pabanaশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পাবনায় এবার এক সেবাশ্রমের কর্মী নিত্যরঞ্জন পান্ডেকে (৬২) নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। তিনি জেলার হেমায়েতপুরে শ্রী শ্রী অনুকুল চন্দ্র ঠাকুর সেবাশ্রমের বইয়ের দোকানের কর্মী। শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে পাবনা মানসিক হাসপাতালের ১ নম্বর গেট এলাকায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডের অংশ হিসেবে এ হত্যা করা হতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

নাটোর ও পাবনায় পাদ্রি, পুরোহিত হত্যা এবং চট্টগ্রামে পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হত্যার পর জঙ্গিবিরোধী ‘সাঁড়াশি অভিযান’ শুরুর প্রথম দিনেই পাবনার হেমায়েতপুরে আবারও খুন হলেন সেবাশ্রমকর্মী। নিত্যরঞ্জন পান্ডে গোপালগঞ্জ সদরের আরুয়া কংশু এলাকার মৃত রসিক লাল পান্ডের ছেলে। তিনি প্রায় ৪০ বছর ধরে পাবনার ঠাকুল অনুকুল চন্দ্র আশ্রমে সেবক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল হাসান বাংলামেইলকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, প্রতিদিনের মতো আশ্রমের বইয়ের দোকানের কর্মচারী নিত্যরঞ্জন পান্ডে হাঁটতে বের হন। পাবনা মানসিক হাসপাতালের ১ নম্বর গেট অতিক্রম করার সময় পেছনে থেকে দুর্বৃত্তরা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিত্যরঞ্জনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। তবে কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে, সেটি বলতে পারেননি ওসি আব্দুল্লাহ আল হাসান।

খবর পেয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) আলমগীর কবির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেছেন, হত্যার কারণ উদঘাটনে এবং এ হত্যায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে এর মধ্যেই পুলিশ অধিকতর তদন্তে নেমেছে।  পুলিশ জানায়, নিত্যরঞ্জনের মাথায়, ঘাড়ে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা নিশ্চিত করেছে দুর্বৃত্তরা।

স্থানীয়রা জানান, নিত্যরঞ্জন দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন। সবাই তাকে ওই এলাকারই একজন বলে জানতেন। সৎসঙ্গ সেবাশ্রমে কাজ করতেন। সাদামাটা মানুষ ছিলেন। কোনো শত্রু তার ছিল না। বিভিন্ন জেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রতিক হামলার মতো নিত্যরঞ্জন হত্যার পেছনেও জঙ্গিদের হাত থাকতে পারে বলে তাদের সন্দেহ।

গত রোববার (৫ জুন) সকালে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড়ে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত ও গুলি করে পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে খুন করে দুর্বৃত্তরা। দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে।

একই দিন বাংলাদেশে উত্তরাঞ্চলের নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া পৌর এলাকার খ্রিস্টানপাড়ায় নিজের দোকানে খুন হন সুনীল গোমেজ (৬০)। সুনীল খ্রিস্টানপাড়ায় স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন। বাসার পাশেই তার দোকান। তার ভাই প্রশান্ত গোমেজ দিনাজপুরে একটি চার্চের ফাদার, যে জেলাটিতে সম্প্রতি এক খ্রিস্টান পাদ্রি আক্রান্ত হয়েছিলেন।

একদিন পরই মঙ্গলবার (৭ জুন) ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় কড়াতিপাড়া গ্রামে একজন হিন্দু পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলীকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সকাল ৯টার দিকে করাতিপাড়ার বাড়ি থেকে সাইকেলে করে কালীগঞ্জ উপজেলার একটা বাড়িতে পুজোর উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন পুরোহিত আনন্দ গোপাল। ওই সময় মহিষাডাঙ্গা গ্রামে মাঠের ভেতরে মোটরসাইকেলে করে আসা তিন যুবক ওই পুরোহিতকে বিলের মাঝখানে ফেলে গলা কেটে খুন করে চলে যায়।

বেশ কিছুদিন ধরেই লেখক, ব্লগার, প্রকাশক, ধর্মযাজক, পুরোহিত, বৌদ্ধভিক্ষু, মুয়াজ্জিনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেই চলেছে। বেশ কয়েকটি খুনের পর মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএস হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হলেও সরকার বলছে, দেশে আইএস নেই। দেশীয় জঙ্গিরাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে।

এ ছাড়া প্রতিটি খুনের পর চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির একে অপরকে দোষারোপ। সরকার হত্যাকাণ্ডগুলোকে ‘টার্গেট কিলিং’ বলে বিএনপি-জামায়াত এতে জড়িত আছে বলছে। সম্প্রতি তিন দেশ সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গুপ্তহত্যায় যে বিএনপি-জামায়াত জড়িত, তার ‘তথ্য-প্রমাণ’ সরকারের কাছে আছে।

অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য খারিজ করে দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, খুনে ক্ষমতাসীনরাই জড়িত। দেশজুড়ে হত্যাযজ্ঞ বন্ধে এবং তালিকাভুক্ত জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের ধরতে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে টানা সাত দিন সাঁড়াশি অভিযানের কথা জানিয়েছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) পুলিশ সদর দপ্তরে বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল এ কে এম শহীদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় ওই সিদ্ধান্ত হয়। পুলিশের চলমান সাঁড়াশি অভিযানের মধ্যেই শুক্রবার ভোরে নিত্যরঞ্জন পান্ডেকে কুপিয়ে হত্যা করল দুর্বৃত্তরা।