gujab-lagoশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করতে নীতি-নির্ধারনী মহলের কর্তা-ব্যক্তিরা তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে সক্রিয় থাকলেও বরাবরই ব্যর্থ হয়ে আসছেন। এছাড়া বিভিন্ন গনমাধ্যম ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে বারবার গুজব সম্পর্কে সচেতন করার প্রচেষ্টা বিনিয়োগকারীদের মানসিকতা বদলাতেও সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।

আর বর্তমান বাজারে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে বাজারের গতি বিধি ও কোম্পানিগুলোর সার্বিক বিষয়াদি পর্যবেক্ষণ না করে বিনিয়োগ করলে  বিনিয়োগকারীদের লোকসানের সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পাশাপাশি ঝুঁকি এড়িয়ে মুনাফার্জনে বিনিয়োগকারীদের গুজব থেকে বেরিয়ে আসার কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে গুজবে কান না দিয়ে শেয়ারের পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। কারন ২০১০ সালের ভয়াবহ দরপতনে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা তাদের পুঁজি হারিয়েছেন। বাজারের এ পরিস্থিতিতেও তারা বিনিয়োগ করে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। কারণ বর্তমান বাজারে মৌলভিত্তির কোম্পানির বদলে স্বল্পমূলধনী কোম্পানির শেয়ারের দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে।

আর এসব শেয়ারে বিনিয়োগে ঝুঁকি রয়েছে। একটি কারসাজি চক্র নানা গুজবের মাধ্যমে এ শেয়ারে বিনিয়োগের জন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করছে। আর বিনিয়োগকারীরা তাদের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে। তাদের মতে, পুঁজিবাজারের চলমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে গুজবে কান না দিয়ে কোম্পানিগুলোর সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে।

বাজার গতি বিধির বিষয়টিও বিনিয়োগকারীদের জানার মধ্যে থাকতে হবে বলেও তারা মত দেন। তারা বলেন,  যদি বাজারের গতিবিধির পাশাপাশি কোম্পানিগুলোর সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে সাধারন বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করেন, তাহলে খুব বেশি মুনাফা না হলেও তাদেরকে লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে না।

তারা আরো বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর অনেক চেষ্টার পরও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সঠিকভাবে বিনিয়োগে ফেরানো সম্ভব হয়নি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাজারের অবস্থা দেখে বিনিয়োগ করার প্রবণতা রয়েছে। দীর্ঘদিন পর পর বাজারে সামান্য উত্থান হলে হুমড়ি খেয়ে শেয়ার বিক্রির প্রবণতার কারণেই মুলত: বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না।

পাশাপাশি শেয়ার কেনার ক্ষেত্রেও তারা বেছে নিয়েছে ভিন্ন পথ। অনেক সময় ধরে অল্প অল্প করে শেয়ার কেনার কারণে সার্বিক বাজার দরে তেমন প্রভাব পড়ে না। কিন্তু বিক্রির ক্ষেত্রে চাপটা বেশি হওয়ার কারণে তা বাজারে প্রভাব ফেলে বলে তারা মনে করেন।

তারা আরো বলেন, পুঁজিপতি বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা মূলধনের সমৃদ্ধির কারণে কোম্পানির শেয়ারের দর নিয়ন্ত্রনে সক্ষম। তাই দীর্ঘদিন মন্দা বাজারে শেয়ার কেনার পর সে শেয়ারের দর বাড়ানো হচ্ছে না তা বলা কঠিন। কারণ নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য তারাই শেয়ারের দর বাড়িয়ে বা কমিয়ে থাকতে পারে। কাজেই বিেিয়াগের পূর্বে বাজারের গতিবিধি ও কোম্পানিগুলোর সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষনের পরামর্শ দেন তারা।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সাবেক প্রেসিডেন্ট ফখর উদ্দীন আলী আহমেদ বলেন, বর্তমান বাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা অনেকটা অসহায়। পুঁজি আটকে থাকার কারণে অনেক বিনিয়োগকারী এখনো লেনদেনের সাহস পাচ্ছেন না। এ সুযোগে যাদের সক্ষমতা বেশি তারা ফায়দা লুটে নিচ্ছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারী বা বাজারের ক্ষতি হলেও তারা মুনাফা করতে পারছে।

তাই ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়ে না ভাবলেও তাদের চলবে। যে কারণে বিনিয়োগের যে বিষয়গুলোতে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন তা না করে দর ওঠানামাই যদি পর্যবেক্ষণের মূল বিষয় হয় তবে তা বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

তিনি আরো বলেন, বাজারের স্বল্পমূলধনী কোম্পানির অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি ও কারসাজিরোধে সার্ভিল্যান্স বিভাগকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যদি গুজবে কান দেয়া বন্ধ না করে তাহলে বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে না। কাজেই গুজবে কান না দিয়ে কোম্পানিগুলোর সার্বিক অবস্থান পর্যালোচনা করে বিনিয়োগের পরামর্শ দেন তিনি। সুত্র: দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ, দেশ প্রতিক্ষণ ডটকম