শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: ঢাকা চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে প্রকৌশল খাতের অর্ধেকের বেশি তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। সর্বশেষ প্রকাশিত অনিরীক্ষিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এ খাতের ৫১ শতাংশ কোম্পানির ইপিএস কমেছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে আরো বেশি কোম্পানির মুনাফা নিম্নমুখী ছিল।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রকৌশল খাতে শেয়ারবাজারে ৩৩টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত আছে। এর মধ্যে অর্ধবার্ষিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক ফলাফল প্রকাশ করেছে ৩১টি কোম্পানি। বড় মূলধনিসহ ১৫টি কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। ফলাফল আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে খারাপ হয়েছে ১৬টি কোম্পানির।

এর মধ্যে চার কোম্পানির লোকসান আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে। এক বছর আগে মুনাফায় থাকলেও এ বছর প্রথমার্ধে লোকসানে পড়েছে একটি কোম্পানি। বিপরীতে আগের বছর একই সময়ে লোকসানে থাকলেও মুনাফায় ফিরেছে তিনটি কোম্পানি।

খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারখানায় গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা ও অবকাঠামো উন্নয়নের গতি কমে আসায় বেশ কয়েকটি কোম্পানির মুনাফা কমেছে। পাশাপাশি বেতন-ভাতাসহ কোম্পানির পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টিও তুলে ধরেছে তাদের কেউ কেউ।

লোকসানে থাকা সুহূদ ইন্ডাস্ট্রিজের কোম্পানি সচিব মো. আনিসুর রহমান  বলেন, বিদ্যুত্ ও গ্যাসের সমস্যার কারণে কারখানার উত্পাদন বাড়ানো যায়নি। নতুন একটি ইউনিটের কাজ সম্পন্ন হলেও বিদ্যুতের অভাবে সেখানে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। অন্যদিকে শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধিসহ পরিচালন ব্যয় বেড়েছে। সব মিলিয়েই কোম্পানির লোকসান বেড়েছে।

২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিত অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে মুনাফা হ্রাসে বা লোকসান বৃদ্ধিতে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল সরকারি কোম্পানিগুলো। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সরকারের চারটি প্রকৌশল কোম্পানির মধ্যে দুটির শেয়ারপ্রতি লোকসান আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে।

এর মধ্যে ন্যাশনাল টিউবস প্রথমার্ধে শেয়ারপ্রতি লোকসান করে ২ টাকা ৭৪ পয়সা, আগের বছরের একই সময়ে যেখানে শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৫৪ পয়সা। এটলাস বাংলাদেশের শেয়ারপ্রতি লোকসান ১ টাকা ৫০ পয়সা, যা আগের বছরের প্রথমার্ধে ছিল ৯১ পয়সা। অন্যদিকে লোকসান না দেখালেও আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় মুনাফা কমেছে রেনউইক যজ্ঞেশ্বর ও ইস্টার্ন কেবলসের। এর মধ্যে ইস্টার্ন কেবলসের ইপিএস ৪ পয়সা থেকে ৩ পয়সা ও রেনউইকের ইপিএস ১ টাকা ৫৩ পয়সা থেকে ১ টাকা ১৭ পয়সায় নেমে গেছে।

প্রথমার্ধে প্রকৌশল খাতে লোকসানে পড়া অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে কে অ্যান্ড কিউ। এক বছরের বেশি সময় ধরে উত্পাদন বন্ধ থাকা কোম্পানিটি জুলাই-ডিসেম্বর প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি লোকসান দেখিয়েছে ১ টাকা ২৯ পয়সা, আগের বছরেরও একই সময়ে লোকসানে ছিল কোম্পানিটি।

অন্যদিকে গোল্ডেন সনের অর্ধবার্ষিক শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২৭ পয়সা, আগের বছর যেখানে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ৪২ পয়সা। পাঁচ বছর ধরে ধারাবাহিক মুনাফায় থাকলেও রফতানিতে সুবিধা করতে না পারায় চলতি বছর বিপাকে পড়েছে এ কোম্পানি। এদিকে সুহূদ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারপ্রতি লোকসান ১ পয়সা থেকে বেড়ে ৮ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।

