ইউসিবি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা, রাইট ইস্যুর আবেদনে অসঙ্গতি
শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের কোম্পানি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) পিএলসির রাইটস ইস্যুর আবেদন ও সংশ্লিষ্ট নথিপত্র পর্যালোচনা করে একাধিক গুরুতর অসঙ্গতি এবং নিয়মভঙ্গের প্রমাণ পেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এ কারণে ব্যাংকটির রাইটস ইস্যু সংক্রান্ত অসঙ্গতির বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও প্রয়োজনীয় নথিপত্রসহ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। সম্প্রতি বিএসইসির কর্পোরেট ফাইন্যান্স ডিভিশনের আইপিও, আরপিও ও রাইটস ইস্যু শাখা থেকে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বিএসইসি জানিয়েছে, ব্যাংকটির গত ১৮ আগস্ট আবেদনের প্রেক্ষিতে রাইট ইস্যু আবেদন ও নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে বেশ কিছু আর্থিক অসঙ্গতি, মূলধন ঘাটতি ও নিয়ম লঙ্ঘনের বিষয় কমিশনের নজরে এসেছে। ইউসিবির নিরীক্ষকরা তাদের প্রতিবেদনে একটি ‘কোয়ালিফাইড অপিনিয়ন’ দিয়েছে। যেখানে ৫ হাজার ২৭৭ কোটি টাকার প্রভিশন ঘাটতি ও ১৯২ কোটি টাকার অতিরিক্ত সুদ আয় হিসাবভুক্ত করা হয়েছে।
এই দুই অসঙ্গতি সঠিকভাবে সমন্বয় করলে ঘোষিত ৩৮ কোটি ৬০ লাখ টাকার মুনাফা হলে ৫ হাজার ৪৩০ কোটিরও বেশি ক্ষতি হয়। একইসঙ্গে ব্যাংকটির ঘোষিত মূলধন ঘাটতি ২ হাজার ৭৩৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ২০৬ কোটিরও বেশি। পাশাপাশি ক্যাপিটাল অ্যাডিকোয়েসি রেশিও (সিএআর) নেমে আসে ৭.৪৪ শতাংশে, যা ন্যূনতম প্রয়োজনীয় ১২.৫০ শতাংশের অনেক নিচে।
ফলে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (রাইটস ইস্যু) বিধিমালা, ২০০৬ এর বিধি ৩ (এইচ) অনুসারে, রাইটস শেয়ার ইস্যুর জন্য কোম্পানির অবিলম্বে পূর্ববর্তী বছরে সন্তোষজনক মুনাফা থাকা আবশ্যক। উল্লিখিত সমন্বয় অনুসারে ব্যাংকটি বর্তমানে ক্ষতির মধ্যে রয়েছে এবং পর্যাপ্ত মূলধন নেই। ফলে কোম্পানিটি নিয়ম ৩ (এইচ) এর শর্ত পূরণ করছে না। এই পরিস্থিতিতে রাইট শেয়ার ইস্যু করলে তা বিধিমালা অনুযায়ী উল্লিখিত নিয়মের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে। তাই ইউসিবির বর্তমান আর্থিক অবস্থায় সেই শর্ত পূরণ হয়নি বলে কমিশন মনে করে।
ইউসিবির স্পনসর ও পরিচালকেরা বর্তমানে ব্যাংকের মোট শেয়ারের মাত্র ১০.২৭ শতাংশ ধারণ করছেন। কিন্তু বিএসইসি ২২ নভেম্বর ২০১১ সালের নির্দেশনা অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর স্পনসর, প্রমোটার ও পরিচালকদের সর্বদা ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার যৌথভাবে ধারণ করতে হবে। ইউসিবির স্পন্সর ও পরিচালকদের মোট ১০.২৭ শতাংশ শেয়ার ধারণ বিএসইসির উল্লিখিত নির্দেশনার স্পষ্ট লঙ্ঘন।
ওই নির্দেশনায় বলা আছে, যদি কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্পন্সর/প্রমোটার ও পরিচালকেরা উপরোক্ত পরিমাণ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হন, তবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি রাইট শেয়ার ঘোষণা করতে বা রিপিট পাবলিক অফারের মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ করতে পারবে না। ফলে, রাইট শেয়ার ঘোষণা করে ইউসিবি বিএসইসির নির্দেশনার শর্ত লঙ্ঘন করেছে বলে কমিশন মনে করে।
বিএসইসি জানিয়েছে, উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (রাইট ইস্যু) বিধিমালা, ২০০৬ এর বিধি ১০(২) অনুযায়ী ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের রাইট ইস্যু আবেদনপত্রের ঘাটতি পূরণ, ব্যাখ্যা প্রদান এবং সমর্থনকারী নথিপত্রসহ চিঠি ইস্যুর তারিখ হতে ১৫ দিনের মধ্যে কমিশনে দাখিল করতে হবে। এছাড়া, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের রাইট ইস্যু আবেদন বিষয়ে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে মতামত প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম বলেন, ইউসিবিএল এর রাইট ইস্যুর আবেদন বিএসইসি যাচাই-বাছাই করে দেখছে। ইতিমধ্যে তাদের কাছে কিছু বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে ইউসিবির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) ফারুক আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) পিএলসি বড় পরিসরে খেলাপি ঋণের ভারে ধুঁকছে। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। যার বিপরীতে বড় অঙ্কে সঞ্চিতি গঠনের প্রয়োজন। কিন্তু ব্যাংকটি নগদ অর্থের অভাবে সেই সঞ্চিতি গঠন করতে পারছে না। উল্টো ব্যবসা পরিচালনায় ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৯৭৩ কোটি টাকা।
