beach hatcharyআমীনুল ইসলাম, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানী বিচ হ্যাচারি লিমিটেডের শেয়ার নিয়ে কারসাজির আশঙ্কা করেছেন বিনিয়োগকারীরা। এ কোম্পানির শেয়ার দর কোন কারন ছাড়াই লাগামহীন ভাবে বাড়ছে। তবে উৎপাদন টানা চার মাস ধরে বন্ধ থাকার পরও কি কারনে বাড়ছে এ ব্যাপারে কোম্পানির কর্তপক্ষ কিছুই জানে না।

তবে একটি সিন্ডিকেট চক্র কারসাজি করে এ কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়াচ্ছে বলে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন। বিনিয়োগকারীদের এ কোম্পানির শেয়ার বুঝে শুনে কেনা উচিত বলে তারা মনে করেন। বিচ হ্যাচারি লিমিটেডের উৎপাদন টানা চার মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। আরো চার মাস বন্ধ থাকবে কোম্পানিটির উৎপাদন। এ তথ্য কোম্পানি থেকে বিনিয়োগকারীদের জানানোর পরও বাড়ছে বিচ হ্যাচারির শেয়ারদর। তবে শেয়ারদর বাড়ার কারণ জানেন না কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

bich hacari

 

 

কোম্পানির কর্মকর্তারা আরো জানান, বর্তমান হ্যাচারিতে স্থাপনা পুনর্র্নিমাণ করতে চাইলে কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা দরকার হবে। অন্যদিকে নতুন জমি কিনে সেখানে অবকাঠামো নির্মাণ করে হ্যাচারি গড়ে তুলতে সব মিলিয়ে ৩০ কোটি টাকা লাগবে। কোম্পানির সে পরিমাণ সম্পদ নেই। অবশ্য হ্যাচারির অবশিষ্ট জমি বিক্রি করে কিছু টাকা পাওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রেও নতুন হ্যাচারিতে উত্পাদন করতে গেলে আরো মূলধন প্রয়োজন হবে | ২০১৪ সালে কোম্পানিটি রাইট শেয়ার ইস্যুর প্রস্তাব দিলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা তা প্রত্যাখ্যান করে। এদিকে সম্প্রতি একাধিক ব্যাংকের সাহায্য চাওয়া হলেও কোম্পানির সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এগিয়ে আসেনি কোনো ব্যাংক।

এ প্রসঙ্গে বিচ হ্যাচারির কোম্পানি সচিব নূরুল ইসলাম বলেন, যে অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাওয়া যাবে, তা দিয়ে উত্পাদন শুরু করা কঠিন হবে। কোনো ব্যাংকও এগিয়ে আসছে না। এদিকে উত্পাদন শুরুর জন্য কোন প্রক্রিয়া অবলম্বন করা যাবে, সে বিষয়েও দ্বিধায় আছেন উদ্যোক্তারা। সব মিলিয়ে কবে উত্পাদন শুরু করা যাবে তা বলতে পারছি না।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ থাকার বিষয়টি কোম্পানি কর্তৃপক্ষই স্টক এক্সচেঞ্জকে জানিয়েছে। গত এপ্রিল মাসেই এ সংক্রান্ত নোটিশ দিয়েছে কোম্পানি। ডিএসইর তথ্যে দেখা গেছে, গেল ২৫ এপ্রিল ডিএসইতে কোম্পানিটির উত্পাদন বন্ধ থাকার বিষয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

কবে নাগাদ কোম্পানিটি উত্পাদনে আসতে পারে সে বিষয়েও কিছু বলা হয়নি। অথচ গত দুই কর্মদিবসে ডিএসইএতে শেয়ারটির দর ১৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেড়েছে। সর্বশেষ কার্যদিবসে কোম্পানির মোট ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ৪৪০টি শেয়ার লেনদেন হয়।

