mothitশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: চলতি ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের বাজেটে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ নির্ধারন করা হলেও তা লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল অবদুল মুহিত। দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রকল্প সাহায্য ব্যবহারের হার কমেছে। তিনি বাজেট বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা বাড়ানো এবং রাজস্ব আদায়কারী কর্তৃপক্ষকে আরো সক্রিয় হওয়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক (জুলাই-ডিসেম্বর) পর্যন্ত বাজেট বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষন সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য উপস্থাপনের শুরুতেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর সহকর্মী চার জাতীয় নেতা, ভাষা আন্দোলনের শহীদ এবং মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে আমাদের গত মেয়াদের শুরুতেই ‘রূপকল্প-২০২১’ এর লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা প্রণয়ন করেছিলাম ‘প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২১’। যার আওতায় প্রণীত হয়েছে ষষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা।

ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদ ইতোমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে এবং সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজও শুরু হয়েছে। আমি চলতি অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতাসহ প্রথম ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা মেয়াদে আমাদের আর্থ-সামাজিক অর্জনসমূহ আপনার মাধ্যমে এই মহান সংসদকে অবহিত করেছি।

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সূচকে আমরা যেসব লক্ষ্যণীয় উন্নয়ন ঘটিয়েছি তার মধ্যে সবচেয়ে প্রণিধানযোগ্য অর্জন হলো নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে আমাদের বিশ্ব স্বীকৃতি। কিন্তু আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে সামিল হওয়া। এই লক্ষ্য অর্জনে আমাদের চলতি মেয়াদে প্রণীত সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় প্রথমেই বিগত পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পাদন করতে চাই।

এর পাশাপাশি অগ্রাধিকার দিতে চাই বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও এর দক্ষতার উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প গ্রহণ, মানব সম্পদ উন্নয়ন, কর্মসৃজন, দারিদ্র ও অসমতা দূরীকরণ, সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বৃদ্ধি, পরিকল্পিত নগরায়ন এবং টেকসই ও পরিবেশ-বান্ধব নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের উপর।’

চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের সামষ্টিক অর্থনৈতিক গতি-প্রকৃতির অবস্থা তুলে ধরে মুহিত বলেন, ‘বিবিএস-এর চুড়ান্ত হিসেব মতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আমাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ, যা সমতুল্য দেশগুলোর একই সময়ের প্রবৃদ্ধির তুলনায় বেশি। চলতি অর্থবছরে আমরা প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলাম ৭ শতাংশ। এডিবি, বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘ সবাই প্রক্ষেপন করেছে যে, প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। আইএমএফ বলেছে তা হবে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। আমাদের পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাথমিক প্রতিবেদনে আমরা নিশ্চিত যে, আমাদের প্রবৃদ্ধি এই বছরে হচ্ছে ৭ শতাংশের সামান্য বেশি।’

তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের শুরুতে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগে কিছুটা স্থবিরতা দৃশ্যমান হয়েছিল কিন্তু বর্তমানে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ, মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি ঋণপত্র খোলার প্রবৃদ্ধি ও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের অন্ত:প্রবাহ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায় সেই স্থবিরতা দূরীভূত হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

এছাড়া, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক উদ্বেগের প্রশমন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি-পরিবহনসহ ভৌত অবকাঠামো খাত ও দক্ষতা উন্নয়নে আমাদের চলমান উদ্যোগ ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করবে বলেও আমি মনে করি। আমার বিশ্বাস, সরকারি খাতে বেতন বৃদ্ধি ভোগ ও বিনিয়োগ ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ উন্নত অর্থনীতির দেশসমূহে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি আমাদের রপ্তানি খাতকে সচল রাখবে। অধিকন্তু, বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা-২০১৫ কার্যকর হওয়ায় তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিক অধিকার সংরক্ষণ পরিস্থিতি ও কর্ম পরিবেশের উন্নয়নে গতিশীলতা সৃষ্টি হবে, যা একদিকে আমাদের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করবে এবং অন্যদিকে নীট রপ্তানি চ্যানেলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’

তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের প্রবাস আয় বিগত বছরের একই সময়ের তুলনায় সামান্য কমেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিগত সময়ের তুলনায় শ্রমিকদের অভিবাসন অনেকখানি বেড়েছে। আমার বিশ্বাস, এতে করে অচিরেই প্রবাস আয়ের প্রবাহে গতিশীলতা সৃষ্টি হবে।’

অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে দেশে সামষ্টিক অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য চলকসমূহের দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত অগ্রগতির একটি সংক্ষিপ্ত খতিয়ান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায়-জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন কর রাজস্ব আদায় ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, মোট সরকারি ব্যয় ৭৬ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা হতে শূণ্য দশমিক ২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ৬২২ কোটি টাকা,

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন বিগত অর্থবছরের প্রথমার্ধের ১৭ হাজার ৮ কোটি টাকা হতে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৭ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা। আইএমইডি’র তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ব্যয় হয়েছে ২২ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা, যা বার্ষিক মোট বরাদ্দের ২৩ দশমিক শূণ্য শতাংশ।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘রপ্তানি আয় বিগত অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের ১৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ১৬ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, সামগ্রিকভাবে আমদানি ঋণপত্র খোলা ১ শতাংশ হ্রাস পেলেও মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলার পরিমাণ বেড়েছে যথাক্রমে ২৯ শতাংশ ও ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। আমদানি ঋণপত্র নিষ্পত্তির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ, ডিসেম্বর ২০১৫ মাসে ব্যক্তিখাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ২ শতাংশ;

বিগত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ, প্রবাস নিয়োগের সংখ্যা ২ দশমিক ২ লাখ হতে উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি (৪৩ দশমিক ২ শতাংশ) পেয়ে ৩ দমমিক ১ লাখে দাঁড়িয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ডিসেম্বর ২০১৪ সময়ে ছিল প্রায় ২২ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার,

যা ২৩ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ডিসেম্বর ২০১৫ সময়ে প্রায় ২৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহ ৭৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে ১ হাজার ১৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি ডিসেম্বর ২০১৪ এর ৬ দশমিক ১১ শতাংশ হতে ডিসেম্বর ২০১৫ সময়ে ৬ দমমিক ১০ শতাংশে নেমে এসেছে।

চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত (জুলাই-ডিসেম্বর) বাজেট বাস্তবায়ন অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরতে গিয়ে তিনি সরকারের রাজস্ব আহরণ ও ব্যয় পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লক্ষ ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা (জিডিপি’র ১২ দশমিক ১৪ শতাংশ)।

ডিসেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত মোট রাজস্ব আহরিত হয়েছে ৭৭ হাজার ২৩০ কোটি টাকা, যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি এবং বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার ৩৭ দশমিক ১ শতাংশ। রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ না হওয়ায় রাজস্ব আদায়ের গতি বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কারণ, জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জন করতে হলে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আহরণ জরুরি।’

তিনি বলেন, ‘সাধারণত অর্থবছরের শেষদিকে রাজস্ব আদায়ের গতি বৃদ্ধি পায়। রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়া আধুনিকায়নের যে সমন্বিত উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করেছি তা চলমান রয়েছে। ভ্যাট আইন ১লা জুলাই ২০১৬ থেকে কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চলছে।

এছাড়া, কর-বহির্ভূত উৎস হতে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রযোজ্য হারসমূহ যৌক্তিকীকরণ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহকে উদ্বুদ্ধ করতে অর্থ বিভাগের পক্ষ হতে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর অনুবৃত্তিক্রমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহের আন্তরিক সহযোগিতা পেলে কর-বহির্ভুত রাজস্ব আহরণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।’

চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত সরকারি ব্যয় পরিস্থিতি তুলে ধরে মুহিত বলেন, ‘চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে মোট ব্যয়ের প্রাক্কলন ধরা হয়েছে ২ লক্ষ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা (জিডিপি’র ১৭ দশমিক ২ শতাংশ), যার মধ্যে অনুন্নয়নসহ অন্যান্য ব্যয় ১ লক্ষ ৯৮ হাজার ১০০ কোটি টাকা (জিডিপি’র ১১ দশমিক ৫ শতাংশ) এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ব্যয় ৯৭ হাজার কোটি টাকা (জিডিপি’র ৫ দশমিক ৭ শতাংশ)।

সাময়িক হিসেবে দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত মোট ব্যয় হয়েছে ৭৬ হাজার ৬২১ কোটি টাকা (মোট বরাদ্দের ২৬ শতাংশ), যার মধ্যে অনুন্নয়ন ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় ৫৯ হাজার ৫৪ কোটি টাকা (বরাদ্দের ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ) এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ব্যয় ১৭ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা (বরাদ্দের ১৮ দশমিক ১ শতাংশ)।

গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরে অনুন্নয়নসহ অন্যান্য ব্যয় ১ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য ক্রমহ্রাসমান। তেলের মূল্যের এই নিম্নমুখী প্রবণতার প্রভাবে চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বস্তিদায়ক অবস্থা বজায় থাকবে বলে আশা করা যায়।’

তিনি বলেন, ‘বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে মোট বরাদ্দের ২৩ শতাংশ (নিজস্ব অর্থায়ন প্রকল্প ব্যতীত), ব্যয়ের হিসাবে যা দাঁড়ায় ২২ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। আইএমইডি’র এই হিসাব বিবেচনায় নিলে প্রথমার্ধে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রবৃদ্ধি হলো ১ দশমিক ৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্প সাহায্য ব্যবহার হয়েছে মোট বরাদ্দের ২০ শতাংশ। বিগত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ২৭ শতাংশ।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাড়ানো এবং অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে অত্যধিক ব্যয়ের প্রবণতা হ্রাসের লক্ষ্যে পরিকল্পনা কমিশন ও বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়/বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ সমন্বিত যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা আরো জোরদার করা দরকার। প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়/বিভাগ কর্তৃক উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রাধিকার নির্ধারণ এবং নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প সমাপ্তির জন্য পর্যাপ্ত অর্থায়ন নিশ্চিত করা ছাড়াও নিয়মিত প্রকল্প পরিদর্শন ও বাস্তবায়ন অগ্রগতি পরিবীক্ষণের বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া জরুরী।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বৃহৎ ১০টি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির একটি বড় অংশ ব্যয়িত হয়। এ ১০টি বৃহৎ মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রায় ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আইএমইডি’র হিসাবে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত এ মন্ত্রণালয়গুলো ১৭ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা ব্যয় করেছে যা প্রদত্ত বরাদ্দের ২৫ দশমিক ১ শতাংশ।

কৃষিখাত হলো দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি। কৃষিখাতের সন্তোষজনক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে সরবরাহকৃত কৃষিঋণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিগত অর্থবছরে কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ১৫ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে মোট ১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্য রয়েছে, যা বিগত অর্থবছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা কৃষি ঋণ বিতরণ করা হয়। ঋণের এ প্রবাহ চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ৫৩ দশমিক ৪ শতাংশ ও গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।’

মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মূল্যস্ফীতিকে সহনীয় পর্যায়ে রেখে জনগণের ক্রয়ক্ষমতাকে সমুন্নত রাখতে সরকার সদা সচেষ্ট। এ বিষয়ে আমাদের রয়েছে বিরাট সাফল্য। বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ডিসেম্বর ২০১৪ শেষে ছিল প্রায় ৭ শতাংশ, যা ডিসেম্বর ২০১৫ শেষে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ২ শতাংশে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে আমরা মূল্যস্ফীতির বছরভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলাম ৬ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতির হার এখন লক্ষ্যমাত্রার সমান।

মূলত: খাদ্য মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাওয়ায় সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতি কমেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ডিসেম্বর ২০১৪ সময়ের ৭ দশমিক ৯ শতাংশ হতে ডিসেম্বর ২০১৫ সময়ে ৬ দমমিক ১ শতাংশে নেমে এসেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য হ্রাস, কৃষিখাতে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি ও সন্তোষজনক খাদ্য মজুদ, অনুকূল মুদ্রা সরবরাহ পরিস্থিতি এবং সর্বোপরি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশে দেশব্যাপী পণ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে বিধায় সামনের দিনগুলোতে মূল্যস্ফীতির চাপ আরো কমবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘একজন অত্যন্ত আশাবাদী মানুষ হিসেবে আমি সবসময়ই এমন এক বাংলাদেশের কথা তুলে ধরতে চাই, যা হবে সত্যিকারভাবেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা। আমরা আমাদের স্বপ্নকে শুধু কথামালার মধ্যে আবদ্ধ না রেখে প্রধানমন্ত্রী’র দূরদর্শী নেতৃত্বে ক্রমান্বয়ে বাস্তবে রূপ দিচ্ছি।

আমি আশা করি, আমাদের অর্থনীতির অন্তর্গত শক্তি, বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক অভিঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের সুচিন্তিত বাস্তবমুখী পদক্ষেপ এবং সর্বোপরি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র সুযোগ্য নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় অর্থনীতির প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি অর্জন করে রূপকল্প-২০২১ এর অভীষ্ঠ লক্ষ্যে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হবো।’ অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যে দেশের আমদানি-রপ্তানির গতিবিধিসহ অর্থনীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।