সঞ্চিতি ঘাটতি ধরে হিসাব করলে ব্যাংকের মোট ঘাটতি দাঁড়ায় ৪ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকার বেশি। অভিযোগ রয়েছে, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার পরিবারের সদস্যরা ঋণের নামে ব্যাংকটি থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা লুট করায় এই দুরবস্থায় পড়েছে ইউসিবি। এছাড়া ব্যাংকটির কয়েকজন পরিচালককের বিরুদ্ধে ঋণের নামে লুটপাট করার অভিযোগ রয়েছে। তবে এ বিষয় ব্যাংক র্কর্তৃপক্ষ মুখ খুলছে না।
ফলে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) ২০২৪ সালে প্রকৃতপক্ষে ৩ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকার বেশি বা শেয়ারপ্রতি ২৫.০৮ টাকা লোকসান হয়েছে। তবে এ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই বছরের ব্যবসায় প্রায় ৮ কোটি টাকা বা শেয়ারপ্রতি ০.০৫ টাকা মুনাফা দেখিয়েছে। ব্যাংকটির ২০২৪ সালের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ব্যাংকটির ২০২৪ সালে শেয়ারপ্রতি ০.০৫ টাকা করে নিট মুনাফা দেখানো হয়েছে ৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আর ব্যাংকটির নিট সম্পদ ৪ হাজার ৯৬ কোটি ৯ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি নিট ২৬.৪২ টাকা সম্পদ দেখানো হয়েছে।
তবে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এ ব্যাংকটির বিনিয়োগ, লিজিং কোম্পানিতে এফডিআর ও অন্যসব সম্পদের বিপরীতে ২০২৪ সালে ৩ হাজার ৮৯৬ কোটি ২৬ লাখ টাকার প্রভিশন বা সঞ্চিতি ঘাটতি রয়েছে। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের মাধ্যমে পরবর্তীতে গঠন করার সুযোগ পেয়েছে ব্যাংকটি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সুযোগ আন্তর্জাতিক হিসাব মানের সঙ্গে সামঞ্জসূপূর্ণ না।
কারন ব্যাংকটিকে এখন সঞ্চিতি গঠন থেকে বিরত থাকার সুযোগ দিলেও ভবিষ্যতে ঠিকই করতে হবে। সেটার প্রভাব এখন না দেখিয়ে ভবিষ্যতে দেখানো হবে। এটা একধরনের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা। এ ব্যাংকটির ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রদত্ত ঋণ বা বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৭ হাজার ২৮২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এরমধ্যে ৮ হাজার ৫৩৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা খেলাপি হয়ে গেছে। ওই খেলাপির বিপরীতে ৬ হাজার ৫৫ কোটি ১২ লাখ টাকা সঞ্চিতি গঠন করা দরকার হলেও ইউসিবি কর্তৃপক্ষ করেছে ২ হাজার ৭০৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
এক্ষেত্রে সঞ্চিতি ঘাটতি ৩ হাজার ৩৪৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এদিকে ব্যাংকটি থেকে কিছু লিজিং কোম্পানিতে ১৫৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা এফডিআর করা হয়েছে। যেগুলোর মেয়াদ অনেক আগেই পূর্ণ হয়েছে। তবে সেই টাকা আদায় করা যাচ্ছে না লিজিং কোম্পানির দ্বৈণদশার কারনে। যা আদায় নিয়ে শঙ্কা জানিয়েছেন নিরীক্ষক। এজন্য কোম্পানিটির ১৫৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা সঞ্চিতি গঠন দরকার হলেও ইউসিবি কর্তৃপক্ষ তা করেনি।
এর বাহিরে ব্যাংকটির অন্যান্য সম্পদের উপর ৩৯১ কোটি ২৭ লাখ টাকার সঞ্চিতি গঠন করা দরকার বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তা করেনি। ব্যাংকটিতে হিসাব মান অনুযায়ি ২০২৪ সালেই ঘাটতির ৩ হাজার ৮৯৬ কোটি ২৬ লাখ সঞ্চিতি গঠন করা দরকার ছিল। যা করা হলে ব্যাংকটির ওই বছরে ৩ হাজার ৮৮৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি (২৫.০৮) টাকা লোকসান হতো বলে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এদিকে ওই প্রয়োজনীয় সঞ্চিতি ২০২৪ সালে গঠন করা হলে ব্যাংকটির নিট সম্পদ ৪ হাজার ৯৬ কোটি ৯ লাখ টাকা থেকে ১৯৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকায় বা শেয়ারপ্রতি সম্পদ ২৬.৪২ টাকা থেকে কমে ১.২৯ টাকায় নেমে আসতো।
ব্যাংকটির নিরীক্ষক জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইউসিবি মোট ৫৭ হাজার ২৮২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ঋণ ও অগ্রিম বাবদ বিতরণ করেছে।
