২৪ ব্যাংক স্প্রেড নীতিমালা মানছে না
শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: বিনিয়োগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার। ব্যবসায়ীদের সিঙ্গেল ডিজিটের ঋণের সুদহার দাবির মুখে ব্যাংকগুলো ধীর গতিতে কমাচ্ছে ঋণের সুদহার। তবে ব্যাংকিংখাতে প্রচুর অলস তারল্য জমে থাকার কল্যাণে ব্যাংকগুলো একেবারে কমিয়ে এনেছে আমানতের সুদহার। ব্যাংকিং খাতের ঋণ আমানতের গড় সুদহার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ৫ শতাংশের নীচে অর্থাৎ ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশীয় পয়েন্টে রয়েছে। তবে ২৪টি ব্যাংক এখনো উচ্চ সুদে ঋণ বিতরণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ স্প্রেড সীমা মানছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২৪টি ব্যাংক তাদের আমানতের সুদহার একেবারেই কমিয়ে ফেলেছে। কিন্তু সে তুলনায় কমায়নি ঋনের সুদহার। ফলে এ ব্যাংকগুলো ঋণ আমানতের গড় সুদহার ৫ শতাংশের বেশি। কোনো কোনো ব্যাংকের আছে ১০ শতাংশের কাছাকাছি। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা আছে এটি ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার। তবে নিয়মিতভাবে বেশ কিছু ব্যাংক এ নির্দেশনা না মানলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র শুভংকর সাহা বলেন, যারা আসলে এ নিয়মটি মানতে না পারে তাদের ক্যামেলস রেটিং এর সময় এ বিষয়টি সামনে আনি। এতে তারা পিছিয়ে পড়ে। বিভিন্ন সময়ে তারা আমাদের ভর্ৎসনার স্বীকারও হয়। তবে যারা এটি মানতে পারে না তাদের বিরুদ্ধে আসলে স্ট্রিকলি কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় বা হয়েছে কি না তা এই মুহূর্তে আমার জানা নাই।
সর্বশেষ চলতি বছরের মার্চ মাসে ঋণের ক্ষেত্রে সুদহার কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আগের মাসেও যা ছিল ১০ দশমিক ৯১ শতাংশ। আর আমানতের ক্ষেত্রে এ সুদহার ৫ দশমিক ৯২ শতাংশ। ফলে ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানতের সুদহার মার্চ মাসে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা থাকলেও সরকারি, বেসরকারি ও বিদেশি ২৪ ব্যাংকের স্প্রেড এখনও ৫ শতাংশের ওপরে রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্প্রেড রয়েছে বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংকের। এরপরে রয়েছে বিদেশি খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মার্চ মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ঋণের ক্ষেত্রে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ হারে সুদ আদায় করেছে। আমানতের বিপরীতে দিয়েছে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ সুদ। স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৮৬ শতাংশীয় পয়েন্ট। বিশেষায়িত ব্যাংকের স্প্রেড সবচেয়ে কম মাত্র ২ দশমিক ২ শতাংশীয় পয়েন্ট। আমানতের বিপরীতে দিয়েছে ৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ সুদ। এই খাতের ব্যাংকগুলোর ঋণের ক্ষেত্রে ভারিত গড় সুদহার ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ দাঁড়িয়েছে।
মার্চ মাসে বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঋণের ক্ষেত্রে ১১ দশমিক ১৪ শতাংশ হারে সুদ আদায় করেছে। আমানতের বিপরীতে দিয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ সুদ। স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৯ শতাংশীয় পয়েন্ট। বিদেশি ব্যাংকগুলো আমানতের বিপরীতে ২ দশমিক ১৯ শতাংশ সুদ দিয়ে ঋণের বিপরীত আদায় করছে ৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ সুদ।
এ খাতের ব্যাংকগুলোর স্প্রেড সবচেয়ে বেশি ৭ দশমিক ৩৪ শতাংশীয় পয়েন্ট। তবে ঋণ ও আমানতের সুদের হার (স্প্রেড) ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের মধ্যে রাখার নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না ২৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংক। এর মধ্যে ১টি সরকারি, ১৭ টিই বেসরকারি ও ৬টি বিদেশি ব্যাংক।