শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: স্মরণকালের সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে দেশের পুঁজিবাজার। ব্যাপক সম্ভাবনাময় খাতটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। সবার চোখের সামনে প্রতিদিনই হাওয়ায় মিশে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার বাজার মূলধন। আতঙ্কে দিন কাটছে বিনিয়োগকারীদের। সূচকের টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। তাদের পিঠ রীতিমতো দেওয়ালে ঠেকে গেছে। ফলে লাখো বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে বাজারবিমুখ হয়ে পড়ছেন। ফলে বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ বাড়ছে। যদিও পুঁজিবাজার সংক্রান্ত বিষয়ে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ইতিপূর্বে বারবার তৎপরতা দেখিয়েছেন; কিন্তু তাতে করেও বিশেষ কোনো ফল লাভ হয়নি।

এদিকে দিন যত যাচ্ছে ততই খাদের মধ্যে পতিত হচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। ফলে গত এপ্রিল মাস থেকে শুরু হওয়া টানা পতনের ধাক্কা এখনো বয়ে বেড়াতে হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। আর সম্প্রতি সময়ের সূচক পতনের অবস্থা একটানা ১৫ কার্যদিবস ধরে দরপতন চলছে। যার ফলে পুঁজি হারিয়ে বিনিয়োগকারীরা এখন দিশেহারা। বিনিয়োগ করা পুঁজি রক্ষার কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না তারা।

পতনের এ ধারা কোথায় গিয়ে থামবে, তারও কোনো দিশা নেই। ফলে দিন যত যাচ্ছে পুঁজিবাজারে আস্থার সংকট তত প্রকট হচ্ছে। বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের হাহাকার। একই সঙ্গে চলতি সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসেই পুঁজিবাজারে দরপতন হয়েছে। টানা দরপতনের মধ্যে পড়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক প্রায় সাড়ে পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমেছে। অন্যভাবে বলা যায়, করোনা মহামারির আমলের চেয়েও সূচক নিচে নেমে গেছে দেশের পুঁজিবাজারের।

এম সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী কাজী হোসাইন আলী বলেন, এটা পুঁজিবাজার নয় এটা মরন বাজার। ২০১০ সালে বিনিয়োগ করে এখনও লোকসান কাটিয়ে উঠতে না পারলেও বর্তমানে আরো বড় লোকসানের মুখে পড়ছি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নতুন বিনিয়োগে আসতে হবে। আইসিবিকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে বাজারকে মন্দাবস্থা থেকে উত্তরণ করতে হবে। এছাড়া বর্তমান বাজার দরপতন ঠেকানো সম্ভব নয়। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ২০১০ সালের চেয়ে ভয়াবহ অবস্থা পুঁজিবাজারের।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি মে মাসে পুঁজিবাজারে ২০ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ কার্যদিবস সূচকের দরপতন হয়েছে। মুলত ১৩ কার্যদিবসে ডিএসই ৫৩১ পয়েন্ট সূচকের উধাও হয়েছে। এদিকে সপ্তাহের পঞ্চম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর ও টাকার পরিমানে লেনদেন। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৬২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪ হাজার ৬১৫ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৬১৫ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৭০৮ পয়েন্টে।

দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৮ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৬৩ টির, দর কমেছে ২৯৫ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪০ টির। ডিএসইতে ২৬৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৭২ কোটি ৭৪ লাখ টাকার।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৩৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ২৫ পয়েন্টে। সিএসইতে ১৯৪ টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে ৩৮ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৩৮ টির এবং ১৮ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১৮ কোটি ৫২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।