শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে ৩৬ কার্যদিবস পর লেনদেন হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে যাওয়ায় আস্থাহীনতায় ভুগছেন বিনিয়োগকারীর। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বিনিয়োগকারীরা দু:শ্চিন্তায় পড়ছেন। ফলে পুঁজিবাজারে আস্থার সঙ্কট চলছে। এই আস্থাহীনতার কারণেই বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিনিয়োকারীরা। এ ছাড়া সূচক বাড়া-কমার পালায় চলছে পুঁজিবাজার।

যেদিন সূচক কমছে, সেদিন লেনদেনও কমছে। সূচক আবার বাড়লেও লেনদেন বাড়ছে না সমান হারে। এভাবে অনিশ্চয়তায় চলছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন। এ ছাড়া বাজারে এখন অসাধু ও শেয়ার কারসাজিকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে আগের তুলনায় বেশি- এমনটিই বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে করে আগ্রহ হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

এছাড়া পুঁজিবাজারে শেয়ার কারসাজিকারীদের দৌরাত্ম্য বহুদিনের। এই দুষ্ট চক্রের কবলে ১৯৯৬ এবং ২০১০ সালে বড় ধরনের দুটি ধস দেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। এই দুটি ঘটনায় সহায়-সম্বল হারিয়েছেন অনেক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় করা তদন্ত কমিটির রিপোর্ট কখনও প্রকাশ করেনি সরকার। সেই চক্র আবারও বাজার অস্থিতিশীল করতে পূর্ণোদ্যমে কাজ করছে বলে জানান কয়েকজন বিনিয়োগকারী।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজার অস্থিতিশীল করতে কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীও ভূমিকা রাখছে। তারা কিছু কোম্পানিকে বাজারে প্রভাবিত করে। এদের কারণেই সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সবাই জানে। কিন্তু কেউ কিছু বলতে এবং করতে পারে না। কারণ তারা খুবই প্রভাবশালী। কারসাজিতে সহযোগিতা করার অভিযোগে গত বছরে তিনটি ব্রোকারেজ হাউসের এমডিকে চাকরিচ্যুত করার নির্দেশ দেয় বিএসইসি। কিন্তু প্রভাবশালী পক্ষটি সে আদেশ তুলে নিতে বাধ্য করে। এভাবেই বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।’

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘আমাদের বাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী প্রায় সবাই খুব তাড়াতাড়ি লাভ চায়। এতে করে তারা গুজবে কান দেয়। প্রথমে কিছু লাভ করলেও শেষে গিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে বলে বাজারের দোষ। কিন্তু তারা যে বিচার-বিবেচনা না করে শেয়ার কিনছে সে বিষয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই। বর্তমানে বাজারে ১০ লাখের বেশি সক্রিয় বিনিয়োগকারী থাকলেও ১০ ভাগের ১ ভাগও পাওয়া যাবে না যারা বুদ্ধি খাটিয়ে শেয়ার কেনে। এরা কারসাজি চক্র কী শেয়ার কিনছে, তা দেখে শেয়ার কেনে। প্রতিষ্ঠানগুলোও তাই।

এখন বড়রা নিষ্কিয় থাকায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা কোন শেয়ার কিনবে, কোনটা বিক্রি করবে, তা ভেবে পাচ্ছে না। এ কারণে কয়েক মাস ধরে অস্বাভাবিক আচরণ করছে পুঁজিবাজার। হঠাৎ বড় উত্থান হচ্ছে, পরদিনই বড় পতন হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পতনই হচ্ছে বেশি।’

এদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটিজের দর বেড়েছে। বেশিরভাগ সিকিউরিটিজের দর বাড়লেও এদিন সূচকের পতন হয়েছে। একই সাথে টাকার পরিমাণে লেনদেন কমেছে। ডিএসইতে ৩৬ কার্যদিবস পর লেনদেন হাজার কোটি টাকার নিচে নেমেছে। ডিএসইতে পতন হলেও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক বেড়েছে।

জানা গেছে, আজ প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮.৭১ পয়েন্ট বা ০.১২ শতাংশ কমে ছয় হাজার ৯১৭.৯০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আজ ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৩.৫৪ পয়েন্ট বা ০.২৩ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৯.২৪ পয়েন্ট বা ০.৩৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৪৯৫.২২ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ৫৩৬.৩৬ পয়েন্টে।

ডিএসইতে আজ ৯০৮ কোটি ৮২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ২৩২ কোটি ১১ লাখ টাকা কম। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ১৪০ কোটি ৯৩ লাখ টাকার। ডিএসইতে আজকের লেনদেন এক মাস ১৯ দিন বা ৩৬ কার্যদিবসের মধ্যে সবচেয়ে কম।

ডিএসইতে আজ ৩৭৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭৩টির বা ৪৬.০১ শতাংশ শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে। দর কমেছে ১৫৪টির বা ৪০.৯৬ শতাংশের এবং ৪৯টির বা ১৩.০৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৭.১৩ পয়েন্ট বা ০.০৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ২৩৭.৬০ পয়েন্টে। আজ সিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ৩০৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ১১৩টির, কমেছে ১৩৯টির আর দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২টির। সিএসইতে আজ ২৪ কোটি ৪২ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। সুত্র: দেশ প্রতিক্ষণ