শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড,বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড ও সরকারি প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ফ্রি-ফ্লোট শেয়ার আরও বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রন সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন।

বিএসইসির এই নির্দেশনার ফলে কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা/পরিচালকদেরকে বেচতে হবে ৮ কোটি ৪৫ লাখ ৫৯ হাজার ৪২২টি শেয়ার। যাতে করে স্বাভাবিকভাবেই বাজারে বিক্রির চাপ বাড়বে এবং ১ বছরের মধ্যে শেয়ার সাপ্লাই বেড়ে যাবে। যাতে করে অফলোডের ঘোষণার পরের দিনই শেয়ারগুলোর দর পতন হয়েছে। রোববার তিনটি কোম্পানির কাছে এই সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। কমিশন সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

ডিএসইসি সূত্র মতে, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের দশমিক ৯৭ শতাংশ শেয়ার, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের ৫ শতাংশ এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ শেয়ার বাজারে রয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন নির্দেশের ফলে কোম্পানি তিনটির উদ্যোক্তা/পরিচালকদের ৮ কোটি ৪৫ লাখ ৫৯ হাজার ৪২২টি শেয়ার বিক্রি করতে হবে। বর্তমান বাজার মূল্যে যার দর দাঁড়াবে ৫ হাজার ১৭৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা।আগামী ১ বছরের মধ্যে কোম্পানিগুলোকে এ শেয়ার ছাড়তে হবে।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, এই তিন কোম্পানির শেয়ার বিনিয়োগকারীদের কাছে ১০ শতাংশের কম। যার কারণে এই কোম্পানিগুলোর শেয়ার মোট দশ শতাংশ আপলোড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোকে মার্কেট প্রাইসেই শেয়ার ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষোদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিএসইসির এমন সিদ্ধান্তকে আমরা বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে সাধুবাদ জানাই। এ সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি ভালো সিদ্ধান্ত। আগামীতে কোন কোম্পানি যেন ১০ শতাংশের কমে শেয়ার বাজারে না ছেড়ে আইপিওতে আসতে না পারে, সে জন্য একটি আইনও প্রয়োজন। আমরা আশা করবো এ সিদ্ধান্তের পাশাপাশি কমিশন এ বিষয়ে একটি আইনও করবে।

আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, কম শেয়ার ছেড়ে বাজারে কোন কোম্পানি আসলে সে শেয়ার নিয়ে কারসাজি বেশি হয়। এ সিদ্ধান্তের ফলে শেয়ারগুলো নিয়ে কারসাজি করাও এখন আর সম্ভব হবে না।

ওয়ালটন: ওয়ালটন হাইটেক কোম্পানিটির বর্তমানে স্পন্সর ডিরেক্টরদের কাছে শেয়ার রয়েছে ৯৯.০৩ শতাংশ। আর বিদেশি বিনিয়োগকারী, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে ০.৯৭ শতাংশ। এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ০.৪৮ শতাংশ। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ০.৩৯ শতাংশ এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ০.১০ শতাংশ। কোম্পানিটির ১০ শতাংশ পূরণ করতে হলে আরও ৯.০৩ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে।

সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৪৩৭ টাকা ৭০ পয়সায়। শেয়ার দর অনুযায়ী কোম্পানিটির পিই রেশিও অবস্থান করছে ৩১.৫৮ পয়েন্টে। কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৩০২ কোটি ৯২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সর্বশেষ বিনিয়োগকারীদের জন্য কোম্পানিটি ২৫০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় দেখিয়েছে ৫৪ টাকা ২১ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে আয় ছিলো ২৪ টাকা ২১ পয়সা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য দাঁড়িয়েছে ৩১১ টাকা ৫৯ পয়সা।

বার্জার পেইন্টস: কোম্পানিটির বর্তমানে স্পন্সর ডিরেক্টরদের কাছে শেয়ার রয়েছে ৯৫ শতাংশ। আর বিদেশি বিনিয়োগকারী, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে ৫ শতাংশ। এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ১.১৫ শতাংশ। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৩.৭১ শতাংশ এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ০.১৪ শতাংশ। ১০ শতাংশ শেয়ার পূরণ করতে হলে কোম্পানিটিকে আরও ৫ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে।

সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৯২১ টাকায়। শেয়ার দর অনুযায়ী কোম্পানিটির পিই রেশিও অবস্থান করছে ২৯.৮৫ পয়েন্টে।কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৪৬ কোটি ৩৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সর্বশেষ বিনিয়োগকারীদের জন্য কোম্পানিটি ২৯৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। সর্বশেষ কোম্পানিটির প্রথম প্রান্তিকে (এপ্রিল- জুন’২১) তিন মাসে শেয়ার প্রতি আয় দেখিয়েছে ১৬ টাকা ৯ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে আয় ছিলো ২ টাকা ৩২ পয়সা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য দাঁড়িয়েছে ২৪৮ টাকা ৮৭ পয়সা।

আইসিবি: কোম্পানিটির বর্তমানে স্পন্সর ডিরেক্টরদের কাছে শেয়ার রয়েছে ৬৯.৮১ শতাংশ এবং সরকারের কাছে রয়েছে ২৭ শতাংশ। এখানেই কোম্পানিটির শেয়ার রয়েছে ৯৬.৮১ শতাংশ। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে রয়েছে ৩.১৯ শতাংশ। এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ১.৩৫ শতাংশ। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ১.৮৪ শতাংশ।১০ শতাংশ শেয়ার পূরণ করতে হলে কোম্পানিটিকে আরও ৬.৮১শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে।

সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৪২ টাকায়। শেয়ার দর অনুযায়ী কোম্পানিটির পিই রেশিও অবস্থান করছে ৮৫.২০ পয়েন্টে।
কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৮০৫ কোটি ৮১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। সর্বশেষ বিনিয়োগকারীদের জন্য কোম্পানিটি ৫ শতাংশ ক্যাশ এবং ৫ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছে।

সর্বশেষ কোম্পানিটির তৃতীয় প্রান্তিক (জুলাই’২০-মার্চ’২১) নয় মাসে শেয়ার প্রতি আয় দেখিয়েছে ১ টাকা ২৫ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে লোকসান ছিলো ৫৯ পয়সা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য দাঁড়িয়েছে ৫৪ টাকা ৮৬ পয়সা।