মুনাফা কমে যাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিএসআরএম লিমিটেডের অর্ধবার্ষিক ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ১ পয়সা, আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ৩ টাকা ২৯ পয়সা। বেঙ্গল উইন্ডসর থার্মোপ্লাস্টিকসের ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ২২ পয়সা, আগের বছর যা ছিল ১ টাকা ৭৬ পয়সা। আফতাব অটোমোবাইলের ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৪২ পয়সা, আগের বছর ছিল ১ টাকা ৪৬ পয়সা।

এর বাইরে মুনাফা কমে বিডি ল্যাম্পসের ইপিএস ১ টাকা ১৪ পয়সা থেকে হয়েছে ৮২ পয়সা, এ্যাপোলো ইস্পাতের ইপিএস ১ টাকা ৬৫ পয়সা থেকে ১ টাকা ৩৬ পয়সা, ইয়াকিন পলিমারের ৬৬ পয়সা থেকে ৫৮ পয়সা ও অলিম্পিক অ্যাকসেসরিজের ইপিএস ৬৭ পয়সা থেকে ৬২ পয়সায় নেমে আসে।

এদিকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কোম্পানির মুনাফা কমলেও আগের বছরের তুলনায় ভালো ফলাফল দেখিয়েছে ৪৯ শতাংশ প্রকৌশল কোম্পানি। চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধের ফলাফলে সবচেয়ে বড় চমক দেখিয়েছে ইস্পাত কোম্পানি আরএসআরএম লিমিটেড। অর্ধবার্ষিক বিক্রয় দ্বিগুণে উন্নীত হওয়ার পাশাপাশি এই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস বেড়েছে ১০৩ শতাংশ। চলতি বছরের জুলাই-ডিসেম্বর প্রান্তিকে এর ইপিএস হয় ৩ টাকা ১২ পয়সা, আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ১ টাকা ৫৪ পয়সা।

ইস্পাত খাতের অন্য কোম্পানি বিএসআরএম স্টিলসের মুনাফা বেড়েছে ২০ শতাংশ। জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয় ৩ টাকা ৬৭ পয়সা, আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ৩ টাকা ৫ পয়সা। প্রথমার্ধে ভালো করেছে বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমও (বিবিএস)। চলতি বছর কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৫৩ পয়সা, আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ১ টাকা ১৭ পয়সা।

জানতে চাইলে বিবিএস লিমিটেডের কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ মহসিন  বলেন, অর্ধবার্ষিকে সহযোগী কোম্পানি বিবিএস কেবলসের আয় যুক্ত হওয়ায় কোম্পানির মুনাফা প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। এছাড়া করপোরেট সেক্টরে তাদের মূল পণ্য প্রি ফ্যাব্রিকেটেড স্টিল বিল্ডিং স্ট্রাকচারের চাহিদাও বাড়ছে। বর্তমানে গুলশানে নাসা গ্রুপের ১৫ তলা একটি ভবনের কাজ করছে বিবিএস।

এর বাইরে আয় বৃদ্ধির তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিডি থাই অ্যালুমিনিয়ামের ইপিএস ৫৮ পয়সা থেকে ৬৪ পয়সা, ইফাদ অটোসের ২ টাকা ৬৫ পয়সা থেকে ৩ টাকা ৪ পয়সা, ন্যাশনাল পলিমারের ১ টাকা ৩৭ পয়সা থেকে ১ টাকা ৮১ পয়সা, বিডি অটোকারসের ১৩ পয়সা থেকে ১৫ পয়সা, আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের ৩৫ পয়সা থেকে ৪৫ পয়সা, রংপুর ফাউন্ড্রির ১ টাকা ৮৮ পয়সা থেকে ১ টাকা ৯৯ পয়সা ও কেডিএস অ্যাকসেসরিজের ইপিএস ১ টাকা ৮ পয়সা থেকে ১ টাকা ২৮ পয়সায় উন্নীত হয়েছে।

এছাড়া আগের বছরের একই সময়ে লোকসানে থাকলেও চলতি বছরের অর্ধবার্ষিকে মুনাফায় ফিরেছে জিকিউ বলপেন, দেশবন্ধু পলিমার ও আজিজ পাইপস। এর মধ্যে জিকিউ বলপেনের ইপিএস হয়েছে ১৭ পয়সা, যেখানে আগের বছর শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৩৫ পয়সা,

দেশবন্ধু পলিমারের ইপিএস হয় ৩৮ পয়সা, আগের বছর এর ঋণাত্মক ইপিএস ছিল ৯ পয়সা, আর আজিজ পাইপসের ইপিএস হয়েছে ৩১ পয়সা, আগের বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৭৫ পয়সা।

বণিক বার্তা