khlada jiaশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: বাংলাদেশকে সুখী সমৃদ্ধ ও আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ‘ভিশন ২০৩০’ নামে একটি রূপকল্প তুলে ধরলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। শনিবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপির ৬ষ্ঠ কাউন্সিলের উদ্বোধনী অধিবেশনে রূপকল্পের সংক্ষিপ্ত রূপ তুলে ধরে বক্তব্য দেন তিনি।

ব্ক্তব্যের শুরুতেই একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণ করেন খালেদা জিয়া। তিনি ‘মহান স্বাধীনতার ঘোষক, মুক্তিযুদ্ধের বীর অধিনায়ক, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের স্থপতি, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবতর্ক, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার, আমাদের প্রাণপ্রিয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও আদর্শের দিশারী বীর উত্তমের’ সম্বোধন করে জিয়াউর রহমানকে শ্রদ্ধা জানান।

এরপর তিনি বলেন, বিএনপির দীর্ঘ সংগ্রামের পথে যারা জীবন দিয়েছেন ও আহত হয়েছেন মিথ্যা মামলায় কারাবরণ করেছেন, সীমাহীন হয়রানির শিকার হয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, নানাভাবে ত্যাগ শিকার করেছেন- আমি তাদের প্রতিও আন্তরিক সমবেদনা ও সম্মান জ্ঞাপন করছি। তাকে আবারো দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত করায় বিএনপির সকল স্তরের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানান খালেদা জিয়া।

এরপর তিনি বলেন, জাতীয় জীবনের এখন চরম সংকট সন্ধিক্ষণে বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দেশে গণতন্ত্র নেই, জন প্রতিনিধিত্বশীল জাতীয় সংসদ নেই। সত্যিকারের বৈধ সরকার নেই। কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই। সুশাসন নেই, সুবিচার ও ন্যায় বিচার নেই। নারী সম্ভ্রম ও মানবাধিকার আজ বিপন্ন। শিশুরা পর্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে নিহত ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা নেই। আছে শুধু স্বেচ্ছাচার, অনাচার, দুঃশাসন, দুর্নীতি আর চরম নৈরাজ্য।

বিএনপি চেয়াপারসন বলেন, জাতি হিসেবে আমরা আজ সংকট কবলিত, আর ভবিষ্যৎ অন্ধকার ও অশ্চিত। আমাদের এ কাউন্সিল থেকে জমাট বাধা অন্ধকার দূর করে আলোর আভাস আনতে হবে।

তিনি বলেনে, জাতিকে আজ বিশৃঙ্খল, বিভক্ত, হতাশ ও দিশেহারা করে ফেলা হয়েছে। এই জাতিকে আবারো ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সকল স্তরে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। সঞ্চারিত করতে হবে নতুন আশাবাদ। জনগণকে দিতে হবে পথের দিশা। এই কাউন্সিল থেকে আসতে হবে সেই পথ নির্দেশনা।

তিনি বলেন, বিএনপির পরম গৌরবের বিষয় হচ্ছে শহীদ জিয়াউর রহমান দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র এনেছিলেন। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্বশীল  গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন। বাক-ব্যক্তি, সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সমুন্নত করেছিলেন। জনগণের মৌলিক ও মানবিক অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। বিশৃঙ্খল ও হতাশ জাতিকে মহান স্বাধীনতার মূল্যবোধে উজ্জীবিত ও ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। কৃষি-শিল্প-বাণিজ্য ও উৎপাদন-উন্নয়নে গতি সঞ্চার করে দেশকে কর্মমুখর করেছিলেন। তিনি নারী ও যুবশক্তিসহ সক্ষম প্রতিটি নাগরিকের শ্রম ও মেধাকে জাতীয় অগ্রগতির ধারায় সম্পৃক্ত করেছিলেন। কেবল অতীত নিয়ে পড়ে না থেকে তিনি নিরলস শ্রমে জাতীয় সমস্যা মোকাবেলা করে সম্মুখ প্রসারী ইতিবাচক রাজনীতির ধারা তৈরি করেছিলেন। এটাই আমাদের পথ।

