salim osmanশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: ধর্মীয় অবমাননার ‘মিথ্যে’ অভিযোগ এনে নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে প্রকাশ্যে কানে ধরে উঠবস করানোর ঘটনায় দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠলেও সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের ভূমিকার প্রশংসা করে ‘ইসলামি গান’ তৈরি করেছে ‘আল মদীনা শিল্পীগোষ্ঠী’। গত শুক্রবার (২০ মে) আল মদীনা শিল্পীগোষ্ঠীর ফেসবুক পেজে গানটি আপলোড করা হয়। ওই গানে সেলিম ওসমানকে হজরত ওমর (রা.)-এর উত্তরসূরী দাবি করা হয়েছে।

গানটিতে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের লাঞ্ছনার প্রতিবাদকারীদের তিরস্কার করা হয়েছে। প্রতিবাদকারীদের আখ্যায়িত করা হয়েছে ‘হনুমান’ হিসেবে। গানটির মাঝখানে শিল্পীকে ‘হা হা হা’ করে হাসতে শোনা যায়।

শিল্পী আসহাব উদ্দিন আল আজাদের কথা ও সুরে ‘সাবাশ সেলিম ওসমান’ নামে ওই ভিডিও গানটি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় ২৮ হাজার শ্রোতা ইতোমধ্যে গানটি শুনেছেন। ভিডিওটি ইউটিউবে আপলোড করার পর অনলাইনে ভাইরাল হয়ে যায়।

গানটির কথা

সাবাশ তুমি বীর সিপাহি

সাবাশ সেলিম ওসমান

হজরত ওমরের উত্তরসূরী

গর্বিত মায়ের সন্তান।

আল্লাহর বিরুদ্ধে কথা বলেছে

জনগণ তাকে যখন ধরেছে

তুমি হঠাৎ এসে আবার

শাস্তিস্বরূপ তারে ধরালে কান।

সাবাশ তুমি বীর সিপাহি

সাবাশ সেলিম ওসমান!

শ্যামলের অনেক ভক্ত যারা

দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কানটা ধরেছে

কীসের প্রতিবাদ করে তারা

কীসের আগুনে দীপ জ্বলেছে

হা হা হা

শ্যামলের ভক্ত এত বীরত্ব

সাথে যারা আছে তারা গণ হনুমান

সাবাশ তুমি বীর সিপাহী

সাবাশ সেলিম ওসমান!

গত ১৩ মে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি এবং শিক্ষার্থীকে মারধর করার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের কলাগাছিয়া ইউনিয়নের কল্যান্দির পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে গণপিটুনি দেয়ার পর কান ধরে উঠবস করানো হয়। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তের কথা বলা হলেও স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের উপস্থিতিতে এবং নির্দেশে এ শিক্ষককে হেনস্তা করা হয়।

এর পরই শিক্ষককে কান ধরে উঠবস করানোর প্রতিবাদে সরব হয়ে ওঠে সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুক। ‘সরি স্যার’, ‘উই আর সরি স্যার’, ‘কান ধরে হোক প্রতিবাদ’ লেখা হ্যাশট্যাগ দিয়ে এই ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী।

প্রতিবাদ জানাতে কানে ধরা অবস্থায় তোলা নিজেদের ছবিও পোস্ট করেন অনেকে। বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাঙালিরাও রাস্তায় নেমে প্রতিবাদের ঝড় তোলেন। প্রতিবাদ-বিক্ষোভ এখনও চলছে। অনেকে লেখেন, স্যার শ্যামল কান্তি ভক্ত কান ধরেননি, কান ধরেছে বাংলাদেশ।

গত ১৯ মে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্মের প্রতি কটূক্তির যে অভিযোগ করা হয়েছিল, তা তদন্ত করে পাওয়া যায়নি।’ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ ওই শিক্ষককে বরখাস্ত করলেও শিক্ষামন্ত্রী জানান, তিনি স্বপদেই বহাল থাকছেন। বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদও বাতিল করেন তিনি।

সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিবাদের মুখে তদন্ত কমিটি করে শিক্ষা অধিদপ্তর। তদন্ত কমিটি শিক্ষক শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে আনীত কটূক্তির অভিযোগ নাকচ করেছে বলে ওইদিন জানান শিক্ষামন্ত্রী।

এদিকে, রোববার (২২ মে) আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি জানিয়েছে, শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির যে অভিযোগ আনা হয়েছিল তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বৈঠক শেষে কমিটির প্রধান ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এ কথা বলেন।

একই দিন দুপুরে শ্যামল কান্তি ভক্তের চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওই সংসদ সদস্যের (সেলিম ওসমান) যদি লজ্জা থাকে তাহলে তিনি অধিবেশনে যোগ দেবেন না।’ সেলিম ওসমানকে ক্ষমা চাইতেও বলেন তিনি।

 

https://www.youtube.com/watch?feature=player_embedded&v=u5THcgRlF6o