হার্ট অ্যাটাক এড়াতে মেনে চলুন ৫টি নিয়ম
নীরব ঘাতক হার্ট অ্যাটাক (হৃদরোগ)। যে কেউ যেকোনো সময় এর শিকার হতে পারেন। অন্যান্য রোগের চেয়ে হৃদরোগের কারণেই বিশ্বে সবচেয়ে বেশি লোক মারা যান। আমেরিকার হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, গত বছর বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৭০ লাখ। ২০৩০ সালে বার্ষিক এ সংখ্যা বাড়াবে ২ কোটি ৩৬ লাখে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরচর্চা না করা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ ও জীবনযাপনে অনিয়ম হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।
ভারতের গুরগাঁওয়ের কলম্বিয়া এশিয়া হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অনিল বনশাল হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাব্য কিছু লক্ষণের কথা জানিয়েছেন। হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কয়েকটি লক্ষণের মধ্যে রয়েছে বুক ভার হয়ে আসা, পেটের ওপরের অংশে অসহনীয় ব্যথা অনুভব করা, বাঁ হাত ব্যথা, চোয়াল ও ঘাড় ব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট।
এই লক্ষণগুলো টের পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিকটস্থ কোনো হাসপাতালে যাওয়া এবং ইসিজি করা প্রয়োজন। প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায়, হার্ট অ্যাটাকের এসব লক্ষণ দেখা যাওয়ার পরও বিষয়টিকে এড়িয়ে যান অনেকে। কিন্তু হার্ট অ্যাটাক হলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়াটা খুব জরুরি। এছাড়া হার্ট অ্যাটাকের অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে রয়েছে বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা ও ঘাম হওয়া। বুকে প্রচণ্ড চাপও অনুভব করতে পারেন আপনি। মনে হতে পারে, বুক যেন ভেঙে আসছে।
হার্ট অ্যাটাক হলে পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় বুকব্যথার লক্ষণ দেখা দেয়। অন্যদিকে, নারীদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট, বমি বমি ভাব, চোয়াল ও মেরুদণ্ডে ব্যথা হয়। এক বা একাধিক করোনারী ধমনী ভেতরের দিক থেকে সরু হয়ে যাওয়ার ফলে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত হৃদপিণ্ডের চারপাশের হৃদপেশিকোষগুলোতে যখন পৌঁছাতে পারে না বা রক্তের প্রবাহ সীমিত হয়ে যায়, তখন মানুষ হার্ট অ্যাটাকে শিকার হন।
সুইডেনের প্রখ্যাত মেডিকেল প্রতিষ্ঠান কারোলিন্সকা ইনস্টিটিউট এক গবেষণায় খুঁজে পেয়েছে, পাঁচটি অভ্যাস আপনার প্রাণঘাতী হৃদরোগের ঝুঁকি ৮০ শতাংশ কমিয়ে দেবে।
১. স্বাস্থ্যকর খাবার : তেলযুক্ত খাদ্যগ্রহণ থেকে বিরত থেকে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। যত চর্বিযুক্ত খাবার কম খাবেন ততই ভালো। আঁশযুক্ত খাবার আপনার হার্টকে সুস্থ রাখতে দারুণ কাজে দেবে। ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ উন্নতমানের পুষ্টিকর খাবার আপনার হার্টসহ পুরোদেহ সুস্থ ও সবল রাখে। রক্তে কোলেস্ট্রোলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এমন খাবার এড়িয়ে চলুন। সবজি ও ফলমূল খান। চর্বিজাতীয় খাবার, প্রস্তুতকৃত চিনি ও সমৃদ্ধ খাদ্যশস্য একেবারে এড়িয়ে চলুন।
২. মদপান : মদ খাওয়া একেবারে ছেড়ে দিন। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা মদ কম খান তাদের অধিকাংশের স্বাস্থ্য ও হার্ট ভালো রয়েছে। অতিরিক্ত মদপান শরীরে অ্যালকোহোল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অতিরিক্ত ক্যালোরি তৈরি করার ফলে মানুষের ওজন বাড়িয়ে দেয় মদ। যার কারণে মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হন।
৩. তামাক : তামাক (বিড়ি, সিগারেট, গুল, জর্দা) ভুলেও মুখে নেবেন না। তামাক হাইপারটেনশন, স্ট্রোক, ভাসকুলার ডিজিজ, করোনারি আর্টারি ডিজিজের মতো মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে।
৪. দেহ সচল রাখা : শহুরে মানুষেরা পরিশ্রম কম করে থাকেন। অফিসের কাজের চাপে ব্যায়াম করার সুযোগও হয়ে ওঠে না। এই অভ্যাস হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। পরিশ্রম করা লোকদের দেহ সচল থাকে। ফলে তাদের হৃদরোগের ঝুঁকিও কম। তাই দেহ ও মন সচল রাখতে ব্যয়াম ও অন্যান্য কাজ করুন।
৫. কোমর ঠিক রাখা : স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরুষদের কোমর যদি ৩৭ ইঞ্চি এবং নারীদের কোমর যদি ৩১ দশমিক ৫ ইঞ্চি হয়, তাহলে তাদের হার্ট অ্যাটাকসহ নানা শারীরিক সমস্যা বেড়ে যায়। ফলে কোমর ঠিক রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তথ্যসূত্র : হেলথিস্ট অলটারনেটিভ ডটকম।