standard insস্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টসের পুনঃবীমা পলিসিতে অনিয়মের কারণে গত বছর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের লাইসেন্স বাতিল করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। তাতে বীমা ব্যবসায় অনুমোদন হারায় প্রতিষ্ঠানটি। অথচ লাইসেন্সবিহীন এ প্রতিষ্ঠানের লেনদেন যথারীতি চলছে শেয়ারবাজারে।

আইডিআরএ সদস্য জুবের আহমেদ খান এ প্রসঙ্গে জানান, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের লাইসেন্স আমরা বাতিল করেছি। এখন এই নামে বীমা খাতে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই। বিষয়টি আমরা শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকেও (বিএসইসি) জানিয়েছি। আইনগতভাবে লাইসেন্সবিহীন কোনো কোম্পানি শেয়ারবাজারে লেনদেন করতে পারে কিনা, তা দেখার দায়িত্ব বিএসইসি ও ডিএসই কর্তৃপক্ষের।

এদিকে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের ক্ষেত্রে যেটি ঘটেছে, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম। তাই শেয়ারবাজারে কোম্পানিটি লেনদেন করতে পারবে কিনা, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।

২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর রাতে গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের বহুতলবিশিষ্ট পোশাক কারখানা ভবন আগুনে পুড়ে যায়। কীভাবে আগুন লাগে আর ঠিক কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়, সে রহস্য এখনো উদ্ঘাটন হয়নি। অথচ এ ঘটনার পর যোগসাজশে বিপুল অঙ্কের টাকা তুলে নেয়ার সুযোগ দেয়ার অভিযোগ প্রমাণ হয় একই গ্রুপের মালিকানাধীন বীমা প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে।

এ অভিযোগে গত বছরের ২১ জুন থেকে তিন মাসের জন্য বীমা কোম্পানিটির লাইসেন্স স্থগিত করে আইডিআরএ। পরে কোম্পানি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলে আইডিআরএর নির্দেশনা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন আদালত। হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আবার আপিল বিভাগে যায় আইডিআরএ।

পরে চেম্বার বিচারপতি শুনানি করে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। আর বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি শেষে চেম্বার আদালতের আদেশ বহাল রেখে আইডিআরএর সিদ্ধান্তকে বৈধতা দেন আপিল বিভাগ। এতে বন্ধ হয়ে যায় স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কার্যক্রম।

স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের কোম্পানি সচিব কাওসার আলী মুন্সি এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা আইডিআরএর কাছে রিভিউ পিটিশন করেছিলাম। তারা তা বাতিল করেছে। এখন সরকারের কাছে লাইসেন্স পুনরুদ্ধারের জন্য আবেদন জানাব। এ-সংক্রান্ত প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে অসংখ্য সাধারণ বিনিয়োগকারী, বীমা গ্রাহক ও কর্মীদের ভাগ্য জড়িয়ে রয়েছে। এ কারণে সব দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, লাইসেন্সবিহীন স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের লেনদেন শেয়ারবাজারে চলবে কিনা, তা ঠিক করবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। প্রয়োজনে তারা বিএসইসির পরামর্শ নিতে পারে।

তিনি বলেন, লাইসেন্সবিহীন কোম্পানির শেয়ার লেনদেনে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি বাড়ছে। আবার প্রতিষ্ঠানটিকে ডিএসই তালিকাচ্যুত করলেও আটকে যাবে অসংখ্য সাধারণ বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ। তাই বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব নিয়ন্ত্রণ সংস্থার বসা উচিত।

ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মতিন পাটওয়ারি বলেন, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের লেনদেনের বিষয়ে এখনো ডিএসইর পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে এ বিষয়ে বিএসইসি থেকে যে নির্দেশনা দেয়া হবে, তা আমরা মেনে নেব।

এদিকে স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টসের অগ্নিবীমা পলিসিতে কয়েক দফায় অনিয়ম প্রমাণ হওয়া সত্ত্বেও স্ট্যান্ডার্ন্ড ইন্স্যুরেন্সের অগ্নিবীমার ২১৫ কোটি টাকার দাবি চূড়ান্ত করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান সাধারণ বীমা করপোরেশন (এসবিসি)। অনেকটা গোপনে চূড়ান্ত করা এ পুনঃবীমা দাবি বর্তমানে আইডিআরএর চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে।

এসবিসির মূল্যায়ন অনুযায়ী, স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টসের বীমার ২১৫ কোটি টাকা স্ট্যান্ডার্ন্ড ইন্স্যুরেন্স পুনঃবীমা করেছে এসবিসিতে। এখন এ ২১৫ কোটি টাকাই অগ্নিবীমা দাবি বাবদ দেয়া হবে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সকে। এদিকে স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টসের দাবি, তারা ৪৫০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের বীমা করেছে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সে। এক্ষেত্রে বীমা দাবির বাকি অংশ স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সকেই পরিশোধ করতে হবে।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় কোম্পানিটি। ২৯ কোটি ৫৭ লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধনের এ কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ২ কোটি ৯৫ লাখ ৭২ হাজার ১৫৭। এর মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে ৫২ দশমিক ৪০ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৪৭ দশমিক ৬০ শতাংশ শেয়ার। ডিএসইতে গতকাল এ শেয়ারের সমাপনী দর ছিল ১১ টাকা ৬০ পয়সা। সুত্র: বণিক বার্তা