শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এসিআই লিমিটেডের বিক্রি বাড়লেও মুনাফায় দেখা দিয়েছে উল্টো চিত্র। ব্যবসা বহুমুখীকরণের ফলে বিক্রিতে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি হলেও কয়েকটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের অব্যাহত লোকসান কোম্পানিটির মুনাফা খেয়ে ফেলছে। ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে এমনই চিত্র ফুটে উঠেছে। আগের হিসাব বছর শেষে কোম্পানির নিট মুনাফার হার ছিল ২.২৩ শতাংশ, যা চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে ০.৪২ শতাংশে নেমেছে।

প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, এসিআইয়ের পণ্য বিক্রি বাড়লেও সাবসিডিয়ারি চারটি খাতের লোকসানের কারণে মুনাফা কমেছে। এর মধ্যে রিটেইল চেইন শপ সবচেয়ে বেশি লোকসান দিয়েছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রিটেইল চেইন শপ স্বপ্ন’ এসময়ে ৩৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকার করপূর্ববর্তী লোকসান দেয়। স্বপ্ন’ ছাড়াও অ্যানিমেল হেলথ, কনজিউমার ব্র্যান্ড ও খাদ্যপণ্য খাত মোট ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা লোকসান করেছে।

আগের হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় এই সময়ে এসিআই লিমিটেডের বিক্রি বেড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ; মূল কোম্পানির নিট মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৬ শতাংশ বেড়ে ২৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা হয়েছে। কিন্তু সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসানের কারণে এসিআইয়ের মোট নিয়ন্ত্রণমূলক আয় ৪৬ শতাংশ কমে ৬ কোটি ৮ লাখ টাকায় নেমেছে। আগের হিসাব বছরেও কোম্পানিটির বিক্রিতে প্রায় ৫২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল, কিন্তু নিট মুনাফা কমেছে ৬২ শতাংশ।

এসিআই লিমিটেডের চলতি প্রথম প্রান্তিকের সমন্বিত নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ সময় কোম্পানির বিক্রি থেকে আয় হয়েছে একহাজার ৪৬৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল একহাজার ২৬৪ কোটি টাকা। এ হিসাবে একবছরের ব্যবধানে কোম্পানির বিক্রি বাড়ে ১৫.৭ শতাংশ।

জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এসিআইয়ের সমন্বিত পরিচালন মুনাফা হয়েছে ১০০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৫ শতাংশ বেশি। কিন্তু সুদ ব্যয় ও কর পরিশোধের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় মূল কোম্পানির নিয়ন্ত্রণমূলক আয় দাঁড়ায় ৬ কোটি ৮ লাখ ৮৮ হাজার টাকায়, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এসিআইয়ের মুনাফা কমে যাওয়ার মূল কারণ সুদ ব্যয় বৃদ্ধি। স্বপ্নের জন্য নেওয়া বড় অংকের ব্যাংকঋণের কারণে সুদব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ২০১৭ সালের জুন পযর্ন্ত স্বপ্নর ব্যাংকঋণের পরিমাণ প্রায় ৯০০ কোটি টাকা।

২০১৭-১৮ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে সুদবাবদ এসিআই ব্যয় করেছে ৪৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এই প্রান্তিকে তা বেড়ে ৭০ কোটি ৭৮ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে শুধু স্বপ্নর ব্যাংক ঋণের বিপরীতে ২৯ কোটি টাকা সুদ হিসাবে ব্যয় করতে হয়েছে।

এ বিষয় জানতে চাইলে এসিআইয়ের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা প্রদীপ কর বলেন, এ বছর আমাদের সুদ ও করের পরিমাণ বেড়ে গেছে, যা কোম্পানির নিট মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কয়েককটি সাবসিডিয়ারির কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। চেষ্টা করছি, এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে। এসিআইর সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলো ১০টি খাতে বিভক্ত। এর মধ্যে সবচেয়ে লাভজনক খাত ফার্মাসিউটিক্যালস। এখাত থেকে চলতি প্রথম প্রান্তিকে করপূর্ববর্তী মুনাফা এসেছে ৪৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। ফার্মাসিউটিক্যালসসহ মোট ছয়টি খাত মুনাফায় রয়েছে।