ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার
শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা চুরির ঘটনার পর দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকে প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা বাড়াতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি সব ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পরিবর্তন করা হয়েছে ব্যাংকগুলোর গোপন পাসওয়ার্ডও। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যাংকগুলো এই সতর্কতা জারি করেছে।
এ প্রসঙ্গে এবিবি চেয়ারম্যান ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা চুরি যাওয়ার পর সব ব্যাংককে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা বাড়াতে বলা হয়েছে। যেহেতু রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনা ঘটে গেছে। সেহেতু আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের সিস্টেমগুলো টেস্ট করা উচিত, চেকিং করা উচিত। এরপর আমাদের সামনের দিকে আগানো উচিত। প্রত্যেক ব্যাংকে আন্তর্জাতিকমানের প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা জরুরি বলেও মনে করেন এবিবি’র চেয়ারম্যান।
তিনি আরো বলেন, আর যেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এখনই সতর্ক থাকতে হবেএদিকে, বিষয়টি নিয়ে সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবিবির নেতারা। বৈঠকে তথ্যপ্রযুক্তির নিরাপত্তায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্য ব্যাংকগুলো একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফজলে কবির এ বিষয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীরা গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে আগামী দিনগুলোয় তথ্যপ্রযুক্তির নিরাপত্তায় তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বৈঠক শেষে আনিস এ খান সাংবাদিকদের বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইলে আমরা সব ধরনের সহায়তা করব।
এবিবি’র সাবেক সভাপতি ও ইবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইলে এবিবি ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) নীতিগত সহায়তা দেবে। তিনি বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা বাড়াতে ইতোমধ্যে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সব ব্যাংকের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা হয়েছে। এই বিষয়ে কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক খাতে সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি ঠেকাতে ব্যাংকগুলোকে কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। এসব বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নও করতে বলা হয়েছে।
এই ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর করণীয় সম্পর্কে ১০ দফা নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সাম্প্রতিক সময়ে রিজার্ভ থেকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা চুরি ও ব্যাংকিং খাতে এটিএম বুথ পস মেশিন জালিয়াতি এবং আরও বড় ধরনের সাইবার আক্রমণের হুমকির মুখে এসব পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চলতি মাসের প্রথম দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করা হয়। এতে বলা হয়েছে, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের তত্ত্বাবধায়নে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ; পরিপূর্ণ সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি মূল্যায়ন করে তার আলোকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; প্রযুক্তিগত দুর্বলতা মূল্যায়ন করে তার আলোকে আপদকালীন পরিকল্পনা প্রণয়ন; যেকোনও সাইবার বা কারিগরি আক্রমণ মোকাবিলা করার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো যেসব সেবা দিচ্ছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, একদিকে যেমন আর্থিক ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয়, আধুনিক এবং ডিজিটাল হচ্ছে, অন্যদিকে সংগঠিত অপরাধী গোষ্ঠী অবিরত এই আর্থিক ব্যবস্থাকে উদ্দেশ্য করে অধিকতর দক্ষতায় সাইবার আক্রমণ করছে। নতুন নতুন তথ্যপ্রযুক্তিগত আক্রমণের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রস্তুতি না থাকলে সাইবার আক্রমণ বাংলাদেশের জন্য আর্থিক ক্ষতির কারণ এবং মর্যাদাহানিকর হতে পারে। বস্তুতপক্ষে সাইবার আক্রমণকারী হতে পারে কোনও ব্যক্তি, কোনো সংগঠিত গোষ্ঠী, এমনকি বিদেশি প্রতিষ্ঠান।
এতে আরও বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোর সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক সচেতনতা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ; তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে লেনদেন বিষয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে উদ্যোগ গ্রহণ; পুরো ব্যবস্থা সর্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য কার্যকর নিরাপত্তা কেন্দ্র স্থাপন; ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সনদ গ্রহণ, কার্ডের নিরাপত্তা বাড়াতে চিপ অ্যান্ড পিন-বেজড কার্ড ইস্যুকরণ এবং এককালীন পাসওয়ার্ড দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে তিন মাস পর পর সব প্যারামিটার ও কোর ডিভাইস, ওয়েব সার্ভার এবং মিশন ক্রিটিক্যাল সার্ভারের তথ্য সংগ্রহ করে তা সংরক্ষণ করার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রযুক্তিগত দুর্বলতার সুযোগে চীনা হ্যাকাররা রিজার্ভ থেকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় মঙ্গলবার গভর্নর পদ থেকে পদত্যাগ করেন ড. আতিউর রহমান। চাকরিচ্যুত করা হয় আরও দুই ডেপুটি গভর্নরকে।