sharebazar lagoশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: বর্তমান বাজারের জন্য নতুন আরেকটি অশনি সংকেত দেখা দিয়েছে। সিকিউরিটিজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো নিজেদের দখলে গ্রাহক নেয়ার যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু করেছে তাতে বর্তমান বাজারে আরেকটি ধস নামার আশঙ্কা রয়েছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, কোম্পানির সঙ্গে আঁতাত করে আগাম নিউজ নিয়ে নিজেদের ফায়দা হাসিল করা সিকিউরিটিজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের জন্য নতুন কিছু নয়। প্রায় প্রতিটি হাউজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কোনো না কোনো কোম্পানির সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ার দরে প্রভাব বিস্তার করে কারসাজির সঙ্গে জড়িত রয়েছে খোদ সিকিউরিটিজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংক। সেই ধারাবাহিকতায় হাউজগুলো বিনিয়োগকারীদের ভালো মুনাফা করিয়ে দেবে এমন আশ্বাস দিয়ে মার্কেটিং করে যাচ্ছে।

বেশকিছু হাউজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছ থেকে জানা যায়, সিকিউরিটিজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো বর্তমান বাজারকে ঘিরে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে। মাত্রাতিরিক্ত মার্জিন লোন, লেনদেনের কমিশন কমিয়ে দেয়া ইত্যাদি প্রস্তাবের মাধ্যমে  গ্রাহক আকৃষ্ট করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এমনও কিছু সিকিউরিটিজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংক রয়েছে যারা গ্রাহকদের নিশ্চিত মুনাফার লোভ দেখিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়েছে। আর এগুলো বাজারের জন্য অশনি সংকেত বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

এ ব্যাপারে বিএসইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, কোনো সিকিউরিটিজ হাউজ বা মার্চেন্ট ব্যাংকের আইন অমান্য করে ব্যবসা করার কোনো সুযোগ নেই। যদিও ইতিমধ্যে আমাদের কাছেও খবর এসেছে যে কেউ কেউ মাত্রাতিরিক্ত লোন দিয়ে ব্যবসা করছে। বিএসইসি এ ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখছে। তিনি আরো বলেন, প্রতিটি হাউজে কি হচ্ছে তা বিএসইসি মনিটরিং করছে। কোথাও অনিয়ম দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে জানানো হচ্ছে। চিঠির মাধ্যমে তাদেরকে বিএসইসিতে হাজির হয়ে কারণ দর্শাতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিকিউরিটিজ হাউজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ প্রতিক্ষণকে জানান, দেখা গেছে আমরা বিএসইসির নিয়মানুযায়ী মার্জিন লোন দিয়ে কোনো ক্লায়েন্টকে ব্যবসা করার সুযোগ করে দিলাম কিন্তু পরবর্তীতে অন্য হাউজ তাকে বেশি মার্জিন লোন অফার করে তাদের হাউজে ক্লায়েন্ট নিয়ে যাচ্ছে। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আর ক্লায়েন্টের ওপর নির্ভর করে কমিশন কমানো বা বাড়ানোর প্রতিযোগিতার গল্পতো পুরনো।

জানা যায়, ২০১২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মার্জিন লোন নীতিমালা প্রণয়ন করে বিএসইসি। ৪ ধাপে মার্জিন লোনের অনুপাত কমিয়ে আনতে বিএসইসির নির্দেশনায় বলা হয়। এক্ষেত্রে ৩০ জুন ২০১৩ পর্যন্ত মার্জিন লোন  ১:২ নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ গ্রাহকের তহবিলের দ্বিগুণ। এছাড়া ১ জুলাই ২০১৩ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত মার্জিন লোনের অনুপাত হয় ১:১.৫। অর্থাৎ গ্রাহকের তহবিলের দেড়গুন।

১ জানুয়ারি ২০১৪ থেকে ৩০ জুন ২০১৪ পর্যন্ত মার্জিন লোনের অনুপাত দাঁড়ায় ১:১। অর্থাৎ এই সময়ে গ্রাহকের তহবিলের সমান মার্জিন লোন প্রদান করা যাবে। পরবর্তীতে ১ জুলাই ২০১৪ পর্যন্ত মার্জিন লোনের সীমা ১.০৫ নির্ধারিত হয়। অর্থাৎ সিকিউরিটিজ হাউজ ও মার্চেন ব্যাংকগুলোকে গ্রাহকের তহবিলের অর্ধেক মার্জিন লোন দিতে হবে।

কিন্তু এই নিয়ম উপেক্ষা করে অর্ধেকতো দূরের কথা দ্বিগুন পর্যন্ত মার্জিন লোন দেয়া হচ্ছে। যার একমাত্র কারণ গ্রাহক দখল ও বেশি মুনাফা উপার্জন। আর এই অনিয়ম বর্তমান পুঁজিবাজারকে হুমকির মধ্যে ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

সুত্র: দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