এর মধ্যে ৮ হাজার ৫৩৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা শ্রেণিকৃত (মন্দ ঋণ) হিসেবে পরিণত হয়েছে। নিয়ম অনুসারে এই ঋণ ও অগ্রিমের বিপরীতে ব্যাংকটিকে ৬ হাজার ৫৫ কোটি ১২ লাখ টাকা সঞ্চিতি গঠন করতে হতো। কিন্তু আলোচিত সময়ে ব্যাংকটি এর বিপরীতে মাত্র ২ হাজার ৭০৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা সঞ্চিতি গঠনে সক্ষম হয়েছে। অর্থাৎ খেলাপি ঋণ ও অগ্রিমের বিপরীতে প্রয়োজনীয় ৩ হাজার ৩৪৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা সঞ্চিতি গঠনে ব্যর্থ হয়েছে ব্যাংকটি।
এদিকে ব্যাংকটি কয়েকটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (এনবিএফআই) ১৫৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে রেখেছিল, যার মেয়াদ কয়েক বছর আগেই শেষ হলেও উত্তোলন সম্ভব হয়নি। এই অর্থ কখনো উত্তোলন করা সম্ভব হবে কী-না তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। নিয়ম অনুসারে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ আমানতের বিপরীতে সঞ্চিতি গঠন করতে হয়। কিন্তু ইউসিবি কর্তৃপক্ষ গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ১৫৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকার বিপরীতে কোনো ধরনের সঞ্চিতি গঠন করেনি।
এর বাইরেও ব্যাংকটি ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৯১ কোটি ২৭ লাখ টাকা সঞ্চিতি গঠনে ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্যে ইউসিবির একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানির ৩৮৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা লোকসান রয়েছে, যে সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে ব্যাংকটির মালিকানা ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ। নিয়ম অনুসারে ওই লোকসানের বিপরীতে সঞ্চিতি গঠন বাধ্যতামূলক থাকলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তা গঠন করেনি।
নিরীক্ষক জানিয়েছে, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটি খারাপ ঋণ ও অগ্রিমের বিপরীতে, এনবিএফআইগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ ফিক্সড ডিপোজিটের বিপরীতে এবং অন্যান্য সম্পদের বিপরীতে মোট ৩ হাজার ৮৯৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা সঞ্চিতি গঠনে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি বছরের ২১ মে ইস্যু করা একটি চিঠিতেও ইউসিবিকে ৩ হাজার ৮৯৬ কোটি ২৬ লাখ টাকার সঞ্চিতি গঠনে ব্যর্থ কোম্পানি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
২০২৪ হিসাব বছরে যদি ব্যাংকটি এই বড় অঙ্কের সঞ্চিতি গঠন করত, তাহলে ব্যাংকের নিট লোকসান গিয়ে দাঁড়াত ৩ হাজার ৮৮৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। এতে ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি লোকসান হতো ২৫ টাকা ৮ পয়সা। কিন্তু আলোচিত হিসাব বছরে ব্যাংকটি এই সঞ্চিতি গঠন না করে আর্থিক প্রতিবেদনে শেয়ারপ্রতি ৫ পয়সা হারে ৮ কোটি ৬ লাখ টাকা নিট মুনাফা দেখিয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংকটি সঞ্চিতি গঠন না করে লোকসানকে মুনাফায় রূপান্তর করে দেখিয়েছে।
এদিকে ব্যাসেল-৩ মানদণ্ড অনুসারে ব্যবসা পরিচালনার জন্য ইউসিবির প্রয়োজন ৬ হাজার ৩৫৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকার মূলধন। অথচ গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের এই মূলধন ছিল মাত্র ৫ হাজার ৩৮৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। অর্থাৎ ব্যবসা পরিচালনায় ইউসিবির মূলধন ঘাটতি রয়েছে ৯৭২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এর সঙ্গে ব্যাংকের সঞ্চিতি ঘাটতি যোগ করলে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের মোট ঘাটতি দাঁড়ায় ৪ হাজার ৮৬৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
নিরীক্ষকের মতে, ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী ইউসিবির মূলধন পর্যাপ্ততা অনুপাত (সিআরএআর) থাকা উচিত ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ। কিন্তু বাস্তবে তা রয়েছে ১০ দশমিক ৫৯ শতাংশ। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, সঞ্চিতি ঘাটতি বিবেচনায় নিলে ব্যাংকটির সিআরএআর নেমে আসে মাত্র ৫ দশমিক ৪০ শতাংশে, যা রেগুলেটরি মানদণ্ডের তুলনায় অনেক কম।

