শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজার দীর্ঘ দিন ধরে নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে বিদ্যমান জটিলতা কাটিয়ে যখন বাজার স্বাভাবিক গতিতে ফিরতে শুরুতে করছে ঠিক সেই মুহুর্তে ফের কারসাজির খপ্পরে পড়েছে পুঁজিবাজার। ফলে গত কয়েক কার্যদিবস ধরে বাজারে অস্থিতিশীল আচরন করেছে। কোন সুস্থ পুঁজিবাজারে আচরন ১০৮ সুচকের দরপতন নয়। বিনিয়োগকারীরা গত কয়েক দিনের বাজারকে কারসাজি বাজারের লক্ষণ বলে মনে করছেন। তাছাড়া বিএসইসি, ডিএসই, সিএসইসি নিরব আচরন করছেন।

তাদের নিরব আচরন মেনে নিতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। ফলে ফের বাজার নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে বিনিয়োগকারীদের। তাছাড়া গত ১২ কার্যদিবসের ব্যবধানে ২ হাজার কোটি থেকে লেনদেন এসেছে সাড়ে ৮ শত কোটির ঘরে। ফলে লেনেদেন কমে যাওয়ায় দু:চিন্তায় পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

পুঁজিবাজার স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরিয়ে আনতে সরকার নানামুথী পদেক্ষেপ নিলেও অদৃশ্য শক্তির কাছে বার বার বাজার জিম্মিী হয়ে পড়েছে। কিন্তু স্বার্থান্বেসী সিন্ডিকেট চক্রের কারণে পুরো সফলতার মুখ দেখেতেছে সরকারসহ নীতি নির্ধারকরা।

২০১০ সালের ধস পরবর্তী সময়ে বাজার বারবার স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দিলেও তা স্থায়ী হয়নি। বরং এই ইঙ্গিতে যখনই সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আশায় বুক বাধেন, তখনই কারসাজির হোতারা সক্রিয় হয়ে ওঠে। এবারও তার ব্যতিক্রম কিছু নয় বলে ধারণা করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, কোন ধরনের মৌলিক পরিবর্তন ছাড়াই বাজারে সূচকের উলম্ফন এবং কয়েকদিনের ব্যবধানেই এর নিম্নগতি কারসাজিরই ইঙ্গিত করে। এ পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কমিশনের (বিএসইসি) ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

তাদের মতে, আবারো পুঁজিবাজারে অস্থিতিশীলতার আশঙ্কায় আতঙ্কিত সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। আর এজন্য বরাবরের মতো এবারো অভিযোগের তীর কারসাজি চক্রের দিকে। তারা জানান, সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীর কারসাজি থেকে কোনোভাবেই বের হতে পারছে না পুঁজিবাজার। এ কারসাজি চক্র পরিকল্পিতভাবে বাজার বিপর্যস্ত করছে।

তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দাবি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সংস্থাটি সোচ্চার। কিন্তু বাস্তবে এ বাজার সিন্ডিকেটমুক্ত হয়নি। তাই ভবিষ্যতে সিন্ডিকেটমুক্ত বাজার উপহার দিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আরো সোচ্চার হতে হবে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

দীর্ঘ অস্থিরতা কাটিয়ে দেশের পুঁজিবাজার ধীরে ধীরে কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলেও এখনো আস্থা সংকট পুরোপুরি কাটেনি। সিন্ডিকেট চক্রের অনৈতিক কার্যক্রম নিয়ে নানা সংশয়ে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

ইতিপূর্বে বাজার কারসাজিকারীরা অনৈতিক কর্মকান্ড করেও শাস্তি না পাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা বাজারের উপর এখনো পুরোপুরি আস্থা পাচ্ছেন না। এছাড়া বর্তমান বাজারে সিন্ডিকেট চক্রের অবাধ পদচারণা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আরো ভাবিয়ে তুলেছে। যে কারণে অনেকে এখনো নিজের পকেটকে নিরাপদ মনে করছেন বলে জানা গেছে।