খালেদা জিয়া বলেন, দুনিয়া এখন বদলে গেছে। একুশ শতকে এসে জাতিসমূহের মধ্যে প্রতিযোগিতা তীব্রতর হয়েছে। ঐক্য-শৃঙ্খলা, নেতৃত্ব, মেধা, যোগ্যতা, সমন্বিত পরিকল্পনা ও পদক্ষেপের মাধ্যমে চলমান চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলা করে যে যার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, মেধা ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও জাতি হিসেবে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। কেবল ঐক্য, শৃঙ্খলা ও সমন্বিত পরিকল্পনা-পদক্ষেপের অভাবে। এ অবস্থা থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। অতীতে বিএনপি ভবিষ্যতমুখি ইতিবাচক রাজনীতির ধারার নেতৃত্ব দিয়েছে। এখনও বিএনপিই শুধু পারে ইতিবাচক ও সম্মুখ প্রসারী ধারাকে এগিয়ে নিতে।

তিনি বলেন, এই যে ইতিবাচক ও ভবিষ্যতমুখি রাজনীতি ও পরিকল্পনার কথা আমি বলছি এগুলো কেবল কথার কথা নয়। আমরা যা বলি তা বুঝেশুনে বলি এবং বাস্তবায়নের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করি। আমরা কখনো দেশবাসীকে ১০ টাকা কেজি দরে চাল, বিনামূল্যে সার কিম্বা ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার মতো মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে তাদের সমর্থন লাভের চেষ্টা করি না।

তিনি বলেন, বিরোধী দলে থেকেও বিএনপি দেশ ও জনগণের স্বার্থে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বিকল্প প্রস্তাব দিয়ে সৃজনশীল ও গঠনমূলক রাজনীতি করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু কখনো ক্ষমতাসীনদের অনুকূল ও ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।

খালেদা জিয়া বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আমাদেরকে স্বাভাবিক ও নিয়মতান্ত্রিকপন্থায় শান্তিপূর্ণভাবে রাজনীতি ও সাংগঠনিক কার্যকলাপ চালাতে দেয়া হয়নি।

তিনি বলেন, হত্যা-গুমসহ সব ধরনে জুলুম ও হামলা-মামলা দিয়ে আমাদের সকলকে অতিষ্ঠ করে রাখা হয়েছে। এতকিছুর মধ্যে থেকেও দেশের সংকটজনক পরিস্থিতি এবং জনগণের দুর্দশা ও হতাশা আমাদেরকে ব্যথিত করেছে।

খালেদা জিয়া বলেন, আমরা চিন্তা করছি এমন অবস্থা চলতে পারে না। জাতিকে পেছনে ঠেলে দেয়ার নষ্ট রাজনীতিতে আবদ্ধ থাকার জাল থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে দেশের ভবিষ্যত আরো ঘোর অন্ধকারে ছেয়ে যাবে। তাই আমরা সংকট নিরসনে দেশ জাতিকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে ব্যাপক ভিত্তিক একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য নিজেদের মধ্যে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা করেছি।

তিনি বলেন, দেশের অগ্রসর চিন্তাবিদ, বুদ্ধিজীবী, পরিকল্পনা, গবেষণাবিদ এবং বিভিন্ন শ্রেণি পেশা ও অঙ্গণে কর্মরত শীর্ষস্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকেও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করা হয়েছে। সকলের সুচিন্তিত মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে সমৃদ্ধ দেশ ও আলোকিত সমাজ গড়তে বিএনপি ‘ভিশন ২০৩০’ নামে একটি সমন্বিত পরিকল্পনার খসড়া প্রণয়ন করেছি।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলন, আমি আনন্দের সঙ্গে বলতে চাই যে অচিরেই এই খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। এই কাউন্সিলে আমি ভিশন ২০১৩’ থেকে এর কিছুটা সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরতে চাই।

তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার সামাজিক ন্যায় বিচার, মানবিক মর্যাদা ও সাম্য আজো বাস্তাবায়িত হয়নি। সেই লক্ষ্যগুলো পূরণের জন্য বাংলাদেশের সকল ধর্ম বিশ্বাসের মানুষ, পাহাড় ও সমতলসহ সকল অঞ্চলের মানুষ এবং প্রতিটি নৃগোষ্ঠীর মানুষের চিন্তা-চেতনা ও আশা-আকাঙ্খাকে ধারণ করে একটি অংশীদারিত্বমূলক ও সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায় বিচার সম্পন্ন জনকল্যাণমূলক সহিষ্ণু, শান্তিকামী দেশ গড়ে তোলা বিএনপির লক্ষ্য।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে নেই, আমরা ক্ষমতায় গেলে সংবিধানে গণভোটের ব্যবস্থা করব, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক নিয়োগ বন্ধ করা হবে। তিনি আরো বলেন, দূষিত রাজনৈতিক চক্র থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে ক্ষমতাসীনদের প্রতি আবারও সংলাপের আহ্বান জানা বিএনপি নেত্রী।