তালিকাভুক্ত এ কোম্পানিটি চিংড়ির পোনা উত্পাদন ও বিপণন করে। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার মহেশখালীপাড়া এলাকায় ৯ দশমিক ২ একর জমির ওপর তাদের হ্যাচারি। কিন্তু গত এপ্রিল মাসে মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের জন্য টেকনাফে বিচ হ্যাচারি লিমিটেডের কিছু জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। এতে হ্যাচারির মূল স্থাপনা ভাঙ্গা পড়ায় উত্পাদন কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের তালিকাভুক্ত এ  কোম্পানিটি।

জানা গেছে, গত বছরের আগস্টে মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের জন্য স্থানীয় জেলা প্রশাসন বিচ হ্যাচারির জমির কিছু অংশ অধিগ্রহণের নোটিস দেয়। এতে হ্যাচারির উত্পাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে মর্মে ভূমি ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে তা বন্ধের আবেদন জানায় কোম্পানি, যা গৃহীত হয়নি। পরে মেরিন ড্রাইভ নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান রিজার্ভার ট্যাংক, ইউভি হাউজ, ওয়াটার পাম্পহাউজ, ওভারহেড ট্যাংকসহ হ্যাচারির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থাপনা উচ্ছেদ করে। এতে কোম্পানিটি উত্পাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।

এদিকে চলতি বছরের এপ্রিল থেকেই কোম্পানিটির চিংড়ির পোনা উৎপাদন ও বিপণন বন্ধ রয়েছে। আর এ অবস্থা চলতি বছরজুড়েই থাকবে বলে শেয়ার বিজ্কে জানিয়েছেন কোম্পানি সচিব নুরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘রিজার্ভ ট্যাংকার বন্ধ থাকার কারণে বর্তমানে আমাদের কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এ বছর আর চালু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সাধারণত জানুয়ারি-জুন আমাদের উৎপাদন মৌসুম।’ তবে আগামী বছরের শুরুতে কারখানা আবার চালু হবে এমন দাবি করেন তিনি।

কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার মহেশখালীপাড়া এলাকায় নয় দশমিক দুই একর জমির ওপর কোম্পানির হ্যাচারি। কোম্পানিটি চিংড়ির পোনা উৎপাদন ও বিপণন করে। ১৯৯৭ সাল থেকে টেকনাফ উপজেলার মহেশখালীপাড়া এলাকায় বার্ষিক ৬০০ মিলিয়ন পোনা উৎপাদনক্ষম হ্যাচারিতে গড়ে বার্ষিক ৩০০-৩৫০ মিলিয়ন পোনা উৎপাদন ও বিপণন করে আসছে কোম্পানিটি।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুই কার্যদিবস আগে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের বিচ হ্যাচারির শেয়ারদর ছিল নয় টাকা ৭০ পয়সা। রোববার দিনশেষে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়ে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৬০ টাকায়। আর এ দিন কোম্পানিটির লেনদেন হয় ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ৪৪০টি শেয়ার। লেনদেন শেষে গেইনার তালিকার শীর্ষ স্থানে ওঠে আসে কোম্পানিটি।

দীর্ঘদিন উৎপাদন বন্ধ থাকার তথ্য জানার পরও কোম্পানিটির শেয়ারদর বৃদ্ধির বিষয়টি এখন পুঁজিবাজারের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। কোম্পানিটি বন্ধ থাকার তথ্য জেনেও একশ্রেণির বিনিয়োগকারী কেন এর শেয়ার কিনছেন তা বাজার সংশ্লিষ্টদের কাছে বোধগম্য নয়।

শেয়ার দর বাড়ার বিষয়ে নুরুল ইসলাম বলেন, ‘কে বা কারা শেয়ারের দর বাড়াচ্ছে আমরা বলতে পারবো না। তবে এটুকু বলতে পারি- আমাদের কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।’

২০০২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই- সেপ্টেম্বর) শেয়ারপ্রতি কোম্পানিটির লোকসান ছিল ১১ পয়সা। আর একই বছরের নয় মাসে (জানুয়ারি- সেপ্টেম্বর) কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি লোকসান করেছিল ৪৭ পয়সা। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের পাঁচ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি।