facebookবাংলাদেশ ব্যাংকের হ্যাকিং (আসলে চুরি) এর ঘটনার পর থেকে অনেকেই দুশ্চিন্তায় আছেন তাদের অর্থের নিরাপত্তা নিয়ে।এমনকি পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাও এখন এই দুশ্চিন্তা করছেন যে তাদের “বিও অ্যাকাউন্ট” থেকে কি কোনভাবে টাকা হ্যাক হতে পারে কিনা।তাদের দুশ্চিন্তা লাঘবের জন্যই আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান থেকে কিছু লিখছি।কেউ যদি আরও বিশেষ কিছু জানেন তাহলে অবশ্যই শেয়ার করতে পারেন।

হ্যাকিং হচ্ছে আপনার কোন গোপনীয় তথ্য যেমন user name/password/other information ইত্যাদি অন্য কেউ জেনে নিয়ে আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন/transfer করে নিয়ে যাওয়া।

এখন দেখা যাক “বিও অ্যাকাউন্ট” এর ক্ষেত্রে এই ধরনের ঝুঁকি কতটুকু আছে –

১) আসলে “ব্যাংক অ্যাকাউন্ট” এর চেয়ে “বিও অ্যাকাউন্ট” এর টাকা হ্যাক হওয়ার সম্ভাভনা একদম অনেক কম বা নেই বললেই চলে।কারন হ্যাক করার জন্য হ্যাকারদের দরকার আপনার অ্যাকাউন্ট এ নগদ টাকা থাকা।কিন্তু আপনার “বিও অ্যাকাউন্ট” এর টাকা শেয়ার এ বিনিয়োগ করা থাকে।সুতরাং এখানে আপনার শেয়ার হ্যাক করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

২) শেয়ার on-line trading এর ক্ষেত্রে কেউ যদি আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক ও করে তবে তার সাধারনত: কোন লাভ নেই কারন সে বড়জোড় আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে আপনার পোর্টফলিও এর শেয়ার কেনা-বেচার order দিতে পারবে।তাতে হয়তো আপনার কিছু ক্ষতি হবে কিন্তু যে হ্যাক করবে তার কোন লাভ নেই কারন সে তো আর আপনার নগদ টাকা/শেয়ার তার অ্যাকাউন্ট এ নিতে পারছেনা।এই কারনে “বিও অ্যাকাউন্ট” এর ক্ষেত্রে হ্যাক করার কোন আগ্রহই হ্যাকারদের থাকেনা।

৩) আপনার “বিও অ্যাকাউন্ট” এ যদি নগদ টাকা থাকে তবুও ওই টাকা হ্যাক করা সম্ভব না কারন কোন brokerage house “বিও অ্যাকাউন্ট” এর টাকা আপনাকে on-line transfer করার সুযোগ দিবেনা।হয় আপনাকে চেক দিবে না হয় ওরা নিজেরাই electronic fund transfer করে দিবে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এ, যেখানে আপনার কোন ঝুঁকি নেই।সব দায় ওদের।আর আপনি যদি on-line trading না করেন তবে আপনার অ্যাকাউন্ট এ যে কোন প্রকার হ্যাক হওয়ার সম্ভাভনা একদম শূন্য।

৪) ভবিষ্যতে যদি কোন brokerage house “বিও অ্যাকাউন্ট” এর টাকা ব্যাংকের মতো করে আপনাকে on-line transfer করার সুযোগ দেয় তবুও আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হবার সম্ভাবনা নেই।কারন on-line transfer করার জন্য আগে beneficiary account সৃষ্টি করতে হয়,যার জন্য আপনার মোবাইল এ একটি কোড পাঠানো হয়, যে কোডটি আপনি আবার ইনপুট করলেই beneficiary account সৃষ্টি হবে।সুতরাং কেউ যদি আপনার user name/password হ্যাক করে তবুও সে তো আর আপনার মোবাইল এর কোড পাবেনা।সুতরাং আপনি সবদিক দিয়েই নিরাপদ থাকবেন।

অন্যান্য ঝুঁকিঃ

এইবার আসেন জেনে নেই আপনার “বিও অ্যাকাউন্ট” হ্যাক না হলেও আপনি অন্য কি কি বিপদে পড়তে পারেন –

