সুইফটের কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই রিজার্ভ লুট
শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন্সের (সুইফট) কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ লুট হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি দায়িত্বশীল সূত্র দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ ও শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, সুইফট কোড দিয়ে সুরক্ষিত রাখা তিনটি কম্পিউটারকে হ্যাক করেই বাংলাদেশ ব্যাংকের আন্তর্জাতিক লেনদেনের তথ্য ফাঁস করে হ্যাকাররা। এই কম্পিউটার তিনটি বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘মোস্ট সিকিউরড’ কম্পিউটার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতেগোনা কয়েকজন কর্মকর্তা এই কম্পিউটারে প্রবেশ করতে পারত।
সূত্রে আরো জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকে চার শতাধিক কম্পিউটার রয়েছে। কম্পিউটারগুলো ‘ব্যাংক অফিস অব দ্য ডিলিং রুম’ শাখার ৩টি কম্পিউটারের সঙ্গে সংযুক্ত। এই তিনটি কম্পিউটার সুইফট কোডের মাধ্যমে সিকিউরড করা। অতিরিক্ত নিরাপত্তার কারণে কম্পিউটারগুলো এক্সেস করতে মোট ৬-৭টি ধাপ পার হতে হয়। এতগুলো ধাপ পেরিয়ে কীভাবে হ্যাকারদের কাছে এসব ডাটা গেল এই প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
ডিলিং রুম শাখার ওই তিনটি কম্পিউটারেই বাংলাদেশ ব্যাংকের আন্তর্জাতিক লেনদেনগুলো নিয়মিত দেখা যেত। হ্যাকাররা ওই তিনটি কম্পিউটারে নিজেদের ট্র্যাকিং সফটওয়্যার ইন্সটল করে কম্পিউটারগুলোর কার্যক্রম মনিটর করত। সুইফটের কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ছাড়া কম্পিউটারগুলোতে ওই সফটওয়্যার ইন্সটল করা প্রায় অসম্ভব। ফলে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সুইফটের যোগসাজশ রয়েছে বলে ‘প্রাথমিক ধারণা’ করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
এর আগে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেম হ্যাক করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেব থেকে ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কায় ১০ কোটি ডলার সরানো হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান পদত্যাগ করেন। অব্যহতি দেয়া হয় আরো দুই ডেপুটি গভর্নরকে। ঘটনার ৪০ দিন পর মতিঝিল থানায় একটি মামলা করা হয়। মামলার তদন্তভারের দায়িত্বে রয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি।
অসমর্থিত একটি সূত্র জানিয়েছে, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তার গাফলতি বা সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সুইফট কোড ভেঙে কীভাবে এসব তথ্য হ্যাকারদের কাছে গিয়েছে এসব জানতে সুইফটের দুদজন প্রতিনিধি একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে। ব্যাংকের কম্পিউটারগুলোতে ইতোমধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন তারা। সুইফট কয়েকদিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি প্রতিবেদন জমা দেবে। সেই প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যাংকের জড়িত কর্মকর্তাদের ‘আনুষ্ঠানিকভাবে’ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস-অর্গানাইজড ক্রাইম) মির্জা আব্দুল্লাহেল বাকী বলেন, ‘তদন্ত চলছে, এ পর্যায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটারগুলো থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সব কম্পিউটারের তথ্য সংগ্রহের পর এগুলো যাচাই-বাছাই করা হবে। এরপরই জানা যাবে কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।’