ হিসেবে পরিচিত ফু-ওয়াং ফুডের পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বাজারে। কিন্তু কোম্পানিটির পারফরম্যান্স বা মুনাফায় এর কোনো প্রতিফলন নেই।

অভিযোগ রয়েছে, কোম্পানির একাধিক পরিচালক ও উর্ধতন কর্মকর্তা বেনামে শেয়ার ব্যবসায় জড়িত। কোম্পানির মূল ব্যবসাকে চাঙা করার চেয়ে নিজ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে ব্যবসা করার প্রতিই তাদের ঝোঁক বেশি। কোম্পানির পারফরম্যান্স নয়, তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর ভিত্তি করে শেয়ারের দাম উঠা-নামা করে। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ অবশ্য বেনামী শেয়ার ব্যবসাসহ অনিয়মের সব অভিযোগ অস্বীকার করছে।

যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত খাদ্য-পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফু-ওয়াং ফুড লিমিটেড ১৯৯৭ সালে বাণিজ্যিক উৎপাদন করে। মাত্র তিন বছরের মাথায় ২০০০ সালে কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। পরবর্তীতে বিদেশী উদ্যোক্তারা ধীরে ধীরে তাদের শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে কোম্পানিটি থেকে সরে যায়। বিশেষ করে ২০০৯-১০ সালে চাঙা পুঁজিবাজারে চড়া দামে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে সব শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া হয়।

১৯৯৫ সালে ফু-ওয়াং সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজের মাধ্যমে দেশে ফুয়া-ওয়াং গ্রুপের যাত্রা শুরু হয়। দুই বছর পর একই উদ্যোক্তারা ফু-ওয়াং ফুড প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে গ্রুপের মূল উদ্যোক্তারা ফু-ওয়াং ফুডের মালিকানার প্রায় সবটুকু ছেড়ে দিয়ে ফু-ওয়াং সিরামিক নিয়ে আলাদা হয়ে যান। কিন্তু ভোক্তাদেরকে বিভ্রান্ত ও প্রলুব্ধ করে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার উদ্দেশ্যে ওয়েবসাইটে ফু-ওয়াং ফুডকে ফু-ওয়াং গ্রুপের প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখানো হতে থাকে। ফু-ওয়াং ফুডের নিজস্ব কোনো ওয়েব ঠিকানা নেই।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুসারে, বর্তমানে ফু-ওয়াং ফুডের সব পরিচালক সম্মিলিতভাবে মাত্র ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৭৬ দশমিক ১৬ শতাংশ শেয়ার। পরিচালকদের মধ্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ আহমেদ চৌধুরীর কাছে রয়েছে সাড়ে চার শতাংশ শেয়ার। এর বাইরে কোম্পানির কোনো পরিচালকের কাছে এক শতাংশ শেয়ারও নেই।

কোম্পানির মূল উদ্যোক্তা হো চিন হোয়া’র কাছে আছে শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ শেয়ারে। দুই শেয়ারহোল্ডার-পরিচালক কামাল কান্তি মন্ডল ও বিপ্লব চক্রবর্তীর কাছে আছে যথাক্রমে শূন্য দশমিক ০০৫ ও শূন্য দশমিক ০৩৪ শতাংশ শেয়ার। কোম্পানিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক ক্রিকেটার নাইমুর রহমান দুর্জয় এমপি। তবে তিনি অনেকটা আলঙ্কারিকভাবেই আছেন। কোম্পানি পরিচালনায় তার তেমন কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

জানা গেছে, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকও তেমন সক্রিয় নন। মূলত কোম্পানি সচিব আব্দুল হালিম ঠাকুরই ফু-ওয়াং ফুড পরিচালনা করেন। অভিযোগ আছে, ফু-ওয়াং ফুডের একাধিক পরিচালক ও উর্ধতন কর্মকর্তা বেনামে শেয়ার ব্যবসা করেন। তাদের ইচ্ছা ও প্রয়োজনের আলোকে তৈরি হয় আর্থিক প্রতিবেদন। আর এ কারণেই কোম্পানিটির মুনাফায় কোনো ধারাবাহিকতা নেই।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে ফু-ওয়াং ফুডের কোম্পানি সচিব আব্দুল হালিম ঠাকুর সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।