টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মুস্তাফিজের হাতেই অন্যমাত্রা পাবে !
বার্নি রোনাই। বিখ্যাত বৃটিশ পত্রিকা দি গার্ডিয়ানের সিনিয়র ক্রীড়া লেখক। আবার গার্ডিয়ানেরই আরেকটি প্রকাশনা ফুটবল উইকলির নিয়মিত লেখক। ক্রীড়া বিশেষজ্ঞ হিসেবেও বেশ পরিচিত। বার্নি রোনাইয়ের চোখ খুঁজে ফিরে বিশ্বের আনাচে-কানাচে, ক্রীড়াঙ্গনের গলি-ঘুপচিতে। যেখানেই প্রতিভার বিচ্চুরণ ঘটবে, সেখান থেকেই তিনি মুক্তো তুলে আনবেন এবং লেখনির মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবেন সারা বিশ্বে।
বার্নির চোখ শেষ পর্যন্ত এসে আটকে গেলো বাংলাদেশের সুন্দরবনঘেঁষা সাৎক্ষীরা জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম তেঁতুলিয়ায়। এখন থেকেই যে হঠাৎ ক্রিকেটাকাশে উদিত হয়ে গেলো এক রহস্যময় পেস বোলার মুস্তাফিজুর রহমানের! সুতরাং, এই রহস্য তো ভেদ করতেই হবে।বার্নি রোনাই নেমে পড়লেন রহস্য ভেদ করার কাজে। বেশ গবেষণা করলেন, বিশ্লেষণ করলেন। অবশেষে একটা নাতিদীর্ঘ আর্টিকেল দাঁড় করিয়ে দিলেন দি গার্ডিয়ানের স্পোর্টস ব্লগে, ‘Mustafizur Rahman: the statistically freaky bowler with an even freakier gift ’- এই শিরোনামে।
মুস্তাফিজুর রহমান কেমন? খুব লাজুক, হালকা-লিকলিকে গড়নের এই বাঁ-হাতি উঠে এসেছে একেবারে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে। পরিসংখ্যানপ্রেমীরা মুস্তাফিজকে ঘাঁটাঘাঁটি করলেই বুঝে যাবে মাত্র আট মাসে কতটা উন্নতি করেছে এই পেসার। অভিষেকের পর থেকে এখনও পর্যন্ত মুস্তাফিজ বল করেছেন ৮২৪টি। উইকেট সব মিলিয়ে ৪৩টি। উইকেটপ্রতি দিয়েছেন মাত্র ১৪ রান। কী অসম্ভব এক পরিসংখ্যান। যোগ্য মূল্যই পেয়েছেন বাংলাদেশের এই বাঁ হাতি পেসার। আইপিএলের আগামী সংস্করণের জন্য সানরাইজার্স হায়দারাবাদ তাকে কিনে নিয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে (প্রায় দেড় কোটি টাকা)।
গ্রাম থেকে উঠে আসা এক তরুণের যেন স্বপ্নের উত্থান। তেঁতুলিয়া গ্রাম থেকে এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি গুগল সার্চ করা ব্যাক্তিতে পরিণত হয়েছেন মুস্তাফিজ। এমনকি গত বছর ভারত সিরিজের সময় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি কাঁধের ধাক্কা দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, এই ছেলেটিকে তারা বড় ধরনের প্রতিপক্ষই মনে করছেন।
বার্নি রোনাই লিখেছেন, আমি এখনও তাকে সরাসরি খেলতে দেখিনি। এমনকি ইউটিউবে আসা তার সাক্ষাৎকারগুলোর কোনটাকেই ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করিনি। উইকেট নেয়ার পর যে উদযাপন তিনি করেন, তার চেয়ে অন্যকিছুতে আমি তাকে অনুসরণও করিনি- তবুও সন্দেহাতীতভাবে আমার সবচেয়ে ফেভারিট ক্রিকেটার হয়ে গেলেন মুস্তাফিজ।
মুস্তাফিজের বোলিং তত্ত্বের দিকে আসা যাক। খুব বেশি গতি যে তার বলে রয়েছে তা নয়, বলেও যে খুব বেশি সুইং করাতে পারেন, সেটাও নয়। এমনকি বাউন্সার দিয়ে ব্যাটসম্যানের পিলে চমকে দেয়ার মতও নন। কিন্তু মুস্তাফিজ হচ্ছেন এমন এক বোলার যিনি প্রতিদিনই খুব ইকনোমিক্যাল। খামখেয়ালি টাইপের একজন মিডিয়াম পেসার এবং এখনও শিক্ষানবীশ। সে নির্ভর করে নিজের কিছু সুপার পাওয়ারের ওপর। খুব স্বাভাবিকভাবেই তার ডেলিভারিতে রয়েছে অসাধারণ কিছু বৈচিত্র্য। যা তাকে সবার চাইতে ভিন্ন হিসেবে পরিচিত করে দিয়েছে।
বল করার সময় হাতের কব্জিটাকে ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ঘুরিয়ে দেন। সাদা বলকে জাম্প করাতে পারেন এবং কোন সতর্কবার্তা ছাড়াই আবার স্টপ করিয়ে দিতে পারেন। এটা জন্মগতভাবে পাওয়া একটি প্রতিভা, স্কিল। যে কাটার তিনি দিয়ে থাকেন, সেটা শিখেছেন নেট বোলিং সেশনে।
বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টি শুরু হতে আর মাত্র তিনদিন বাকি। অথচ তার আগেই গত সপ্তাহে ইনজুরিতে পড়েছে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে, এশিয়া কাপের বাকি সময়ের জন্য আর খেলতে পারবেন না তিনি। কিন্তু আমার থিওরি হচ্ছে, এ গল্পের পেছনে অন্য কোন গল্পও আছে। যদিও এ সম্পর্কে কোন গুঞ্জন, কোন তথ্য কিংবা কোন আলোচনার বিষয়বস্তুও আমার কাছে নেই। তবুও আমি বলবো, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশ তাদের সেরা অস্ত্রটিকে রিজার্ভই রেখে দিয়েছে। আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস এমনকি নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার জন্য যিনি হয়ে উঠতে পারেন দারুণ ভয়ঙ্কর।
আমি আবারও বলছি, আমার এই ধারণার পেছনে সঠিক কোন তথ্য নেই। সম্পূর্ণ নিজের ভেতর থেকেই বলছি, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সম্পূর্ণ নিজের ক্ষমতা নিয়েই আবির্ভূত হবেন তিনি। আমি চাই না কোনভাবেই ইনজুরিতে পড়ুক মুস্তাফিজ। তাকে চাই বিশেষ কোনরূপে। মুস্তাফিজ এমন একজন বোলার, আমি যখন থেকে টি-টোয়েন্টি বুঝতে পেরেছি, তখন থেকে অপেক্ষায় আছি তার মত একজন বোলারের। যিনি টি-টোয়েন্টিতে অন্যমাত্রা যোগ করতে পারবেন।’