* আপনি কোন brokerage house এ account খুলেছেন, ঐটার সাথে risk এর একটা সম্পর্ক থাকে।যেমন: নাম না জানা/অখ্যাত brokerage house এ account খুললে কিছু risk থাকে কারন মাঝে মাঝে হয় ওরা নিজেরা প্রতারণার সাথে জড়িত হয়ে যায় অথবা অনেক সময় brokerage house ই বন্ধ করে দিয়ে টাকা নিয়ে চম্পট দেয়।সেই ক্ষেত্রে আপনার টাকা ফেরত না পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী।

* Brokerage house এর কোন লোক আপনার স্বাক্ষর জাল করে হুবহু আপনার নামে ওই ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলে আপনার টাকা তুলে নিতে পারে।কারন একই ব্যাঙ্কে same নামে অনেক অ্যাকাউন্ট থাকতে পারে।

সতর্কতা অবলম্বনঃ

উপরের ঝুঁকিগুলো কমানোর জন্য আপনি যে যে সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন –

১) আপনার “বিও অ্যাকাউন্ট” খুলতে হবে স্বনামধন্য কোন brokerage house এ। এক্ষেত্রে bank বা financial institution এর subsidiary brokerage house গুলোতে account খোলা ভালো।কারন ওদের business reputation/solvency এর কারনে এরা আপনার টাকা নিয়ে পালিয়ে যাবেনা/প্রতারনা করবেনা।আর একদম rare case এ প্রতারনা যদি করেও তাহলে আপনি টাকা ফেরত পাবেন।

২) আরেকটা ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে, আপনি যখন brokerage house থেকে টাকা উত্তোলন করবেন তখন এটা নিশ্চিত করতে হবে যে –

* আপনাকে ওরা যে cheque এ payment করবে সেটা যেন অবশ্যই crossed cheque হয়।

* আপনি brokerage house কে বলে দিবেন যে cheque এ যেন আপনার নাম ও ব্যাংকের নামের পাশাপাশি আপনার bank account নাম্বার ও লিখে দেয়।তাহলে risk একদম zero হবে কারণ আপনার bank account name ও account number কোনো সময়ই same bank এ duplicate হবে না।আপনি ও ১০০% নিরাপদ থাকবেন।অনেক brokerage house আছে যারা শুধু cheque এর উপর আপনার নাম লিখে দেয়, account number লিখেনা।আগেই বলেছি যে সেইক্ষেত্রে কেউ প্রতারণা করতে চাইলে same ব্যাংকে আপনার নামে duplicate আরেকটা account খুলে স্বাক্ষর নকল করে টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যেতে পারে।এইজন্য স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান হলে এরা কখনোই এই ধরনের প্রতারনা করবেনা।আপনি সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবেন।

৩) Brokerage house যদি আপনার account এ চেক না দিয়ে EFT/fund transfer করে তাহলেও আপনি 100% নিরাপদ।কারণ এইক্ষেত্রে কোন ভুল করলে বা অন্য একাউন্ট এ transfer করলে এই দায়ভার ওদের।আপনার টাকা আপনি ঠিকই ফেরত পাবেন ওদের থেকে।কারণ ওদের দায়িত্বই হচ্ছে আপনার একাউন্ট এ টাকা গেল কিনা তা নিশ্চিত করা।

৪) আপনার portfolio statement সবসময় চেক করবেন।নিজে নিজে হিসাব করে দেখবেন আপনার equity, টাকা উত্তোলন, brokerage commission ও অন্যান্য চার্জ ঠিকঠাক মতো আছে কিনা।কোন সন্দেহ হলে brokerage house এ গিয়ে মিলিয়ে নিবেন।

এমন ও দেখা গিয়েছে যে, brokerage house যে হারে কেনা বেচার commission কাটার কথা তার চেয়ে অনেক বেশী হারে কাটে।যেহেতু বেশিভাগ বিনিয়োগকারী চুলচেরা হিসাব রাখেন না তাই ধরা পড়েনা।

৫) আপনার BO ID number, brokerage house এর নাম, on-line trading এর ক্ষেত্রে user name/password, কত টাকা বিনিয়োগ ইত্যাদি ভুলেও কাউকে বলবেন না।আর নিজের portfolio এর copy কখনো কাউকে পাঠাবেন না।

সবসময় সতর্কতা অবলম্বন করুন কারন টাকা আপনার, সিদ্ধান্ত আপনার।আর কথাই আছে- সাবধানের কোন মার নেই।

Salim Jahangir  সেলিম জাহাঙ্গীর, ফেইসবুক থেকে।

 এই লেখা পাঠকের একান্ত নিজস্ব মন্তব্য লেখা, এই লেখার জন্য শেয়ারবার্তা কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়।