শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা:  যেকোন শেয়ারের দর অস্বাভাবিক হারে বাড়লেই কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কাছে এর কারণ জানতে চায় স্টক এক্সচেঞ্জগুলো। যা সত্যিই প্রসংশনীয়। কেননা কোন কোম্পানির শেয়ার দর কারণ ছাড়া অস্বাভাবিক হারে বাড়লে সেখানে কারসাজির সম্ভাবনা থাকে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ ঝুঁকি বহুলাংশে বেড়ে যায়।

তাই বাজারের নীতি-নির্ধারক হিসেবে এর কারণ খতিয়ে দেখা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নৈতিক দায়িত্ব্য। কিন্তু একটি কোম্পানির শেয়ার দর বাড়লেই যে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তা কিন্তু নয়। কারণ ছাড়া কোন কোম্পানির শেয়ার দর কমলেও বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।

তবে এক্ষেত্রে বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জগুলোকে তেমন কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। অথচ সেখানেও কারসাজির সম্ভাবনা থাকে। কারণ একটি গোষ্ঠি সিন্ডিকেট করে একটি কোম্পানির বৃহৎ অংশের শেয়ার নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে নেয়। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ওই শেয়ারকে ঘিরে চাহিদার সৃষ্টি হয়। কিন্তু চাহিদা ও যোগানের মধ্যে ভারসাম্য না থাকায় সেখানে সব শ্রেনীর বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়তে থাকে। তখনই ওই শেয়ারের দাম হু-হু করে বাড়তে থাকে।

এদিকে কোন শেয়ারের দর অস্বাভাবিক হারে কমলেও ডিএসই ও সিএসই’র নিস্কিৃয় ভূমিকা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগের কমতি নেই। তাদের অভিযোগ, একটি শেয়ারের দাম বাড়লে ডিএসই ও সিএসইর যে ধরণের পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়, কোন কোম্পানির শেয়ার দর কমলে তেমনটা দেখা যায় না। অথচ সেখানেও একটি চক্র নিজেদের ফায়দা হাসিলের জন্য কারসাজি করে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে সেন্ট্রাল ফার্মার শেয়ার দর নিয়েও একই অভিযোগ ওঠেছে।

কোন কারণ ছাড়াই এক মাসের ব্যবধানে ২৬ টাকা থেকে ৩৬ টাকায় ওঠে আসা, একইভাবে আরেক মাসের ব্যবধানে আগের অবস্থানে নেমে আসাকে স্বাভাবিকভাবে দেখছেন না বিনিয়োগকারীরা। মার্চের শুরুতে এ কোম্পানিতে যারা বিনিয়োগ করেছিলেন, মাত্র এক মাসের ব্যবধানে তারা পুঁজির ২৬ শতাংশ হারিয়েছেন। কিন্তু কোন কারণে বাড়লো আর কোন কারণে কমছে- এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা অন্ধকারে রয়ে গেছেন। সবমিলিয়ে এ কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিপাকে পড়েছেন তারা।

জানা গেছে, ওষুধ ও রসায়ন খাতের এ কোম্পানির টানা দরপতনে মুল পুঁজি নিয়ে দু:চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। টানা দরপতনে মুল পুঁজি হারাতে শুরু করেছেন তারা। গত এক মাসের ব্যবধানে এ কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে প্রায় ২৬ শতাংশ। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন কি কারনে সেন্ট্রাল ফার্মার শেয়ার দর টানা কমছে। আসলেই কি এখানে কোন কারসাজি হচ্ছে কি-না তা নিয়ন্ত্রক সংস্থার খতিয়ে দেখা উচিত।

বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করে বলেন, একটি মহল পরিকল্পিতভাবে সেন্ট্রাল ফার্মার শেয়ারকে অবমূল্যায়িত করে ফায়দা লুটছেন। তারা জানান, বাজারে নানা গুজব ছড়িয়ে এ শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমাচ্ছেন। আর এ সুযোগে বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে কম দামে এ কোম্পানির শেয়ার কিনে নিচ্ছে বিশেষ একটি চক্র। তাদের কেনা শেষ হলেই দাম বেড়ে যাবে এ কোম্পানির শেয়ারের। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লাভবান হবে ওই চক্রটি।

সেন্ট্রাল ফার্মার বিনিয়োগকারী মাহমুদ-উল-হাসান অভিযোগ করে বলেন, একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট প্রতিদিন সেন্ট্রাল ফার্মার শেয়ার সময়-সুযোগ বুঝে তিন চার লাখ সেল অর্ডার দেয়, আবার দিনশেষে আস্তে আস্তে ১০-১২ লাখ বাজার থেকে কিনে নেয়। এভাবে প্রতিদিন চক্রটি কারসাজির মাধ্যমে এ শেয়ারের দর কমিয়ে রাখছে। আর টানা দরপতনে এ কোম্পানির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারিয়ে আতঙ্কে শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছেন।

ডিএসই’র তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ৩ মার্চ সেন্ট্রাল ফার্মার শেয়ার সর্বোচ্চ ছিল ৩৬.১০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। আর এক মাসের ব্যবধানে এ কোম্পানির শেয়ার রোববার ২৭.৫০ টাকায় নেমে এসেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের লোকসান প্রায় ২৬ শতাংশ বেড়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মৌল ভিত্তির বিবেচনায় সেন্ট্রাল ফার্মার অবস্থান বেশ শক্ত। এখন কথা হচ্ছে মৌল ভিত্তিরই হোক আর দুর্বলই হোক হঠাৎ করে শেয়ার দর অস্বাবিক হ্রাস-বৃদ্ধি নানা সমালোচনার সৃষ্টি করে। এমনকি কারসাজিরও ইঙ্গিত করে। তাই বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে খতিয়ে দেখতে হবে তারা মনে করছেন। তাদের মতে, শুধু সেন্ট্রাল ফার্মা নয়, প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন কোম্পানির ক্ষেত্রে এমন হচ্ছে। তাই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে শুধুমাত্র দর বাড়লেই নয়, কমলেও বিষয়টিকে তদন্তের আওতায় আনা উচিত বলে মত দেন তারা।