পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশলী খাতের কোম্পানি আজিজ পাইপের শেয়ার নিয়ে এসব কি হচ্ছে। এ কোম্পানির শেয়ার গত কয়েক কার্যদিবস ধরে টানা বাড়ছে। এ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ তুলছেন বিনিয়োগকারীরা। এ কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা কম হওয়ার কারণে কারসাজি চক্রের বদৌলতে এ শেয়ারের দর এতটা বেড়েছে।

এ কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে কোম্পানির পরিচালকরা জড়িত বলে নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে। এদিকে শেয়ারের দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ায় এ কোম্পানিকে নোটিশ দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষের নোটিশের জবাবে জানিয়েছে, দর বাড়ার জন্য কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য তাদের কাছে নেই। ২০১০ সালের ধস পরবর্তী সময়ে বাজার বারবার স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দিলেও তা স্থায়ী হয়নি।

বরং এই ইঙ্গিতে যখনই সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আশায় বুক বাঁধেন, তখনই কারসাজির হোতারা সক্রিয় হয়ে ওঠে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটছে পুঁজিজবাজারে প্রকৌশলী খাতের তালিকাভুক্ত স্বল্পমূলধনী কোম্পানি আজিজ পাইপের শেয়ার দর। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত দুই মাসে আজিজ পাইপস লিমিটেডের শেয়ারদর দ্বিগুণে উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে গত আট কার্যদিবসেই দর বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি।

দুর্বল মৌলভিত্তির এ শেয়ারের দরবৃদ্ধিকে স্বাভাবিক মনে করছেন না বাজারসংশ্লিষ্টরা। এদিকে ডিএসই কর্তৃপক্ষের চিঠির জবাবে গতকাল কোম্পানিটি জানায় এর নেপথ্যে কোনো অপ্রকাশিত মূল্যসংবেদনশীল তথ্য নেই। বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে আজিজ পাইপস শেয়ারের দর ছিল ২০ টাকার ঘরে। গতকাল তা ৩৯.৪০ টাকার ওপরে কেনাবেচা হয়। ৭ অক্টোবর শেয়ারটির দর ছিল ২৬ টাকা।

ডিএসইতে গতকালও আজিজ পাইপস শেয়ারের দর ২ দশমিক ৮১ শতাংশ বেড়েছে। সর্বশেষ লেনদেন হয় ৩৯ টাকা ৪০ পয়সায়। গত এক মাসে এ শেয়ারের সর্বনিম্ন দর ছিল ২৩ টাকা ৫০ পয়সা ও সর্বোচ্চ ৪০ টাকা ৬০ পয়সা। ছয় মাসে এর সর্বনিম্ন দর ১৫ টাকা ও সর্বোচ্চ ৪০ টাকা ৬০ পয়সা। অর্ধবার্ষিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত আজিজ পাইপসের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১ টাকা ৬ পয়সা, যেখানে আগের বছর একই সময়ে এর শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ২১ টাকা। অন্যদিকে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত এর শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৪০ পয়সা।

আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ৪ পয়সা। নিরীক্ষক সূত্রে জানা গেছে, উৎপাদন ক্ষমতার সদ্ব্যবহার করতে পারছে না আজিজ পাইপস। ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটি উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র ৩৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ ব্যবহার করতে পেরেছে, যা এর আগের হিসাব বছরে ছিল ৪৮ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। ওই প্রতিবেদনে নিরীক্ষক কাজী জহির খান অ্যান্ড কোং মন্তব্য করে, উৎপাদন কমায় আর্থিক সংকটে পড়েছে আজিজ পাইপস।

এ অবস্থায় ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় কোম্পানির বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও করে অর্থায়নকারী তিন ব্যাংক। আর্থিক সংকটে থাকায় কোম্পানিটি ২০০১ সালের পর কোনো হিসাব বছরের জন্যই শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয়নি। ২০১৪ হিসাব বছরে এর শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ১ টাকা ৩২ পয়সা ও শেয়ার প্রতি দায় ৫০ টাকা ৮৭ পয়সা। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কারসাজির আশঙ্কায় আতঙ্কিত সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। আর এজন্য বরাবরের মতো এবারো অভিযোগের তীর কারসাজি চক্রের দিকে।

একটি সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীর কারসাজি থেকে কোনোভাবেই বের হতে পারছে না পুঁজিবাজার। এ কারসাজি চক্র পরিকল্পিতভাবে বাজার বিপর্যস্ত করছে। বাজার সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ বর্তমান অবস্থাকে সাপলুডু খেলা বলেও মন্তব্য করেছেন। কারণ, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা তিল তিল করে কষ্টার্জিত পুঁজি দিয়ে শেয়ার কেনার পর বাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফেরে। আর ঠিক তখনই কারসাজি চক্র বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে বাজার নিম্নমুখী করে।

এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কোম্পানিকে নিয়েও কারসাজিতে তৎপর রয়েছে এসব গোষ্ঠী। আর এভাবেই নীতিনির্ধারণী মহলের দৃষ্টির আড়ালে কারসাজি চক্র সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নিঃস্ব করে চলেছে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যে কোনো কোম্পানির শেয়ার দর টানা বাড়লেও নীরব বিএসইসি।

কিন্তু কারসাজির হোতারা যখনই সেসব শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে গুজে দেয়, ঠিক তখনই নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্ব প্রাপ্তরা অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির বিষয়টি বুঝতে পারে। শুরু হয় লেনদেন বন্ধের মাধ্যমে তদন্তের নামে কালক্ষেপণের নতুন অধ্যায়। দীর্ঘ সময় নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম ঠিকমতো চললেও পুঁজি আটকে থাকায় ব্যবসায়ের সুযোগ হারায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
আজিজ পাইপ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর এক ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, মূলত এক শ্রেণীর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা অনেকটা অসহায়। পুঁজি আটকে থাকার কারণে অনেক বিনিয়োগকারী এখনো লেনদেনের সাহস পান না।

এ সুযোগে যাদের সক্ষমতা বেশি তারা ফায়দা লুটে নিচ্ছে। তারা বিভিন্ন গুজবের মাধ্যমে বাজারকে প্রভাবিত করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে নিচ্ছে। এ কারণে বাজারে স্থায়ী স্থিতিশীলতা ফিরে আসছে না। কাজেই তিনি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান।

আমিনুল ইসলাম, বিশেষ প্রতিনিধি