ঢাকা: জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এবার ১৪ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সোমবার (০৭ মার্চ) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ১৪ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নাম ঘোষণা করেছে।

বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, মাতৃভাষার ক্ষেত্রে মরহুম রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম, বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে মরহুম অধ্যাপক ড. মাকসুদুল আলম, চিকিৎসাবিদ্যায় ডা. এম আর খান, সংস্কৃতি ক্ষেত্রে শিল্পী-গবেষক রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা রয়েছেন। আর প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরস্কার পাচ্ছে বাংলাদেশ নৌবাহনী।

একাত্তরে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদান এবং দেশের জলসীমায় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিরলস দায়িত্ব পালনের জন্য নৌবাহিনীকে ২০১৬ সালের স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করেছে সরকার। রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার হিসেবে স্বাধীনতা পুরস্কারে অর্থ, পদক, সম্মাননা ক্রেস্ট দেওয়া হবে।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ এবং প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সংগঠক হিসেবে কাজ করায় স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী এমএ মুহিত।

আর মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ১৯৭১ সালে ভারতের মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং ক্যাম্প, অপারেশন ক্যাম্প ও শরণার্থী ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনকারী বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। সফল রাজনীতিক, মুক্তিযোদ্ধা এবং বিশিষ্ট সমাজসেবক হিসেবে মরহুম মৌলভী আচমত আলী খানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়অ হচ্ছে।

সুপারসনিক এয়ারক্রাফট এফ-৬ এর সফল পাইলট এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ এয়ারফোর্স গঠন প্রক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনকারী স্কোয়াড্রন লিডার (অব.) বদরুল আলম (বীরউত্তম) আছেন স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকায়।

১৯৭১ সালে রাজশাহী জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক রাজশাহী পুলিশ লাইনস আক্রমণ প্রতিরোধে পুলিশ ফোর্স সংগঠনে নেতৃত্বদানকারী শহিদ শাহ আব্দুল মজিদকে পুরস্কার দেওয়া হবে। রাঙামাটিতে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে নেতৃত্বদানের জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শাহাদৎবরণকারী রাঙামাটির তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক এম আবদুল আলীও পাচ্ছেন এবারের স্বাধীনতা পদক।

১৯৭১ সালে পাকিস্তান হাইকমিশন, লন্ডনে কর্মরত থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশকারী এবং বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান স্বহস্তে লেখক মরহুম এ কে এম আবদুর রউফও এ তালিকায় রয়েছেন। দিল্লিতে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান হাইকমিশনে কর্মরত অবস্থায় পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশকারী এবং দিল্লিতে বাংলাদেশের প্রথম মিশন স্থাপনকারী কে এম শিহাব উদ্দিনও পাচ্ছেন স্বাধীনতা পুরস্কার।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীনতার স্বপক্ষে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনকারী সৈয়দ হাসান ইমাম, একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী মরহুম রফিকুল ইসলাম এবং আবদুস সালামকে মাতৃভাষা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য পুরস্কার দেবে সরকার।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অবদানের জন্য কৃষি গবেষক এবং তোষা পাট ও দেশি পাটের জীবন রহস্য আবিষ্কারক মরহুম অধ্যাপক ড. মাকসুদুল আলমকে পুরস্কার দেওয়া হবে। চিকিৎসাবিদ্যা ক্ষেত্রে প্রথিতযশা শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ রফি খান (এমআর খান) পুরস্কার পাচ্ছেন।

পুরস্কার পাচ্ছেন রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী ও গবেষক অধ্যাপক রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা পাচ্ছেন সংস্কৃতি ক্ষেত্রে স্বাধীনতা পুরস্কার।  আগামী ২৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন।