স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে এক কার্যদিবস কিছুটা দাম বাড়ার পর ফের পুঁজিবাজারে অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ার দরপতনে সার্বিক বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের গতি। মুলত পুঁজিবাজারে বর্তমানে আস্থার সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে, যা গত সপ্তাহের লেনদেনেও স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে।

তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোন আশাই স্থিতিশীল হচ্ছে না পুঁজিবাজার বরং দিন যতই যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ততই ভারী হচ্ছে। বর্তমান বাজারের চিত্র এমন যে শেয়ার কিনলেই লোকসান। ফলে আস্থা নিয়ে শেয়ার কিনতে সাহস পাচ্ছে না বিনিয়োগকারীরা।  এদিকে বিনিয়োগকারীদের আস্থার ওপর নির্ভর করে পুঁজিবাজারের ভবিষ্যত। মূলত এবাজারের শক্তিই হলো বিনিয়োগকারীরা। তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারলেই বাজার স্থিতিশীল হবে। তা না হলে বাজার স্থিতিশীল রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এজন্য বিনিয়োগকারীদের বাজার নিয়ে উৎসাহিত করতে হবে বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসই’র এক পরিচালক। কারণ বাংলাদেশে সার্বিক অর্থনীতির সাথে সমন্নয় রেখে পুঁজিবাজার বড় হয়নি। ইতোমধ্যে বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আশাবাদী এর ফল খুব শীঘ্রই বিনিয়োগকারীরা পাবেন।

গত সপ্তাহে পাঁচ কার্যদিবসেই মধ্যে দুই কার্যদিবস সূচকের বড় দরপতন হয়েছে। ফলে লেনদেনের পরিমাণও নেমে এসেছে তলানিতে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা ও উদ্বেগ। তাঁদের এই অসহায়ত্বের প্রতি সরকার বা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো দৃষ্টি নেই। তাছাড়া বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভুমিকা ও প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। কারণ এই মুর্হুতে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা না ফিরলে বাজারের স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরানো বিএসইসির জন্য চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন তারা।

বাজার বিশ্লেষকরা বলেন, আস্থাহীনতা এবং বাজারের অনিশ্চয়তার কারণেই পুঁজিবাজার এই কঠিন অবস্থানে পৌঁছেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে যে বাজারে সংস্কারের ফলে এই নেতিবাচক প্রবণতা তৈরি হয়েছে এবং সংস্কার পরবর্তীকালে বাজারের অবস্থান পুনরুদ্ধার হবে। তবে বাজারে দরপতন ঠেকানোর জন্য কার্যকর কোনো পদক্ষেপ এখনো গ্রহণ করা হয়নি। এছাড়া বিশেষ করে মার্জিন লোন ইস্যুতে বিনিয়োগকারীদের মাঝে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে।

গ্লোব সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী আজম উল্লাহ বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে আমি যেন বড় ভুল করেছি। পুঁজি অর্ধেক হয়ে গেছে, কিন্তু কেউ আমাদের (বিনিয়োগকারীদের) কথা ভাবছে না। কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। আর নিয়ন্ত্রক সংস্থার ব্যস্ত জরিমানা ইস্যুতে। বাজার ভাল হবে কী করে।

জানা গেছে, সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ব্যাংকের পাশাপাশি অন্য খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দাম কমে। ফলে কমেছে সবকটি মূল্যসূচক। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ২২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ১২৬ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৮৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯৮৬ পয়েন্টে।

দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৯ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪২ টির, দর কমেছে ১৯৮ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৯ টির। ডিএসইতে ৪৬১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪৬৮ কোটি ৬০ লাখ টাকার ।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৩৮৯ পয়েন্টে। সিএসইতে ১৮৮ টি কোম্পানির লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে ৭৫ টির দর বেড়েছে, কমেছে ৯২ টির এবং ২১ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১১ কোটি ৪৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।