শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: জালিয়াতির আতুর ঘর খ্যাত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। অভিযোগ উঠেছে এ নিষেধাজ্ঞার পরেও গোপনে অবৈধভাবে ওষুধ বাজারজাত করছে ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস।

ফলে নানা অভিযোগের ভিত্তিকে ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাত বন্ধ করে দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। এছাড়া ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের লাইসেন্সভুক্ত সকল পদের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ স্থগিত এবং ৮টি পদের রেজিষ্ট্রেশন সাময়িক বাতিল করেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

গত ৭ মার্চ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এবং লাইসেন্স অথরিটি (ড্রাগস) এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো: মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি বরিশাল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ঔষধ তত্ত্ববধায়কের কাছে প্রেরণ করে। পরবর্তীতে গত ১৬ মার্চ বরিশাল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কোম্পানিটির ফ্যাক্টরী তালাবদ্ধ করে দেয়। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি ঔষধ প্রশাসন অধিপ্তর ইন্দো বাংলার কারখানা পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড দীর্ঘদিন থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএফএম আনোয়ারুল হক সাব্বিরসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি সময়ে খোঁদ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের আপন বড়ভাই সানোয়ারুল হক সগীর ওষুধ প্রশাসনের কাছে দায়ের করা অভিযোগে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন থেকে ভুয়া এবং ক্ষতিকারক ওষুধ বাজারজাতের বিষয়টি উল্লেখ করেন। এমন অভিযোগ পেয়ে বরিশাল নগরীর কলেজ রোড এলাকায় ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালসের কোম্পানি পরিদর্শন করে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের তদন্ত টিম। সেখানে তারা অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পান। দেখতে পান চাকচিক্যের অন্তরালে নিষিদ্ধ ও বাতিল ওষুধ বাজারজাতের দৃশ্য।

সূত্রমতে, নিষিদ্ধ ও বাতিল করা ওষুধের বিক্রি ও মজুদ দেখিয়ে বছরের পর বছর ভুয়া বার্ষিক প্রবিদেন তৈরি করে তা বিনিয়োগকারী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা তথা পুঁজিবাজারের কাছে প্রকাশ করে ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। নেট বিক্রি বাড়ানোর মাধ্যমে ইপিএস বৃদ্ধি দেখিয়ে বরাবরই পুঁজি বাজারের সাথে প্রতারণা করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।

সূত্রে আরও জানা গেছে, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর এবং লাইসেন্সিং অথরিটি (ড্রাগস) ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালসের ১৩ টি ওষুধ উৎপাদন ও মওজুদ, বিক্রয়ের জন্য বিতরণ ও প্রদর্শন নিষিদ্ধ করে। ওষুধগুলো হলো-ইন্দোফেনাক ১০০ এসআর ক্যাপসুল, কোট্রিমক্স ডিএস ট্যাবলেট, টেনসারিল ট্যাবলেট, ইন্দোস্টিন-আর ১৫০ ট্যাবলেট, কোটিমক্স সাসপেনসন, মেট্রল সাসপেনসন, মেট্রল ট্যাবলেট, ইন্দোপ্লেক্স-বি ট্যাবলেট, প্যারাসিটামল ট্যাবলেট, রিবোফ্লাভিন ট্যাবলেট, ইন্দোফ্লক্স ক্যাপসুল, ইন্দোমক্সিন ক্যাপসুল এবং ইনডক্স ক্যাপসুল।

অভিযোগে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সানোয়ারুল হক সগীর। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যাল দীর্ঘদিন থেকে অধীনস্ত অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তার সহযোগিতায় অনুমোদনহীন এবং মান-বহির্ভূত, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর ও উচ্চ আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত পণ্য উৎপাদন করে বাজারজাত করে আসছে।

ইতিপূর্বে র‌্যাব-৮’র সদস্যরা ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালসে অভিযান পরিচালনা করে অভিযোগের সত্যতা পান। সেখান থেকে জব্দ করেন অনুমোদনহীন ও নিষিদ্ধ ওষুধের প্যাকিং মেটারিয়াস। সবশেষ গত বছরের শেষের দিকে ওষুধ প্রশাসনের ঢাকার তদন্ত টিম এসেও অভিযোগের প্রমাণ পান।

এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের গত ৪ মার্চ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাত নিষিদ্ধ করে চিঠি প্রদান করেন। যা গ্রহণও করেছে ইন্দো-বাংলা ফার্মা কর্তৃপক্ষ। চিঠি পেয়েও তাদের উৎপাদিত ভেজাল এবং নকল ওষুধ বাজারজাত অব্যাহত রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের বরিশাল তত্ত্বাবধায়ক কার্যালয়ের একটি টিম সেখানে অভিযান পরিচালনা করে অবৈধভাবে ওষুধ বাজারজাতের বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেন এবং তাদের সতর্ক করে দিয়েছেন। এরপরেও প্রতিষ্ঠানটিতে উৎপাদিত ওষুধ বাজারজাত অব্যাহত রয়েছে বলেও সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন।

ওষুধ বাজারজাত নিষিদ্ধ করার বিষয়টি ওষুধ প্রশাসনের বরিশাল তত্ত্বাবধায়ক কার্যালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।

প্রশাসন অধিদপ্তরের বরিশাল তত্ত্বাবধায়ক কার্যালয়ের একটি টিম সেখানে অভিযান পরিচালনা করে অবৈধভাবে ওষুধ বাজারজাতের বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেন এবং তাদের সতর্ক করে দিয়েছেন। এরপরেও প্রতিষ্ঠানটিতে উৎপাদিত ওষুধ বাজারজাত অব্যাহত রয়েছে বলেও সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন।