রাজনীতি স্থিতিশীল, পুঁজিবাজার অস্থিতিশীল
আমিনুল ইসলাম: দেশের রাজনীতি পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও অস্থিতিশীল রয়েছে পুঁজিবাজার। বাজার আজ ভাল তো কাল খারাপ। এ পরিস্থিতির মধ্যে দীর্ঘদিন চলছে। বিনিয়োগকারীরা একটি স্থিতিশীল বাজারের জন্য বছরের পর বছর দাবী জানালো ও এখনো স্থিতিশীল বাজার উপহার দিতে পারেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তাই ঈদ পরবর্তী পুঁজিবাজার নিয়ে আতঙ্কে কাটছে না বিনিয়োগকারীদের। বরং দিন যতই যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ততই ভারী হচ্ছে।
গত কয়েক বছরের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর কিছুটা স্থিতিশীল হয়। ২০১৪ সালে স্থিতিশীলতার স্বপ্ন জাগিয়ে বছর শুরু হয় পুঁজিবাজারে। তবে বছর শেষে বিনিয়োগকারীদের সেই স্বপ্ন বাস্তবে তা পূরণ হয়নি। তবে এই সময়ে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং স্টক এক্সচেঞ্জ বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিলেও তার সুফল পায়নি বিনিয়োগকারীরা। এ বছরও প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদনে হিড়িক ছিল পুঁজিবাজারে।
আর্থিক প্রতিবেদন সঠিক নিয়মে না দেখে অনুমোদন দেওয়ায় সমালোচনার মুখে পরে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এমনকি অর্থমন্ত্রণালয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কে চিঠি দিয়ে আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে আরো সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেয়।
বরাবরের মতো গত কয়েক মাস ধরে সক্রিয় ছিলো কারসাজি চক্র। বিশেষ করে দূর্বল মৌলভিত্তি ও ছোট মূলধনী কোম্পানির শেয়ারকে কেন্দ্র করে কারসাজি চক্র ছিলো বেপরোয়া। অলোচিত এ সময়ে বিএসইসি ব্যস্ত ছিলো আইপিও এবং রাইট শেয়ার অনুমোদন দিতে।
এ সুযোগে বাজার থেকে চলে গেছে প্রায় হাজার কোটি টাকা। ফলে লেনদেন সংকটে বাজারে নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে অস্থিতিশীলতা। এদিকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নিস্কিয়তা ও বিনিয়োগ স্থবিরতা প্রতিনিয়ত বাজারের সার্বিক লেনদেন অবস্থায় বাধা সৃষ্টি করছে। ডি-মিউচ্যুয়ালাইজেশনের পর সফটওয়্যারের পরিবর্তন ও নতুন সূচকের সংযোজন ব্যতিত বাস্তবিক অর্থে বিনিয়োগকারীদের পাওনা শূন্য। বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছে, দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যর্থতা বাজার অস্থিতিশীলতার নেপথ্যের প্রধান অন্তরায়।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট দূর করতে পারলেই বাজারে তারল্য সংকট কেটে যাবে বলে তারা মনে করেন। বিনিয়োগকারীদের বাজারে ফেরাতে সর্বপ্রথম বাজারের কাঠামোগত পরিবর্তন ও বিনিয়োগকৃত অর্থের নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে। বাজারের লেনদেন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে এমন ইস্যুগুলোর উন্নয়ন জরুরি। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বাজারের গতিশীলতা ও যোগানের নামে প্রায় প্রত্যেক কমিশন সভায় নতুন নতুন কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেয়া হচ্ছে।
কিন্তু তালিকাভুক্তির পর কোম্পানিগুলোর মুনাফা নিম্নমুখী হচ্ছে। ২০১০ সালের লোকসান কাটাতে যখন বিনিয়োগকারীরা ব্যস্ত সেখানে নতুন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে আবারো লোকসানের ফাঁদে পড়ছে বিনিয়োগকারীরা। এদিকে, ২০১০ সালের ধস-পরবর্তী সময়ে এখন পর্যন্ত ৯ দফায় বাজারের সার্বিক লেনদেন ও সূচক ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করলেও প্রতিবারই তলানিতে নেমে এসেছে।
অভিজ্ঞ বিনিয়োকারীরা বলছেন, স্বল্পমূলধনী কোম্পানিগুলোর জন্য পৃথক মার্কেট গঠন, ডিসক্লোজার ভিত্তিক আইপিও আবেদন বাদ দিয়ে মেরিটের ভিত্তিতে আইপিও অনুমোদন, প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীদের যারা নিস্কিয় অবস্থানে রয়েছে তাদের বাজারে ফিরিয়ে আনা, বর্তমান পরিস্থিতিতে টান্সফোর্স গঠন করে কারসাজির অভিযোগ রয়েছে এমন কোম্পানি ও ফেসবুক গ্রুপের এডমিনদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া না হলে বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে স্বল্পমূলধনী কোম্পানিগুলোকে ঘিরে কারসাজি হচ্ছে বেশি। এ কারণে বিভিন্ন সময় বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে। তাই স্বল্পমূলধনী কোম্পানিগুলোকে নিয়ে যদি পৃথক মার্কেট গঠন করা হয় তাহলে বাজারের গতিশীলতা বাড়াবে। এজন্য উভয় স্টক এক্সচেঞ্জকে কাজ করতে হবে।
ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) স্বপন কুমার বালা বলেন, পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সব ধরণের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। আশা করি খুব দ্রুত বাজার স্থিতিশীল হবে। বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন বলেছেন, ‘বিএসইসি পুঁজিবাজারের সার্বিক মানোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের দুটি পুঁজিবাজার এর সঙ্গে থাকায় এটি আরও সহজ হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা ঠিক থাকলে আগামী ২০১৬ সাল পুঁজিবাজারের জন্য অগ্রগতির বছর হবে।’
বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন নিজামী বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজার এখন অনেক পরিপক্ব। ইচ্ছা করলেই কেউ কারসাজি করতে পারে না। শক্তিশালী একটা নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে। তাই বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখতে পারেন।
সিএসইর চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, ‘বর্তমান পুঁজিবাজার আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী’। বিনিয়োগকারীদের সচেতন করতে সিএসই বাজ করে যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতি বছরের মতো এবারও পুঁজিবাজার মেলার আয়োজন করা হয়েছে।