শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমার সঙ্গে প্রভিশন ঘাটতিও কমে এসেছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে ১২ ব্যাংক। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ও বেসরকারি ব্যাংক রয়েছে আটটি। এসব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ মোট ৯ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা।

তবে এ সময়ে কিছু ব্যাংকের প্রভিশন উদ্বৃত্ত থাকায় সার্বিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬৪৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আগের প্রান্তিকে জুন পর্যন্তও ১১টি ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতিতে ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রভিশন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংগুলোর মধ্যে সবার উপরে রয়েছে বেসিক ব্যাংক। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি তিন হাজার ২৩৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড। এই সমেয় ব্যাংকটির ঘাটতি ছিল এক হাজার ৬২০ কোটি টাকা। এছাড়াও তালিকায় রয়েছে অগ্রণী, রূপালী, সোনালী, এবি, ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, সোস্যাল ইসলামী, ট্রাস্ট এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড।

ঋণ শ্রেণিকরণ ও প্রভিশনিং নিয়ে তিন মাস পর পর একটি প্রতিবেদন তৈরি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেপ্টেম্বর-২০২০ ভিত্তিক প্রতিবেদন গতকাল চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, চলতি ২০২০ সালের জুন মাস শেষে দেশের ৫৯টি ব্যাংক মোট ১০ লাখ ৬৩ হাজার ৬২৬ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৪ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের আট দশমিক ৮৮ শতাংশ। তিন মাস আগে জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা, যা ওই সময় পর্যন্ত মোট বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ ছিল। ফলে গত তিন মাসে খেলাপি ঋণ কমেছে প্রায় এক হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা। তার আগের প্রান্তিক গত মার্চ মাস শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা এক লাখ ৯০ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকার মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪২ হাজার ৮৩৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বা ২০ দশমিক ৮১ শতাংশ, জুন শেষে যা ছিল ৪২ হাজার ৯৩৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বা ২২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এ সময়ে বেসরকারি ৪১টি ব্যাংকের মোট বিতরণ করা আট লাখ ৯ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকার মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৪৫ হাজার ৩৬ কোটি টাকা বা পাঁচ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

আগের প্রান্তিক জুন শেষে এ ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা বা পাঁচ দশমিক ৮৬ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বর শেষে বিদেশি ৯ ব্যাংকের ৩৪ হাজার ৯৩১ কোটি টাকার বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপির পরিমাণ দুই হাজার ৪৮ কোটি টাকা বা পাঁচ দশমিক ৮৬ শতাংশ। গত জুন শেষে এ ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৬৩ কোটি টাকা বা পাঁচ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

অর্থাৎ বিদেশি ব্যাংকগুলোর পরিমাণের দিক থেকে খেলাপি ঋণ কমলেও শতকরা হিসাবে বেড়েছে। এছাড়া গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিশেষায়িত খাতের তিন ব্যাংকের বিতরণ করা ২৮ হাজার ৩৯১ কোটি টাকার ঋণের মধ্যে খেলাপি হয়েছে চার হাজার ৫২০ কোটি টাকা বা ১৫ দশমিক ৯২ শতাংশ। তিন মাস আগে জুন পর্যন্ত এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল চার হাজার ৫২১ কোটি টাকা বা ১৫ দশমিক ৯২ শতাংশ।

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের লাগাম টানতে ২০১৯ সালের ১৬ মে ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট-সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা জারি করা হয়। এ সার্কুলারের আওতায় গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছে। ১৩ হাজার ৩০৭ জন গ্রাহক এ সুবিধা নিয়েছেন। এছাড়া বিদ্যমান নীতিমালার আওতায় এ সময় বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছে।

অন্যদিকে, চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশে শুরু হয় মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ। এ সংকটকালে ঋণের কিস্তি শোধে বিশেষ ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই ছাড় মোতাবেক ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের কিস্তি না দিলেও কোনো ঋণ নতুন করে খেলাপি করা যাবে না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এত খেলাপির মধ্যে তিন মাসে মাত্র দুই হাজার কোটি কমাটা খুব বেশি গুরুত্ব বহন করে না। খেলাপিদের অনেকেই ঋণ পুনঃতফসিলের মাধ্যমে নতুন করে প্রণোদনার ঋণ নিতে চাচ্ছে। ফলে ডাউন পেমেন্ট হিসেবে কিছু টাকা আদায় হয়েছে। তাছাড়া চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের ঋণ আদায়ে শিথিলতা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সময় শেষে মোট খেলাপি বৃদ্ধির জোর আশঙ্কা রয়েছে।