শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দেশের ব্যাংক খাত বর্তমানে নানা আর্থিক অনিয়মে জড়িত। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার বিপরীতে মূলধন ঘাটতির মুখে পড়েছে বেশ কয়েকটি ব্যাংক। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত তিনটি ব্যাংক ৫ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। সুশাসনের অভাবে অনিয়ম বেড়ে যাওয়ায় আর্থিক খাতে আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে ১৪টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। এসময় ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি ছিল ৩৭ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা। মূলধন ঘাটতির ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ ঘটনা। পুঁজিবাজারের ন্যাশনাল ব্যাংক, আইসিবি ইসালমিক ব্যাংক এবং রাষ্ট্রায়ত্ত রুপালী ব্যাংকও মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। এই তিন ব্যাংকের ঘাটতির পরিমাণ ৫ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা।

সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত রুপালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১২১ কোটি টাকা। আর বেসরকারি খাতের আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা এবং ন্যাশনাল ব্যাংকের ঘাটতি ২ হাজার ২৪ কোটি টাকা।

বাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা এখন অনেক সতর্ক। কোন কোন ব্যাংকগুলো খারাপ অবস্থায় রয়েছে তারা সে বিষয়ে খেয়াল রাখে। কিছু ব্যাংক রয়েছে যারা অবিশ্বাসের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এরা দীর্ঘদিন ধরে মূলধন ঘাটতি সহ অন্যান্য সমস্যায় ভুগছে। অপরদিকে কিছু ব্যাংক বছর শেষে ভালো পরিমাণে লভ্যাংশ দিচ্ছে। এসব ব্যাংকের শেয়ারে অনেকে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করছে।

সংকটে থাকা বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক প্রায় বিদেশি বিনিয়োগ শূণ্য। নানা অনিয়মে জড়িত ব্যাংকটির মাত্র দশমিক ৮৯ শতাংশ শেয়ার বিদেশিদের হাতে রয়েছে। এছাড়া সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা। ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৩২ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।

অনিয়ম আর ঋণ কেলেঙ্কারিতে সংকটে পড়া আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের সার্বিক অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। নানা অব্যবস্থাপনায় বিতরণ করা ঋণ পরিশোধ হচ্ছে না। খেলাপিতে হাবুডুবু খাচ্ছে ব্যাংকটি। সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণ ৮৭ শতাংশই খেলাপি হয়ে পড়েছে। টাকার অংকে খেলাপির পরিমাণ ৫৮৮ কোটি টাকা। এছাড়াও ব্যাংকটি একেবারে বিদেশি বিনিয়োগ শূণ্য।

অপরদিকে সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত রুপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা। এ ব্যাংকটির মোট বিতরণ করা ঋণের ২০ শতাংশের বেশি খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এ ব্যাংকটিতেও কোন বিদেশি বিনিয়োগ নেই।

বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির সমস্যা খুব দ্রুত সমাধান করা উচিত। ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ এই সমস্যা সমাধান করতে না পারলে ব্যাংকগুলোকে মার্জ করে দেওয়া দরকার। এটিও সম্ভব না হলে এসব ব্যাংক বন্ধ করে দেওয়ার পথে যাওয়া দরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকিং খাতে ক্যাপিটাল অ্যাডিকুয়েসি রেশিও বা ক্যাপিটাল টু রিস্ক (ওয়েটেড) অ্যাসেট রেশিও (সিআরএআর) জুনের ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ থেকে কমে ১১ দশমিক ০৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এই অনুপাত ছিল ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

একটি ব্যাংক কতটা ভালোভাবে সকল নিয়মনীতি ও শর্তপূরণ করছে তা নির্ধারণের একটি সূচক হল সিআরএআর। এটি রিস্ক-ওয়েটেড অ্যাসেটের সঙ্গে মূলধনের তুলনা করে পর্যবেক্ষকদের ব্যাংকের ব্যর্থতার ঝুঁকি নির্ধারণে সহায়তা করে। এটি আমানতকারীদের অর্থ সুরক্ষিত রাখতে এবং বিশ্বব্যাপী আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা ও দক্ষতা প্রচারে ব্যবহৃত হয়।