আইপিওতে ক্ষতিগ্রস্থদের কোটার মেয়াদ বাড়লো ১ বছর
শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারের বৃহত্তর স্বার্থে পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বিশেষ স্কীমের আওতায় সকল পাবলিক ইস্যুতে ২০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের মেয়াদ আগামী ১ জুলাই ২০১৬ তারিখ থেকে ৩০ জুন ২০১৭ পর্যন্ত (অর্থাৎ ১ বছর) বাড়ানো হয়েছে।
প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদনের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের ২০ শতাংশ কোটার মেয়াদ আরো এক বছর বাড়িয়েছে অর্থমন্ত্রনালয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থমন্ত্রনালয়। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়,নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা অনুযায়ি ক্ষতিগ্রস্তদের কোটার মেয়াদ ছিল ৩০ জুন ২০১৫ পর্যন্ত। কিন্তু বাজার পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা আর্থিক ক্ষতি কাটাতে না পারায় কোটার মেয়াদ আগামী ৩০ জুন ২০১৬ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।
পরবর্তীতে পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে সকল প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) ২০ শতাংশ কোটার সময়সীমা চতুর্থ দফা বাড়াতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। প্রস্তাবনায় নতুন সময়সীমা ৩০ জুন ২০১৭ পর্যন্ত বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে কমিশন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম-সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদের কাছে গত ২৮ মার্চ এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বৃহৎ স্বার্থে ও পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সকল প্রাথমিক গণপ্রস্তাব ইস্যুতে ২০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের সময়সীমা ১ জুলাই ২০১৬ থেকে বাড়িয়ে ৩০ জুন ২০১৭ পর্যন্ত করার অনুরোধ করা হলো।
এ জন্য গত বছরের ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ৫৬০তম কমিশন সভায় গণপ্রস্তাব ইস্যুতে কোটা সংরক্ষণের সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় সবার সম্মতিতে সময়সীমা বাড়ানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের আইপিওতে ২০ শতাংশ কোটা বরাদ্দ২০১২ সাল থেকে দেয়া হয়। এরপর২০১৪ সালের জুনে এ কোটার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক উভয় বিনিয়োগকারীদের দাবির মুখে কোটার মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে২০১৫ পর্যন্ত আনা হয়। পরবর্তীতে কোটার মেয়াদ ৩০ জুন ২০১৬ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এখন ক্ষতিগ্রস্তদের কোটার মেয়াদ আরো একবছর অর্থাৎ ৩০ জুন ২০১৭ পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য অর্থমন্ত্রনালয়ের কাছে সুপারিশ করে বিএসইসি।
জানা যায়,পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সরকার ২০১১ সালের ২৩ নভেম্বর প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। প্রণোদনা প্যাকেজে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বিশেষ স্কিম দেয়ার জন্য ঐ বছরের ২৭ নভেম্বর ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফায়েকুজ্জামানের নেতৃত্বে ৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়।
গঠিত কমিটি ২০১২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে বিভিন্ন সুপারিশসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ২০ শতাংশ কোটা বরাদ্দের কথা বলা হয়। এরপর ঐ বছরের ৫ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ২০ শতাংশ কোটায় আবেদন করার জন্য ১৮ মাস সময় বেঁধে দেয় (১ জুলাই ২০১২ থেকে ডিসেম্বর ২০১৩)। ৩০ এপ্রিল বিশেষ স্কিম কমিটি ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করে বিএসইসির কাছে জমা দেয়।
এর মধ্যেঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যভুক্ত ২০৪টি ব্রোকারেজ হাউসের ৭ লাখ ৩৯ হাজার ৮৮৩ জন, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সদস্যভুক্ত ১০৩টি ব্রোকারেজ হাউসের ১ লাখ ৫৪ হাজার ২৭৭ জন এবং ২৫ টি মার্চেন্ট ব্যাংকের ৩৯ হাজার ১২০ জন বিনিয়োগকারী রয়েছেন। এতে করে সর্বমোট ৯ লাখ ৩৩ হাজার ২৮০ জন ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী কোটা সুবিধার আওতায় আসেন।
২০১২ সালের ২৬ জুন মার্জিন ঋণের ৫০ শতাংশ সুদ মওকুফ এবং আইপিওতে বিনিয়োগকারীদের ২০ শতাংশ কোটাসহ বিশেষ কমিটির সুপারিশ অনুমোদন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। পরবর্তীতে ৩ জুলাই ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের লোকসান সমন্বয়ের কথা চিন্তা করে কোটা বরাদ্দের সময়সীমা আরো ৬ মাস সময় বৃদ্ধি করা হয়। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা ২০১৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে ২০ শতাংশ কোটা পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন বলে জানানো হয়। সে পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি আইপিওতে কোটা বরাদ্দ শুরু করে।