এছাড়া কিছু অসৎ পুঁজিপতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা লেনদেনের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যে কারনে গত সাড়ে ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে নানা পদক্ষেপ গ্রহন করেও বাজারকে স্থিতিশীল করা যায়নি।

একটি চক্র খুব সহজেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শেয়ারের দর নিয়ন্ত্রন করে চলেছে। আর লেনদেন করতে না পারা বিনিয়োগকারীরা বসে বসে তাদের হাতে থাকা শেয়ারের দর কমতে দেখছে। সিন্ডিকেট চক্রটি কি অপ্রতিরোধ্য, এমন প্রশ্ন এখন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।

ফলে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে উভয় পুঁজিবাজারের সূচক পতনের বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে বলে মনে করছেন বাজারর সংশ্লিষ্টরা। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন কোন কারনে বাজার প্রতিনিয়ত দরপতন হচ্ছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। বরং অদৃশ্য শক্তিতে ঘুরপাত খাচ্ছে পুঁজিবাজার।

র‌্যাপিড সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী আবুল কাশেম বলেন, ২০১০ সালের ধসের রেশ এখনও কাটেনি তার। সেজন্য আগের পোর্টফোলিও সমন্বয় করতে যাননি তিনি। জমানো চার লাখ টাকা নিয়ে কিছুদিন আগে সাজিয়ে ছিলেন নতুন পোর্টফোলিও। ভেবেছিলেন মাঝেমধ্যে কারেকশন হলেও এবার বাজারে ধস নামবে না। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে বদলে গেছে এ বিনিয়োগকারীর ধারণা। কারণ ইতোমধ্যে লোকসানে পড়েছেন তিনি। সংশোধনের বদলে ধস তার সব ভাবনাকে এলোমেলো করে দিয়েছে।

বাজার কারেকশন বা শেয়ারের দর সংশোধন হবে এটা চেয়েছিলেন বিনিয়োগকারীরা। সেজন্য তারা মানসিকভাবে প্রস্তুতও ছিলেন। কিন্তু এর বদলে পুঁজিবাজারে ধস নেমে আসবে তারা এমন ভাবতে পারেননি।

তারা অভিযোগ করেন, বাজারে আবারও খেলোয়াড়রা সক্রিয় হয়েছেন। তারাই বাজার নিয়ে খেলা করছেন। আর এ কারণেই বাজার তার স্বাভাবিক গতি হারিয়েছে। বাজারের লাগাম টেনে ধরার জন্য তারা সংশ্লিষ্টদের নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানান।

মশিউর সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী বজলুর রহমান বলেন, ‘অনেক আশা নিয়ে আবার পুঁজিবাজারে ফিরে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম এবার আমরা বাজার থেকে প্রতারিত হব না। কিন্তু এখন দেখছি ধারণা ভুল। প্রতিদিনই লোকসানের বোঝা ভারী হচ্ছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে পুঁজিবাজারে আবারও আগের মতো হয়ে যেতে পারে’ বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

আইসিবির বিনিয়োগকারী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘একটি চক্র আবারও বাজার নিয়ে কারসাজি শুরু করেছে। তারা শেয়ারের দর বাড়িয়ে বিক্রি করে দিয়ে বাজার থেকে বের হয়ে যায়। আর শেষ পর্যন্ত এর ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। ‘পুঁজিবাজারের আগের অবস্থা আর এখনের অবস্থার মধ্যে খুব একটা ফারাক নেই।’

অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী মাহাবুবুল আলম বলেন, বর্তমান বাজার নিয়ে কারসাজি চলছে। বাজার স্থিতিশীল হতে না হতে কারসাজির চক্রের নজর পড়েছে বাজারে। এছাড়া এটা কোন স্থিতিশীল বাজারের লক্ষণ নয়। যেখানে ১০০ শত উপরে দরপতন হয় সেটা স্বাভাবিক বাজারের লক্ষণ হয় কি ভাবে। বর্তমান বাজার পুরোপুরি কারসাজি চক্র নিয়ন্ত্রক করছে।